ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন পণ্য মার্কেটিং কৌশল

ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন পণ্য মার্কেটিং কৌশল জানলে অনলাইন ব্যবসায় দ্রুত সফলতা অর্জন করা সম্ভব।ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার সহজ উপায় হলো ঘরে বসে একটি অনলাইন স্টোর তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার শুরু করা।ই-কমার্স ব্যবসায় পণ্য মার্কেটিং শুধু একটি অংশ না পুরো ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র।
ই-কমার্স- ব্যবসা- শুরুর- গাইডলাইন- পণ্য- মার্কেটিং- কৌশল


ভালো মানের পণ্য তৈরি,সংগ্রহ করা যতটা গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সঠিকভাবে সেই পণ্যের প্রচার করা।বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক অনলাইন মার্কেটে যেসব ব্যবসা ভালো মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে তারাই টিকে থাকে এবং লাভবান হয়।এই গাইডে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো কিভাবে আপনি আপনার ই-কমার্স পণ্য অনলাইনে ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলবেন এবং বিক্রি বাড়াবেন।

পেজসূচিপত্র:ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন পণ্য মার্কেটিং কৌশল

ই-কমার্স ব্যবসা কী ও কেন ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করবেন

ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন পণ্য মার্কেটিং কৌশল অনুযায়ী সঠিক পণ্য বাছাই এবং আধুনিক মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করলেই ব্যবসার বিক্রি ও লাভ দুইই বাড়ানো সম্ভব।E-Commerce মানে অনলাইনের মাধ্যমে কেনাবেচা করা।ইন্টারনেট ব্যবহার করে যখন কোনো পণ্য,সেবা বিক্রি করা হয় তখন তাকে ই-কমার্স ব্যবসা বলে।

আপনি যদি ঘরে বসে মোবাইল,কম্পিউটার ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করেন সেটাও একটি ই-কমার্স ব্যবসা।আজকের দিনে ফেসবুক পেইজ, ওয়েবসাইট, অনলাইন মার্কেটপ্লেস. অ্যাপের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করাকে ই-কমার্স ব্যবসা বলা হয়।পণ্যের ছবির মান, প্রোডাক্ট ডিসক্রিপশন, রিভিউ, ভিডিও, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এবং SEO সবকিছু মিলিয়ে তৈরি হয় একটি শক্তিশালী পণ্য মার্কেটিং কৌশল।

কেন ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করবেন

ই-কমার্স ব্যবসায় দোকান ভাড়া,কর্মচারী লাগেনা আপনি ঘরে বসেই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।এছাড়া গ্রাহক যেকোনো সময় অর্ডার করতে পারে কারণ অনলাইন দোকান কখনো বন্ধ হয় না।যদি মার্কেটিং ঠিকঠাক হয় আপনার পণ্য সারাদেশ সহ বিদেশেও বিক্রি করা সম্ভব।

Facebook, Google Ads, SEO ইত্যাদির মাধ্যমে সহজেই কাস্টমার পাওয়া সম্ভব।আপনি নিজের সময় অনুযায়ী কাজ করতে পারেন অফিস টাইমের কোনো ঝামেলা নেই।অনলাইন টুল ব্যবহার করে আপনি জানতে পারবেন কে কী চায়, কোন পণ্য বেশি বিক্রি হচ্ছে, প্রতিযোগীরা কী করছে।

সেজন্য একজন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনাকে জানতে হবে আপনার গ্রাহকরা কোন কোন ডিজিটাল চ্যানেলে বেশি সময় ব্যয় করে,কীভাবে তারা সিদ্ধান্ত নেয় এবং কী ধরনের কনটেন্ট তাদের আকর্ষণ করে।

ই-কমার্সে সঠিক মার্কেটিং না থাকলে কী ঘটে

ই-কমার্স ব্যবসার সফলতার মূল চাবিকাঠি হলো সঠিক মার্কেটিং।আপনি যতই ভালো পণ্য রাখুন,ভালো ওয়েবসাইট তৈরি করুন যদি সঠিক কাস্টমার পর্যন্ত পণ্য পৌঁছাতে না পারেন তাহলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।মার্কেটিং না থাকলে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে চলুন জানি।

মার্কেটিং না থাকলে মানুষ আপনার পণ্যের কথা জানবে না তাই ওয়েবসাইটে ট্রাফিকও কম থাকবে।ভিজিটর না আসলে বিক্রি ও লাভের কোনোটাই সম্ভাবনাও থাকে না।আপনি যদি ভালো মার্কেটিং করতে পারেন আপনার পণ্যের প্রতি মানুষের বিশ্বাস গড়ে উঠবে।


মার্কেটিং না করলে কেউ আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানতেও পারবেনা।সঠিক প্রচার না থাকায় নতুন কাস্টমার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে ফলে ব্যবসার বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে ও আপনি প্রতিযোগীদের পেছনে পড়ে যাবেন।বেশি বেশি পণ্য স্টক করে বিক্রি না হলে তা আপনার ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর তাই ডিজিটাল মার্কেটিং গুরুত্ব অপরিসীম।

সঠিক মার্কেটিং ছাড়া ই-কমার্স ব্যবসা সফল হওয়া প্রায় অসম্ভব।তাই আপনার পণ্য ও সেবা সঠিক গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার, SEO এবং বিজ্ঞাপন কার্যক্রম চালানো অপরিহার্য।

