ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে কি করতে হবে
ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে কি করতে হবে,তরুণদের জন্য কি কি গাইড ফলো করতে হবে এ
লেখার মাধ্যমে তা আমরা জানবো ।ফ্যাশন ডিজাইনার মানে শুধু নতুন নতুন স্টাইলের জামা
বানানো নয়। বরং ফ্যাশন ডিজাইনার মানে মানুষের পছন্দের, কালচারের এবং সময়ের সাথে
তাল মিলিয়ে নিজস্ব স্টাইলে নতুন নতুন স্টাইলিশ কিছু তৈরি করা।
ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে স্টাইল, ডিজাইন সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে ।মানুষের
পছন্দ-অপছন্দেরও অবশ্যই কিছুটা ধারণা রাখতে হবে।অত্যন্ত জরুরি বিষয় হলো ট্রেন্ড
ফলো করতে হবে।ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে কি করতে হবে, কোথায় থেকে শিখবেন, কিভাবে
কাজ শুরু করবেন আর ভবিষ্যতের নিজের কিভাবে একটা ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারবেন।
তবে আপনাকে অবশ্যই নিজের উপরে বিশ্বাস রাখতে হবে।আপনি যদি বদ্ধ পরিকল্পিত হন,
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তাহলে অবশ্যই আপনি নিজের স্টাইলিশ ডিজাইন দিয়ে দুনিয়াকে
বদলাতে পারবেন।কারন বর্তমান সময়ে খুবই জনপ্রিয় একটি পেশা হয়ে উঠেছে ফ্যাশন
ডিজাইনিং। চলুন ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে কি করতে হবে সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
পেজসূচিপত্র:ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে কি করতে হবে।তরুণদের জন্য গাইড
- ফ্যাশন ডিজাইন বলতে কি বুঝায়
- ফ্যাশন ডিজাইনার কি
- ফ্যাশন ডিজাইনের প্রথম ধাপ এবং এর কাজ
- ফ্যাশন এবং স্টাইল এর মধ্যে পার্থক্য
- ফ্যাশন ডিজাইন পড়ার যোগ্যতা
- ফ্যাশন ডিজাইনার হতে কোন কোন দক্ষতা প্রয়োজন
- ফ্যাশন ডিজাইন পড়ার খরচ
- ফ্যাশন ডিজাইনিং শিক্ষার্থীদের জন্য ঘরে বসে ইন্টার্নশিপ
- ফ্যাশন ডিজাইনারদের জন্য কোন সাবজেক্ট ভালো
- ফ্যাশন ডিজাইন এর সর্বোচ্চ ডিগ্রি
- ফ্যাশন ডিজাইনারের সর্বোচ্চ স্তর
- একজন ফ্যাশন ডিজাইনারের বেতন কত
- ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে কি করতে হবে।তরুণদের জন্য গাইড:শেষ কথা
ফ্যাশন ডিজাইন বলতে কি বুঝায়
ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে কি করতে হবে এটা জানার জন্য ফ্যাশন ডিজাইন বলতে কি
বুঝায় এটা জানা উচিত। ফ্যাশন ডিজাইন বলতে একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যার মাধ্যমে
পোশাক, বিভিন্ন এক্সেসরিজ যেমন ব্যাগ, জুতা, গয়না ইত্যাদি ডিজাইন অথবা নকশা করা।
যা পরিধানের মাধ্যমে মানুষের নিজেদের স্টাইল, ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়।
ফ্যাশন ডিজাইন মানে শুধু জামা বানানো নয় বরং সময়ের সাথে মানুষের পছন্দ অনুযায়ী
সংস্কৃতি, আবেগ, সমাজের রুচি অনুযায়ী নতুন নতুন সুন্দর স্টাইলিস্ট কিছু তৈরি
করা।নিজে কল্পনা ও স্টাইল দিয়ে নতুন কিছু গড়ে তোলায় ফ্যাশন ডিজাইনের
উদ্দেশ্য।ফ্যাশন ডিজাইন বলতে বোঝায় প্রথমে আইডিয়া, কনসেপ্ট তৈরি করে, সে কনসেপ্ট
এর উপর ডিজাইন ,স্কেচ আঁকা। তারপরে কোন কাপড়, কোন রং, কিভাবে কাটিং স্টাইল করলে
এটি সুন্দর দেখাবে তার নির্ধারণ করে একটি পোশাক বানানো।
ফ্যাশন ডিজাইনার কি
ফ্যাশন ডিজাইনার হল একজন শিল্পী যাকে একজন ক্রিয়েটিভ মানুষ বলারযায়।যিনি নতুন
