বাসক পাতা কাশিতে কতটা উপকারী ,পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া,সর্তকতা

আপনার বাসক পাতা কাশিতে কতটা উপকারী,পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া,সর্তকতা সম্পর্কে জানা আছে?আসুন বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম,বাসক পাতার ঔষধি গুনাগুন,হোম রেমেডি ফর কফ,বাসক গাছের মূল উপকারিতা,বাসক গাছের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

বাসক- পাতার -উপকারীতা-পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া-সর্তকতা


শত শত বছর ধরে বাসক পাতা ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।বিশেষ করে কাশি শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে।বাসক পাতার নির্যাসে থাকা প্রধান রাসায়নিক উপাদান ভাসিসিন শ্বাসনালীর শ্লেষ্মা পাতলা করতে সাহায্য করে এবং কফ বের হয়ে যায় ফলে কাশি কমে যায়। 

এই কারণে বাসক পাতা থেকে তৈরি রস অনেক সময় প্রাকৃতিক কাশির ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।তবে বাসক পাতা ব্যবহারে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।সঠিক মাত্রায় বাসক পাতা কাশি শ্বাসকষ্টে অনেকটাই উপকারী কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত।

পেজ সূচিপত্র:বাসক পাতা কাশিতে কতটা উপকারী ,পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া,সর্তকতা

বাসক পাতা কী এবং বাসক গাছের বৈশিষ্ট্য

Basokpatar upokarita কাশিতে কতটা উপকারী,পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া,সর্তকতা জানতে অনেকেই আগ্রহী কারণ এটি একটি প্রাকৃতিক কাশিনাশক হলেও ভুল ব্যবহারে ঝুঁকি রয়েছে।বাসক পাতা একটি পরিচিত ঔষধি উদ্ভিদের পাতা যা বহু বছর ধরে আয়ুর্বেদ, ইউনানি ও হারবাল চিকিৎসায় অত্যন্ত মূল্যবান একটি উদ্ভিদ।

এই উদ্ভিদটি সাধারণত ঝোপঝাড়জাতীয় ও চিরসবুজ প্রকৃতির যার পাতা ২-৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়  এবং গাঢ় সবুজ রঙের ও তীব্র গন্ধযুক্ত।Basokpata মাঝারি আকারের ও ঔষধি গুণসম্পন্ন। বাসক মূলত বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মাতে দেখা যায়।বাসক  গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Justicia adhatoda।

আরোও পড়ুন:চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার।প্রাকৃতিক সমাধান ঘরে বসেই

বসন্তকালে গাছে ছোট এবং টিউব আকৃতির সাদা ও বেগুনি রঙের ফুল ফোটে।বাসকের ফলের ভিতরে সরু আকৃতির বীজ থাকে যা শুকনো কালে ছড়িয়ে পড়ে।গাছটির মূল সোজাসুজি মাটির গভীরে প্রবেশ করে যা মাটিকে ধরে রাখতেও সহায়তা করে।বাসক পাতার নির্যাস প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে গ্রামবাংলায় এখনো বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

বাসক পাতার ঔষধি গুণ

Justicia adhatoda বহু ঔষধি গুণে পরিপূর্ণ একটি ভেষজ উপাদান। Bashok patar osudhi gunagun শরীরের নানা অসুখ নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে।বাসকের মূল ঔষধি উপাদানসমূহের মধ্যে ভ্যাসিকিন ও ভ্যাসিকিনোন উন্নতম।এছাড়াও Essential oils, Flavonoids, Alkaloids বিদ্যমান।Vasicineবাসক পাতার প্রধান সক্রিয় উপাদান।

এটি কাশিনাশক,শ্বাসনালী প্রসারক এবং জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে।কাশিতে বাসক পাতা কতটা উপকারী তা এর ভেষজ গুণাগুণ থেকে জানা যায়।Vasicinone ও এমন একটি যৌগ যা কাশির উপশমে ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যায় সহায়ক।বাসক পাতায় কিছু প্রাকৃতিক তেল রয়েছে যেগুলো ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস বিরোধী হিসেবে কাজ করে।

বাসক পাতা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে।এটি দেহের কোষকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।Alkaloids দেহের স্নায়ুতন্ত্রে প্রশমক প্রভাব ফেলে কাশি ও মাথাব্যথা উপশমে সাহায্য করে।হাঁপানি ও ব্রঙ্কাইটিসেও বাসক পাতা বেশ উপকারী।