জামা কাপড়, বিভিন্ন এক্সেসরিজ ডিজাইন করে। এমনভাবে ডিজাইন করেন যাতে মানুষ তা
পড়ে কমফোর্ট ফিল করে।যা পরিধান করে সুন্দর দেখায় এবং ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়।
একজন ফ্যাশন ডিজাইনের শুধু জামা বানান না তার কল্পনার মাধ্যমে নতুন রূপ দেয়।যা
পড়ে মানুষ আরও সুন্দর,কমফোর্টেবল আর আত্মবিশ্বাসী অনুভব করে।
ফ্যাশন ডিজাইনার শুধু জামা বানান না তিনি এটি বানানোর সময় ভাবেন এটি কার জন্য
বানাচ্ছেন, কোন সিজনের জন্য বানাচ্ছেন, কোন ইভেন্টে মানুষ এটি পড়বে, পোশাকটি
পড়ে মানুষ কেমন ফিল করবে ।এসব কিছু মাথায় রেখে তিনি একটি পোশাককে বাস্তবে রূপ
দেন।প্যারিসে বসবাসকারী একজন ইংরেজ ব্যক্তি চার্লস ফ্রেডেরিক ওয়ার্থ কে আধুনিক
প্রথম ফ্যাশন ডিজাইনার।যিনি তার তৈরি পোশাকে প্রথম লেবেল সেলাই করেছিলেন।
ফ্যাশন ডিজাইনের প্রথম ধাপ এবং এর কাজ
ফ্যাশন ডিজাইনের প্রথম ধাপ যা দিয়ে যাত্রা শুরু হয় একটি ভাবনা দিয়ে।ফ্যাশন
ডিজাইনের প্রথম ধাপ কল্পনার মাধ্যমে ভাবনায় রং মিশানো কিছু সাজিয়ে বাস্তবের দিকে
ধাবিত করা।এইভাবনা থেকেই একজন ডিজাইনারের যাত্রা শুরু করে। আপনি যত বেশি ভাববেন,
পর্যবেক্ষণ করবেন,তত বেশি ইউনিক আর স্টাইলিশ ডিজাইন বানাতে পারবেন।
অনেকেই question করে which stream we have to choose for fashion designing?আসলে
ফ্যাশন ডিজাইনারা প্রথমে ট্রেড, কালচার, সিজন, নির্দিষ্ট কোন থিমের উপর ভিত্তি
করে কনসেপ্ট তৈরি করে।তারপরে নিজের মত করে সেখানে পোশাকটির কাটিং, নকশা, ফিটিং,
রং, স্টাইল কেমন হবে তা নিয়ে গবেষণা করে ডিজাইন নির্ধারণ করেন।স্কেচ, ডিজাইন
আঁকেন।এরপর নির্বাচন করেন যে কোন কাপড়টির উপর ডিজাইন হবে।কাগজে আঁকা ডিজাইনটি
বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য একটি স্যাম্পল তৈরি করেন। যা রূপ নেই একটি বাস্তব
পোশাক।
একজন ফ্যাশন ডিজাইনকে অবশ্যই ফ্যাশন ট্রেড বুঝতে হয়, বাজার ঘাটাঘাটি করতে
হয়,রিসার্চ করতে হয় ।কখন কি চলছে তা নিয়ে সবসময় আপডেট থাকতে হয়। একজন ফ্যাশন
ডিজাইনের শুধু পোশাক তৈরি করেন না তিনি নিজের ক্রিয়েটিডিটি চিন্তা দিয়ে
স্টাইলিস্ট কারিগরি দিয়ে মানুষের আত্মবিশ্বাস ফুটিয়ে তোলে এমন কিছু তৈরি করেন।
ফ্যাশন এবং স্টাইল এর মধ্যে পার্থক্য
অনেকেই মনে করেন ফ্যাশন এবং স্টাইল একই জিনিস। কিন্তু আসলে ফ্যাশন এবং স্টাইল
দুটি আলাদা আলাদা জিনিস ।ফ্যাশন মূলত ট্রেন্ড অর্থাৎ এখন কি চলছে ,বর্তমানে মানুষ
কেমন পোশাক পড়তে পছন্দ করছে, রং কেমন চলছে কেমন ডিজাইন চলতেছে এসবই ফ্যাশন।
ফ্যাশন পরিবর্তনশীল। ফ্যাশন আবহাওয়া , ওয়েদার এর সাথে চেঞ্জ হয়।
স্টাইল হলো মানুষের নিজের একান্তই ব্যক্তিগত পছন্দ।আপনি কি পড়তে পছন্দ করেন,
নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করেন এটা আপনার স্টাইল। স্টাইল একটি মানুষের
ব্যক্তিত্বের প্রতিফলকও বলা যায়। সেটা ট্রেন্ডে থাকুক অথবা না থাকুক ।আপনি নিজে
যেটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেটাই আপনার স্টাইল। ফ্যাশন হলো যেটা বাহির থেকে আসে
মানুষ এক্সেপ্ট করে। আর স্টাইল হল যেটাকে আপনি নিজের মতো করে পছন্দ করেন।
ফ্যাশন ডিজাইন পড়ার যোগ্যতা
একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চাইলে শুধু স্কিল থাকলে হবে না পাশাপাশি কিছু নির্দিষ্ট
একাডেমিক যোগ্যতাও থাকতে হবে। আপনি যদি এটিকে পেশা ,আন্তর্জাতিকভাবে ক্যারিয়ার
গড়তে চান। ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করতে হবে।আপনি
যে কোন বিভাগে (বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য) পড়তে পারেন এতে কোন অসুবিধা নেই।
তবে আর্টস এবং বিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে কিছু কিছু সুবিধা পাওয়া যায়।এইচএসসি
পাস করার পর আপনি চাইলে ১ থেকে ৩ বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হতে পারেন।অনেক
ইন্সটিটিউট ভর্তির আগে কিছু টেস্ট নিতে পারে।তাই আগে থেকেই ড্রইং, স্কেচ
প্র্যাকটিস করে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে অনেক ফ্যাশন
ইনস্টিটিউট এ ধরনের কোর্স করায় যেমন Shanto-Mariam University of Creative
Technology, BGMEA University of Fashion & Technology,National Institute of
Design.
এছাড়াও আপনি চাইলে চার বছর মেয়াদী ফ্যাশন ডিজাইনের উপর টেক্সটাইল ডিজাইনের উপর
অনার্স ডিগ্রি করতে পারেন।এটি আপনাকে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে পেশাদার
হিসেবে কাজ করার জন্য প্রস্তুত করবে। কারণ অনার্স এ গবেষণা,
প্রজেক্ট,থিসিস,ইন্টার্নশিপ অনেক কিছুই শেখানো হয়। আপনি চাইলে মাস্টার্সও করতে
পারেন। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।বিদেশে গবেষণাধর্মী কাজ করতে চাইলে এটি আপনাকে
অনেক সাহায্য করবে আপনার উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার জন্য।
ফ্যাশন ডিজাইনার হতে কোন কোন দক্ষতা প্রয়োজন
ফ্যাশন ডিজাইনিং এর প্রতিযোগিতামূলক দুনিয়ায় টিকে থাকতে হলে নিজের একটা পরিচয়
পরিচিতি বানাতে হবে।আপনার অবশ্যই বিশেষ কিছু স্কিল, দক্ষতা থাকতে হবে।যেমন একজন
সফল ফ্যাশন ডিজাইনারদের মূল শক্তি হচ্ছে সৃজনশীলতা।নতুন কিছু ভাবার ক্ষমতা,
কল্পনার মাধ্যমে বাস্তবে রূপান্তর করার ক্ষমতা থাকতে হবে। ডিজাইন নিয়ে
এক্সপেরিমেন্ট করার সাহসিকতা থাকতে হবে।
স্কেচিং, ড্রয়িং ফ্যাশন ডিজাইন এ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। আপনি যা চিন্তা
করছেন সেটা কাগজে না আঁকতে পারলে আপনি সেটা বাস্তবের রূপ দিবেন কিভাবে ।
জানতে হবে বুঝতে হবে যেমন সব রং কাপড়ের মধ্যে সব ডিজাইন মানায় না শুধু সাহায্য।
আপনাকে অবশ্যই কাপড়, রং সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখতে হবে, বুঝতে হবে।
কোন ডিজাইন কোন কাপড়ে মানাবে এসব জ্ঞান থাকতে হবে।আবার কোন রঙের সাথে কোন রং
মানাবে। কিভাবে এক রঙের মধ্যে দুই তিন রং মিলিয়ে ব্যালেন্স করা শিখতে হবে, জানতে
হবে ।এছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা হলো কমিউনিকেশন।একা একা বসে আঁকলে হবে না,
ভালোভাবে কমিউনিকেশন করতে হবে।টেইলার, ক্লায়েন্ট ,স্যাম্পল মেকার ,মডেল সবার
সাথে কমিউনিকেশন ভালোভাবে করতে হবে।
তাদের সাথে কথা বলতে হবে, তাদেরকে ভালোভাবে বোঝাতে হবে, অন্যদের মতামত শুনতে হবে
।এই কমিউনিকেশন স্কিল আপনার ক্যারিয়ারকে success করার জন্য অত্যন্ত জরুরী
বিষয়।বর্তমান ডিজিটাল যুগ আপনার সফলতাকে আরো অনেক সহজ করে দিয়েছে। কারণ বিভিন্ন
কম্পিউটারের বিভিন্ন ডিজাইন সফটওয়্যার রয়েছে যা জানলে আপনার কাজ করতে অনেক
সুবিধা হবে ।আপনার কাজ করাটা সহজ হবে যেমন Adobe
Illustrator,Photoshop,CorelDRAW,CLO 3D.