১০টি রোগ নিরাময়ে বাসক পাতার উপকারীতা

বাসক পাতা প্রকৃতির এক অমূল্য উপহার ।কাশিতে বাসক পাতার উপকারিতা কতটা তা বলার অপেক্ষা রাখে না কারণ এর ভেতরে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান যেমন ভাসিসিন ও ভাসিকোনিন শ্বাসনালিকে প্রশমিত করে জমে থাকা কফকে সহজে বের করে আনে এবং কাশি কমায়ী দীর্ঘস্থায়ী স্বস্তি দেয়।

যার ফলে এটি বহু বছর ধরে আয়ুর্বেদ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় অত্যন্ত উপকারী একটি ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।চলুন বাসক পাতার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গুণ ও রোগ নিরাময়ে বাসক পাতা কতটা উপকারী সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

১.বাসক পাতা শুকনো ও ভেজা কাশির ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর।এটি কফ পাতলা করে বাইরে বের করতে সাহায্য করে এবং গলার শুষ্কতা ও চুলকানি কমায়।

২.বাসক পাতার নির্যাসের ভ্যাসিকিন উপাদান ব্রঙ্কিয়াল টিউব প্রসারিত করে শ্বাসনালী খুলে দেয় ফলে হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীরা আরাম পায়।

৩.বাসক পাতা গলা ব্যথা, সর্দি ও নাক বন্ধের সমস্যায় স্বাভাবিক শ্বাস নেওয়ার পথ খোলে দিতে সাহায্য করে।

৪.বাসক পাতার রস প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে জ্বর কমাতে সাহায্য করে বিশেষ করে ভাইরাসজনিত জ্বরের ক্ষেত্রে।

৫.বাসক ফুসফুস থেকে জমে থাকা কফ পরিষ্কার করে ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

৬.বাসক পাতা প্রদাহ কমিয়ে ব্রঙ্কাইটিস ও ফুসফুসের ইনফেকশনজনিত অসুস্থতা উপশমে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

৭.বাসক পাতায় অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকার কারণে এটি অ্যালার্জিজনিত চুলকানি ও ত্বকের জ্বালাভাব প্রশমিত করে এমনকি ফুসকুড়ি, এলার্জি বা চর্মরোগ ধীরে ধীরে কমে যায়।

৮.বাসক পাতা যকৃতকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে যা হালকা জন্ডিসের ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

৯.বাসক পাতার রস দিয়ে গার্গল করলে মুখের ঘা, গলার ব্যথা বা ইনফেকশন অনেকটা কমে যায়।

১০.বাসক পাতা দেহ থেকে টক্সিন বের করতে সহায়তা করে ফলে এটি ব্যবহারে রক্ত বিশুদ্ধ থাকে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

বাসক পাতার টোটকা তৈরির সহজ উপায় 

বাসক পাতার টোটকা হলো এমন একটি ভেষজ ওষুধ যা কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট এবং গলা ব্যথা কমাতে দারুণ কার্যকর।বাজারের কেমিক্যালযুক্ত সিরাপের চেয়ে নিজ হাতে বানানো বাসক পাতার টোটকা অনেক বেশি নিরাপদ ও কার্যকর।এই টোটকাটি সর্দি কাশি সহ হৃদরোগেও বেশ উপকারী।আসুন বাসায় কিভাবে সহজ উপায়ে টোটকা তৈরি করা যায় তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

প্রয়োজনীয় উপকরণ:

                ৫-৬টি বাসক পাতা

                ৪-৫টি রসুনের কোয়া

                ২টেবিল চামচ থেতলানো আদা

                ২টি তেজপাতা

                ৫-৬টি লং

                ১ টেবিল চামচ গোল মরিচ

                স্বাদমতো মিশ্ররি দানা

                ৩কাপ পানি

তৈরির পদ্ধতি : বাসক পাতা গুলো ভালোভাবে ধুয়ে রাখুন।এরপর একটি পাত্রে পানি ফুটতে দিন।পানি ফুটে এলে বাসক পাতাগুলো পানির মধ্যে ছেড়ে দিন এরপর রসুন,তেজপাতা,সামান্য লবণ, লং, গোলমরিচ এবং মিশ্ররি দানা দিয়ে ১৫ মিনিট বয়েল করতে থাকুন।ততক্ষণ  ফুটান যতক্ষণ না তিন কাপ পানি এক কাপ পরিমাণ হবে। এরপর একটি মগে চা ছাঁকনির মাধ্যমে ছেকে নিন এবং ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে তৈরি হয়ে গেল বাসক পাতার টোটকা।