একজন ফ্যাশন ডিজাইনার কে অবশ্যই ধৈর্যশীল এবং আত্মবিশ্বাসী হতে হবে ।ভুল থেকে
শেখার প্রবণতাটা রাখতে হবে। ভুল হলে সেখানে ভেঙে না পড়ে সেখান থেকে নতুন কিছু
শিখে নতুন করে পথ চলার ক্ষমতাটা রাখতে হবে অবশ্যই।
ফ্যাশন ডিজাইন পড়ার খরচ
ফ্যাশন ডিজাইনিং পরার খরচ কেমন হবে তা নির্ভর করে আপনি কোথায় পড়ছেন, কোন কোর্স
করছেন, ইনস্টিটিউট টা সরকারি না বেসরকারি এসব বিষয়ের উপর। চলুন বাংলাদেশে ফ্যাশন
ডিজাইন করার খরচ সম্পর্কে জানি।
বিষয় | সরকারি প্রতিষ্ঠান | বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অথবা ইনস্টিটিউট | শর্ট টার্ম কোর্স |
---|---|---|---|
সময় | ডিপ্লোমা কোর্স ৩-৪বছর | ডিপ্লোমা অথবা অনার্স কোর্স ৩-৪বছর | ৩মাস - ১বছর |
প্রতি সেমিস্টারে খরচ | ৫,০০০ - ১৫,০০০টাকা | ৩০,০০০- ৭০,০০০টাকা | |
মোট খরচ | প্রায় ২ থেকে ৩লাখ টাকা পর্যন্ত | প্রায় ৩লক্ষ - ৭লক্ষ টাকা পর্যন্ত | ৫,০০০ -৫০,০০০টাকা পর্যন্ত |
আপনি চাইলে বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়তে
পারেন।দেশের বাহিরে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়তে হলে খরচটা সম্পর্কে শুরুতে
আমাদের জেনে রাখা দরকার। চলেন এখন জানি বিদেশে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়ার খরচ
কেমন।
অন্যান্য দেশের তুলনায় ইন্ডিয়াতে খরচ তুলনামূলক কম হয়, অনেকটাই বাংলাদেশের
কাছাকাছি।ইন্ডিয়াতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে।যেমন National Institute of
Fashion Technology,Pearl Academy, INIFD এগুলোতে খরচ মোটামুটি প্রায় দুই থেকে
পাঁচ লাখ টাকার মত।তবে থাকা, খাওয়া, যাতায়াত এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক খরচ
রয়েছে। সব মিলিয়ে খরচ কিছুটা বাড়বে।
ইউরোপ, আমেরিকা, ইতালিতে খরচ তুলনামূলক ভাবে বেশি।যেমন- Parsons School of Design
USA, London College of Fashion UK, Istituto Marangoni Italy বছরে ১৫ থেকে ৪০
লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে ।টিউশন ফি, প্রজেক্ট উপকরণ, থাকা-খাওয়া এবং
প্রতিদিনকার খরচ সবমিলিয়ে।
তবে অনেক ইনস্টিটিউট স্কলারশিপ নিয়ে পড়ার সুযোগ দায়, যা পেলে খরচ অনেকটাই কমে
যায়।বিদেশে পড়াশোনার জন্য টাকার পাশাপাশি প্রয়োজন পোর্টফোলিও, ইংরেজিতে দক্ষতা
এবং অনেক ভর্তির প্রস্তুতি তাই খরচের পাশাপাশি এসবের পরিকল্পনা করাও জরুরী।
ফ্যাশন ডিজাইনিং শিক্ষার্থীদের জন্য ঘরে বসে ইন্টার্নশিপ
আজকের যুগে শুধু সার্টিফিকেট থাকলেই হয় না এখন দরকার বাস্তব অভিজ্ঞতা।বিশেষ করে
ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের মতো সৃজনশীল পেশায় যেখানে দক্ষতা ও বাস্তব অভিজ্ঞতাই আপনাকে
এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।কিন্তু একজন শিক্ষার্থী কীভাবে ইন্টার্নশিপ করবে?যদি সে
ঢাকার বাইরে থাকে অথবা কাজের চাপে বাইরে যেতে না পারে?