আরোও পড়ুন:ত্বকের যত্নে থানকুনি পাতার ব্যবহার।প্রাকৃতিক ঘরোয়া সমাধান

বাসক পাতার টোটকা একটি প্রাকৃতিক ও সহজলভ্য ভেষজ প্রতিকার।আপনার হাতের নাগালের বাড়িতে থাকা সহজ উপকরণে তৈরি এই টোটকা রাসায়নিক ওষুধের তুলনায় অনেক নিরাপদ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন।তবে নিয়ম মেনে এবং পরিমাণ বুঝে ব্যবহার করা উচিত।যেকোনো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা বা জটিল রোগের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর ব্যবহার করুন ।

বাসক পাতা শিশুদের কাশিতে কতটা নিরাপদ

বাসক পাতা প্রাকৃতিকভাবে কাশি উপশমে উপকারী হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে খুব সাবধানে ব্যবহার করা উচিত। বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের শরীর ভেষজ উপাদান সহজে সহ্য করতে পারে না। অনেক সময় এটি বমি, পেট খারাপ বা অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। তাই ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের বাসক পাতার রস বা সিরাপ না দেওয়াই ভালো।

তবে আপনি চাইলে ৫ বছরের বেশি শিশুদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাসক পাতার হালকা সিরাপ অল্প পরিমাণে দিতে পারেন।বাসক পাতার সিরাপ শিশুদের কফ সারাতে, গলা পরিষ্কার রাখতে এবং হালকা কাশিতে আরাম দিতে পারে।

তবে অবশ্যই শিশুর বয়স ১ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের মধু দেওয়া যাবে না কারণ এক বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য মধু ঝুঁকিপূর্ণ।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিশুদের যেকোনো ঘরোয়া চিকিৎসার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত কারণ প্রাকৃতিক বলেই সবসময় নিরাপদ এই ধারণা সব ক্ষেত্রে সঠিক হয় না।

বাসক পাতার চা তৈরির পদ্ধতি ও উপকারিতা

কাশি উপশমে বাসক পাতা কতটা উপকারী তা আমরা বুঝতে পারি যখন দেখি এটি প্রাকৃতিকভাবে কফ সরিয়ে ফুসফুস পরিষ্কার করে এবং শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।চলুন বাসক পাতার চা বানানোর রেসিপি জানি।

 যা যা লাগবে:

        ১০ থেকে ১২টি তাজা বাসক পাতা

        ৬-৭টি তাজা তুলসী পাতা

        ৪ কাপ পানি

        ২-৩টা এলাচ

        ১-২টা দারুচিনি 

        ১-২টা তেজপাতা

        স্বাদমতো মিশ্ররি দানা

        ১ টেবিল চামুচ আদার কুচি

        ৬-৮টি লবঙ্গ

তৈরির পদ্ধতি:বাসক পাতা ও তুলসী পাতা গুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন।একটি পাত্রে ৪ কাপ পানি দিয়ে বাসক পাতা,তুলসী পাতা, আদা কুচি, লবঙ্গ,এলাচ,তেজপাতা ও দারুচিনি দিয়ে ফুটাতে থাকুন। কিছুসময় পর মিশ্ররি দানা দিয়ে ১০-১৫ মিনিট ফুটাতে থাকুন যতক্ষণ না পানি অর্ধেক হয়ে আসে।ফুটা হয়ে গেলে চা ছাঁকনির দিয়ে একটি কাপে ছেঁকে নিন।

বাসক পাতার চায়ের উপকারিতা

basokpatar cha একটি প্রাকৃতিক ভেষজ পানীয় যা আপনার শরীরের নানাভাবে উপকার করে। নিয়মিত এই চা পান করলে ছোটখাটো শারীরিক সমস্যায় ওষুধ ছাড়াই আরাম পাওয়া যায়।প্রথমত এই চা কাশি ও ঠান্ডা উপশমে বিশেষভাবে কার্যকর। এটি কফ পাতলা করে এবং গলা পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে ফলে গলা জ্বলা বা খুসখুসে কাশিতে উপশম পাওয়া যায়।

দ্বিতীয়ত শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির রোগীদের জন্য এটি খুবই উপকারী। বাসক পাতা ব্রঙ্কিয়াল টিউব খুলে দিয়ে ফুসফুসে বাতাস চলাচল সহজ করে তোলে ফলে শ্বাস নিতে সুবিধা হয়।তৃতীয়ত বাসক পাতায় থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে টক্সিন দূর করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি আপনার রক্ত পরিষ্কার রাখতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

চতুর্থত এটি হালকা জ্বর, মাথাব্যথা ও গা ব্যথার মতো উপসর্গেও সাহায্য করে।সব মিলিয়ে বলা যায় বাসক পাতার চা সহজলভ্য এবং প্রাকৃতিকভাবে স্বাস্থ্যকর। তবে অতিরিক্ত পান না করা থেকে বিরত থাকুন।অবশ্যই নিয়ম মেনে এবং সঠিক পরিমাণে খাওয়া উচিত এবং শিশু বা গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

বাসক পাতার রস এর ব্যবহারবিধি

বাসক পাতা গুণে ভরপুর একটি উদ্ভিদ যার রস বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।এই পাতার রস বিশেষত কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা এবং হালকা জ্বরের জন্য দারুণ কার্যকর।বাসক পাতা কাশিতে কতটা উপকারী তা বোঝা যায় এর প্রাকৃতিক কাশিনাশক গুণাগুণ থেকেই।প্রথমে কয়েকটি তাজা বাসক পাতা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।এরপর তা পেস্ট করে একটি কাপড় বা ছাঁকনি দিয়ে রস ছেঁকে নিন।

সকালে খালি পেটে এক চা চামচ বাসক পাতার রস খেলে কাশি ও গলা খুসখুস কমে যায়।আপনি চাইলে এতে সামান্য মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।এতে স্বাদ ও কার্যকারিতা দুটোই বাড়াবে।শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির ক্ষেত্রে প্রতিদিন ১-২ বার করে বাসক পাতার রস খাওয়া যায়।

ঠান্ডা জ্বরের সময় হালকা গরম পানি বা তুলসী পাতার রসের সঙ্গে মিশিয়ে এই রস সেবন করলে আরাম পাওয়া যায়।মুখের ঘা বা গলার ইনফেকশনে এই রস দিয়ে গার্গল করলে উপকার পাওয়া যায়।তবে অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। দিনে ১-২ চামচের বেশি সেবন করলে পেটে গ্যাস্ট্রিক বা পাতলা পায়খানা হতে পারে।

বাসক পাতা কতদিন খাওয়া যায়

বহুদিন ধরেই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার মাধ্যমে প্রমাণিত বাসক পাতা কাশিতে কতটা উপকারী।তবুও বাসক পাতার ব্যবহার অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। সাধারণত বাসক পাতা ৫ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত খাওয়া নিরাপদ বিশেষ করে কাশি বা সর্দির মতো সাধারণ সমস্যার জন্য।যদি শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির মতো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা থাকে তবে ১০ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসক পাতা সেবন করা যেতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আপনি বাসক পাতার রস বা চা সপ্তাহে ২-৩ দিন খেতে পারেন। তবে নিয়মিত দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার না করাই উচিত। অতিরিক্ত সেবনের ফলে পেটে অম্লতা, পাতলা পায়খানা বা দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। তাই বাসক পাতা যতই উপকারী হোক না কেন নির্দিষ্ট মাত্রা ও সময় মেনে খাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।

বাসক পাতা ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সর্তকতা

বাসক পাতা একটি কার্যকর ভেষজ উদ্ভিদ হলেও এর ভুল বা অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।অতিরিক্ত পরিমাণে বাসক পাতার রস সেবনে পেটে অম্লতা, ডায়রিয়া, বমিভাব বা মাথা ঘোরা দেখা দিতে পারে।কখনো কখনো এতে অ্যালার্জি বা ত্বকে চুলকানিও হতে পারে বিশেষ করে যাদের ত্বক সংবেদনশীল।

দীর্ঘমেয়াদি ও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খেলে লিভার বা পাচনতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।এছাড়া একটানা ৭-১০ দিনের বেশি বাসক পাতা খাওয়া ঠিক নয়। প্রাকৃতিক হলেও যেকোনো ভেষজ উপাদানের যেমন গুণ আছে তেমনি সচেতনভাবে ব্যবহার না করলে তার ক্ষতির ভয়ও থাকে।