তাদের জন্য internship for fashion designing students work from home.ফ্যাশন
ডিজাইনিং শিক্ষার্থীদের ঘরে বসেই ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ এখন সত্যি।যেখানে তারা
অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন,পোর্টফোলিও তৈরি সহ
সার্টিফিকেটও অর্জন করতে পারবেন।
এখন ঘরে বসেই ইন্টার্নশিপ করতে পারবেন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম,ডিজিটাল প্রজেক্ট ও
রিমোট ব্র্যান্ডগুলোর মাধ্যমে।আজকাল অনেক ছোট উদ্যোক্তা ইনস্টাগ্রাম,ফেসবুকে
ফ্যাশন ব্র্যান্ড চালায় বিশেষ করে থ্রি পিস, কুর্তি, হ্যান্ডপেইন্ট শাড়ি
ইত্যাদি।এরা প্রোডাক্টের ডিজাইন, প্রোডাক্ট প্যাকেজিং, সোশ্যাল কনটেন্ট তৈরির
জন্য নতুনদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
আপনি বিভিন্ন Facebook গ্রুপ, ইনস্টাগ্রামের পেজগুলোতে নিজের আগ্রহ জানিয়ে কাজ
চেয়ে আবেদন করতে পারেন।আবার Fiverr, Upwork, Freelancer.com এ অনেকে ডিজাইনার
খোঁজে যারা Concept Draft, moodboard, embroidery ডিজাইনের স্কেচের কাজ
জানে।এক্ষেত্রে আপনার প্রোফাইল ইংরেজিতে হতে হবে এবং নিজ হাতে করা কিছু ডিজাইন
আপলোড করতে হবে এবং Communication skill ভালো হতে হবে।
ভালো করে একটি প্রোফেশনাল মেইল লিখে আবেদন করতে পারেন।এবং অবশ্যই সময়মতো কাজ শেষ
করার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।linkedin এ নিয়মিত Remote Internship পোস্ট
দেখা যায় সেখানে নিয়মিত খোঁজ করার চেষ্টা করুন।ইন্টার্নদের ডিজাইন আইডিয়া
রিসার্চ,স্কেচ ও কনসেপ্ট আঁকা,ফ্যাশন প্রমোশন ও ব্র্যান্ডিং ধারণা
বানানো,ক্লায়েন্টের সাথে বাস্তব সময়ের কাজের চাপ সামলানো ইত্যাদি কাজ শেখানো হয়ে
থাকে।
ইন্টার্নশিপ শেষে বেশিরভাগ ব্র্যান্ডই সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে।এই অভিজ্ঞতা আপনার
CV তে যুক্ত করতে পারবেন যা আপনাকে ক্লায়েন্টও পেতে সাহায্য করবে।যদিও আজকের দিনে
ফ্যাশন ডিজাইনিং শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ শুধু ঢাকাতেই
সীমাবদ্ধ না।অভিজ্ঞতা নিতে শুধু দরকার উদ্যোগ, আগ্রহ আর একটু খোঁজার কৌশল।আর
একদিন আপনার স্কিলই হবে আপনার পরিচয়।আর সেই পরিচয় এখন গড়তে পারেন ঘরে বসেই।
ফ্যাশন ডিজাইনারদের জন্য কোন সাবজেক্ট ভালো
ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে কি করতে হবে তা জানার জন্য ফ্যাশন ডিজাইনের জন্য কোন
সাবজেক্ট ভালো এটা জানাও জরুরী।আপনি যদি ফ্যাশন ডিজাইনিং ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে
নিতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে এমন কিছু সাবজেক্ট চুজ করতে হবে যেটি আপনাকে ভবিষ্যতে
সাহায্য করবে।
মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে থেকেই সাবজেক্ট বেছে নেওয়া ভালো ।যেমন