কোন কোন ব্যক্তির বাসক পাতা এড়িয়ে চলা উচিত

Vasaka ‍ৃএর অনেক ভেষজ গুণ আছে তবে কিছু ব্যক্তি ও ব্যক্তি শারীরিক অবস্থার জন্য এটি খাওয়া বা ব্যবহার করা নিরাপদ না।বাসক পাতায় গর্ভাশয় উত্তেজকমূলক উপাদান থাকতে পারে যা গর্ভপাত বা অকাল প্রসব ঘটাতে পারে।তাই গর্ভবতী নারীর জন্য নিরাপদ না।স্তন্যদানকারী নারীর বাসক পাতা ব্যবহার না করাই ভালো।

বাসক পাতার উপাদান শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং তা বুকের দুধের মাধ্যমে নবজাতকের দেহে যেতে পারে।বাসক পাতা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে তাই যাদের রক্তচাপ ইতোমধ্যেই কম তাদের এটি না খাওয়াই ভালো।বাসক পাতায় অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

আরোও পড়ুন:ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা।কার্যকর নিয়ম ও সময়

রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা থাকলে এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।যাদের অ্যালার্জির প্রবণতা আছে তাদের বাসক পাতা থেকে অ্যালার্জি বা চর্মরোগ হতে পারে।শিশুদের জন্য বাসক পাতার ডোজ নির্ধারণ করা কঠিন এবং বয়স্কদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বেশি থাকতে পারে।তাই বাসক পাতা খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক, হোমিওপ্যাথ বা আধুনিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

বাসক পাতা বনাম অ্যালোপ্যাথি ওষুধ তুলনামূলক আলোচনা

Justicia adhatoda একটি প্রাচীন ভেষজ উদ্ভিদ যা প্রাকৃতিক উপায়ে কাশি, ঠান্ডা, শ্বাসকষ্ট এবং হাঁপানির মতো সমস্যার উপশমে ব্যবহৃত হয়। এতে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান ভাসিসিন শ্বাসনালীকে প্রশমিত করে এবং কফ বের হতে সাহায্য করে। বাসক পাতা ধীরে কাজ করলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কম এবং যথাযথ নিয়মে খাওয়া হলে দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না।

অন্যদিকে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ যেমন কাশির সিরাপ, অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিহিস্টামিন দ্রুত কাজ করে এবং তাত্ক্ষণিক আরাম দেয়। তবে এগুলো প্রায়ই ঘুম ঘুম ভাব, মাথা ঘোরা, অম্বল বা পেটের গ্যাসের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন সেবনের ফলে লিভার বা কিডনির ওপরও চাপ পড়ে।

তবে গুরুতর বা তীব্র সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি ও কার্যকর কারণ বাসক পাতা ধীর কাজ করে ও সীমিত ভূমিকা রাখে। তাই হালকা ও প্রাথমিক পর্যায়ের রোগে বাসক পাতা ভালো বিকল্প হলেও জটিল অবস্থায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যালোপ্যাথি গ্রহণ করা উচিত।

উপসংহার:বাসক পাতা কাশিতে কতটা উপকারী এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

বাসক পাতা কাশিতে কতটা উপকারী তা অবশ্য বোঝা যায় এর প্রাকৃতিক উপাদান যেভাবে কফ দূর করে আরাম দেয় তা থেকে।বাসক পাতা প্রকৃতির এক আশীর্বাদস্বরূপ বিশেষ করে কাশি ও শ্বাসজনিত সমস্যার জন্য। তবে যেকোনো ভেষজ উপাদানের মতোই এরও কিছু সীমাবদ্ধতা ও সতর্কতা রয়েছে। তাই অন্ধভাবে নয় বরং সচেতনভাবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাসক পাতা ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

বাসক একটি সহজলভ্য ও স্বল্পমূল্যের ভেষজ উপাদান যা ঘরোয়া চিকিৎসার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। তবে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।স্বাস্থ্যই জীবনের মূলধন।তাই সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন।বাসক পাতা নিয়ে আমার লেখাটির মাধ্যমে আশা করি আপনি basok pata kashite kotota upokari abong aro gunaboli somporke বিস্তারিত জেনেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন।ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url