সৃজনশীল ,আর্ট, ডিজাইন,গাণিতিক ধারণা আছে এমন সাবজেক্ট।আর্টস, সায়েন্সের দুই
বিভাগ হলে ভালো ।তবে ফ্যাশন ডিজাইন এর সাথে যারা যুক্ত তারা মোটামুটি আর্টস
ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেই আসেন মূলত। তাদের ড্রইং, রং বোঝার ক্ষমতা, নকশা করার দিকগুলো
যা শেখায় তাতে তাদের সুবিধা হয় ।
HSCতে চারুকলা,কম্পিউটার , আইসিটি কিংবা গণিত , পদার্থ নিয়ে পড়াশোনা করেন তাহলে
এগুলো আপনাকে ভবিষ্যতে ফ্যাশন ডিজাইন করছে সহায়তা করবে।বিশ্ববিদ্যালয় সব বিভাগ
থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিং এর ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি নিলেও যারা আগে থেকে আর্ট, ডিজাইন
,কম্পিউটার গ্রাফিক্সে পারেন তারা এগিয়ে থাকে।
ফ্যাশন ডিজাইন এর সর্বোচ্চ ডিগ্রি
ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে ফ্যাশন ডিজাইনিং ডিপ্লোমা , অনার্স লেভেলের কোর্স দিয়ে
শুরু হয়। এরপর ইচ্ছা ও যোগ্যতা অনুযায়ী ফ্যাশন ডিজাইন করতে চান তাদের জন্য
মাস্টার্স ডিগ্রী ,পিএইচডি ডিগ্রি ও রয়েছে।সবচেয়ে কার্যকর Master’s Degree কে
ধরা হয়।কারণ এই পর্যায়ে থিওরি, ব্র্যান্ডিং,ট্রেন্ড অ্যানালাইসিস, ডিজিটাল
টেকনোলজি,ব্যবসা নিয়ে সমস্ত কিছু গভীরভাবে শেখানো হয়।
PhD in Fashion Design, Fashion Studies , Textile Design বেশি কমন নয়, এটি
গবেষণা ভিত্তিক শিক্ষা।খুব কম মানুষ এটি করে। শুধু যারা গবেষণা ,একাডেমিক
ক্যারিয়ার গড়তে চাই তারাই করেন।এটি ৩-৫ বছর মেয়াদী একটি কোর্স।
ফ্যাশন ডিজাইনারের সর্বোচ্চ স্তর
ফ্যাশন ডিজাইনারের সর্বোচ্চ স্তর Highest Level of a Fashion Designerমানে একজন
ফ্যাশন ডিজাইনার তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ কোন স্থানে স্তরে যেতে পারে পদমর্যাদা
দক্ষতা প্রভাবে দিক দিয়ে।একজন ফ্যাশন ডিজাইনারের ক্যারিয়ার স্কেচিং থেকে শুরু
হলেও সময়ের সাথে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে তিনি অনেক বড় বড়
পর্যায়ে যেতে পারেন।
এটির সর্বোচ্চ স্তর মূলত নির্ভর করে আপনি কোন দিকে ক্যারিয়ার গড়তে চান
ক্রিয়েটিভ ডিজাইন না ব্যবসা নাকি একাডেমিক গবেষণা।তিনটি স্তর সম্পর্কে চলুন জেনে
নেয়া যাক।
ক্রিয়েটিভ ডিজাইন
ডিজাইন জগতের সবচাইতে উচ্চ এবং সম্মানজনক হল Creative Direction , Head
Designer.একজন Creative Director সাধারণত কোনো বড় ব্র্যান্ড , নিজস্ব ব্র্যান্ড
এর ডিজাইন টিমের প্রধান। তিনি শুধু মাত্র পোশাক ডিজাইনই করেন না,পুরো ব্র্যান্ডের
ভিজুয়াল আইডেন্টিটি, থিম, ট্রেন্ড , ক্যাম্পেইন , ফ্যাশন শো সহ যত বিষয় আছে
সবকিছু ঠিক করেন।
ব্যবসা
অনেক ফ্যাশন ডিজাইনারই নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করতে চাই।যার ফলে তারা ফ্যাশন
ডিজাইনিং এর সাথে সাথে ব্যবসা, ব্যবসা সংক্রান্ত মার্কেটিং, কাস্টমার নেটওয়ার্ক
গড়ে তোলেন। তারা সবকিছু নিয়েই কাজ করেন।তারা যে শুধু কাপড় জামা ডিজাইন করেন তা
না একটি কোম্পানি পরিচালনা করেন। যা তাদের উচ্চতর আর্থিক এবং সামাজিক মর্যাদা এনে
দেয়।
একাডেমিক গবেষণা
অনেকেই শিক্ষা গবেষণা নিয়ে বেশ আগ্রহী থাকেন।তারা ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পিএইচডি
করে।শিক্ষক, লেখক , ফ্যাশন থিউরি বিশেষজ্ঞ হন।এটি তুলনামূলকভাবে গবেষণার
ভিত্তিক।আবার অনেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ফ্যাশন ইতিহাস এবং সমাজে ফ্যাশনের
প্রভাব ,গাইড নিয়ে কাজ করেন।
একজন ফ্যাশন ডিজাইনারের বেতন কত
বাংলাদেশের একজন ফ্যাশন ডিজাইনারের বেতন অনেক কিছুর নির্ভর করে।যেমন আপনার
অভিজ্ঞতা, কোথায় কাজ করছেন, কি ধরনের কাজ করছেন, আপনার স্কিল কেমন, মার্কেটে
চাহিদা কেমন এসবের উপর নির্ভর করে।
বাংলাদেশে Entry level এ ফ্যাশন ডিজাইনার ১২,০০০-৩০,০০০ টাকা মাসিক বেতন
পায়।৫-১০বছরের অভিজ্ঞতা হয়ে গেলে Senior level এ যায় এবং তখন মাসিক বেতন
৫০,০০০-১,৫০,০০০ টাকা পায়।Creative Director/ Head of Fashion Design মাসিক
২,০০,০০০-৫,০০,০০০ টাকা বেতন পায়।
USA, UK, Italy তে Entry Level এ ফ্যাশন ডিজাইনার ৪০,০০০-৮০,০০০ ডলার পর্যন্ত
বাৎসরিক বেতন পায়।Senior Level এ ১০০,০০০-২০০,০০০ ডলার পর্যন্ত বাৎসরিক বেতন
পায়।তবে এই পরিমান ইনকাম করতে ঐদেশে পড়তে হবে, কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে
হবে।বাংলাদেশে আয় তুলনামূলক কম।তবে স্কিল বাড়াতে ফ্রিল্যান্সিং ও আন্তর্জাতিক
মার্কেটে কাজ করলে আয় বেশি করা সম্ভব।
ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে কি করতে হবে।তরুণদের জন্য গাইড:শেষ কথা
ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে কি করতে হবে বিষয়টা নিয়ে পোস্টটিতে আলোচনা
করেছি।ফ্যাশন ডিজাইনার মানে শুধু স্টাইলিশ জামা বানানো নয়।নিজের আত্মশক্তি
প্রকাশ করার একটি শক্তিশালী মাধ্যমও।যারা সবসময় সব নতুন নতুন স্বপ্ন দেখতে পছন্দ
করেন,নতুন কিছু তৈরি করার স্বপ্ন দেখেন,নিজের ভাবনাকে মেলে ধরতে চান ফ্যাশন
ডিজাইনিং তাদের জন্য।
এটি একটি এমন জগৎ যেখানে কল্পনা, নকশা,ট্রেন্ড বোঝার ক্ষমতা, কঠোর পরিশ্রম ছাড়া
সফল হওয়া সম্ভব না।আপনিকে অবশ্যই সৃজনশীল হতে হবে এবং নতুন নতুন কনসেপ্ট নিয়ে
কাজ করার ইচ্ছাশক্তি এবং প্রবণতা থাকতে হবে।এই পেশায় ধৈর্য্য এবং আত্মবিশ্বাস
হওয়া অত্যন্ত জরুরী।
শুরুতে সফল না হলেও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সফল হওয়ার
পসিবিলিটি অনেক।আশা করি এই পোষ্টের মাধ্যমে ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে কি করতে হবে
তা সম্পর্কে ধারনা পেয়েছেন।ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url