মার্কেটিং কৌশল নির্ধারণের আগে পণ্যের ধরন বুঝুন

ই-কমার্স ব্যবসায় সফল মার্কেটিং কৌশল গড়ে তুলতে প্রথমে আপনাকে পণ্যের ক্যাটাগরি বুঝতে হবে। কারণ পণ্যের ধরন অনুযায়ী গ্রাহকের চাহিদা, কেনার অভ্যাস, মূল্য নির্ধারণ এবং প্রচারের মাধ্যম ভিন্ন হতে পারে।সঠিক পণ্যের ধরন না জানা থাকলে ভুল মার্কেটিং কৌশল প্রয়োগের কারণে বাজেট ও সময় নষ্ট হতে পারে।

পণ্যের ধরন জানা থাকলে মার্কেটিং চ্যানেল বাছাই সহজ হয় যেমন বিলাসবহুল পণ্য প্রচারের জন্য ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ভালো কাজ করে,কিছু পণ্য বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বেশি বিক্রি হয়,পণ্যটি কার জন্য বাচ্চা, কিশোর, তরুণ, বড় বয়সী বা বিশেষ পেশাজীবী ইত্যাদি,দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য ফেসবুক,গুগল বিজ্ঞাপন বেশি কার্যকর।

পণ্যের ধরন বুঝলে সঠিক বিজ্ঞাপন বার্তা তৈরি করে গ্রাহকের মনের ভাষায় কথা বলা সহজ হয়।এমনকি কন্টেন্ট তৈরির জন্য, বিজ্ঞাপনের জন্য এবং অন্যান্য মার্কেটিং কার্যক্রমের জন্য বাজেট নির্ধারণ সহজ হয়।

সফল ই-কমার্স মার্কেটিং কৌশল গড়ে তুলতে পণ্যের ধরন ভালোভাবে বুঝে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।এর মাধ্যমে আপনি সঠিক গ্রাহককে টার্গেট করতে পারবেন, সঠিক চ্যানেল ব্যবহার করতে পারবেন এবং ব্যবসার লাভ বাড়াতে পারবেন।

টার্গেট কাস্টমার চিহ্নিত করা

ই-কমার্স ব্যবসায় সফলতা নির্ভর করে সঠিক গ্রাহকের হাতে সঠিক পণ্য পৌঁছে দেওয়ার উপর। আপনি যদি না জানেন আপনার পণ্য কার জন্য তাহলে বিজ্ঞাপন, কনটেন্ট,অফার কিছুই ফল দেবে না। এজন্য প্রয়োজন আপনার টার্গেট কাস্টমার চিহ্নিত করা।

টার্গেট কাস্টমার হলো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠী যারা আপনার পণ্য,সেবার সম্ভাব্য ক্রেতা।যারা আপনার পণ্যে আগ্রহী, প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেএবং ক্রয় করার মতো সামর্থ্য রাখে।

কীভাবে টার্গেট কাস্টমার চিহ্নিত করবেন

আপনার পণ্য কি তরুণদের,পুরুষ না মহিলা  জন্য নাকি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। যেমন ধরুন মেকআপ পণ্যের টার্গেট গ্রাহক প্রধানত নারী।আবার আপনার পণ্য যদি উচ্চ মূল্যের হয় তাহলে উচ্চ আয়ের শ্রেণিকে টার্গেট করতে হবে।

যদি কম দামের পণ্য হয় তাহলে মধ্য,নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য উপযোগী হবে।আপনার পণ্য কি শহরের মানুষের জন্য উপযুক্ত না গ্রামীণ অঞ্চলের জন্য।আবার লোকেশন অনুযায়ী ভাষা, রুচি, লাইফস্টাইল ভিন্ন হতে পারে।

আপনার পণ্য যদি সমস্যা সমাধান করে যেমন:হেয়ারফল শ্যাম্পু যাদের চুল পড়ে তারাই আপনার মূল টার্গেট।আপনার টার্গেট গ্রাহক ফেসবুকে বেশি থাকে নাকি ইনস্টাগ্রামে।তারা কী সার্চ করে, কী দেখে কিনে এইসব তথ্য Google Analytics,Facebook Audience Insight থেকে পাওয়া যায়।

টার্গেট মার্কেট নির্ধারণ করলে অপ্রয়োজনীয় লোককে আপনার বিজ্ঞাপন দেখানোর বদলে সঠিক ব্যক্তিকে দেখাতে পারবেন।আপনি গ্রাহকের ভাষায় কথা বলতে পারবেন।এছাড়া পণ্য তাদেরই দেখানো হয় যারা কিনতে পারে।

আপনি নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারবেন।আপনি যদি পণ্যের বাজারে সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে চান তাহলে অন্ধভাবে বিজ্ঞাপন না দিয়ে আগে ১টি টার্গেট কাস্টমার প্রোফাইল তৈরি করুন।এতে আপনার ই-কমার্স ব্যবসা আরও পরিকল্পিত ও লাভজনক হবে।

ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং ইউএসপি নির্ধারণ

ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন পণ্য মার্কেটিং কৌশল জেনে ই-কমার্স ব্যবসায় সফল হতে চাইলে শুধু পণ্য বিক্রি করলেই হবে না।আপনার ব্র্যান্ডকে মানুষের মনে গেঁথে দিতে হবে। এজন্য দরকার শক্তিশালী ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং স্পষ্ট USP।

ব্র্যান্ড ভ্যালু হলো ক্রেতাদের চোখে আপনার ব্র্যান্ডের মর্যাদা, আস্থা, এবং অনুভব। সহজভাবে বললে ব্র্যান্ড ভ্যালু সেই ভালো লাগা যাতে আপনার ক্রেতা বারবার আপনাকেই খোঁজে।উদাহরণ স্বরূপ Daraz মানেই বিশ্বাসযোগ্যতা,Apple মানেই প্রিমিয়াম টেকনোলজি তাইলে আপনার ব্র্যান্ড মানে কী হবে?

USP অর্থ Unique Selling Proposition অর্থাৎ আপনার পণ্যের এমন একটি বিশেষত্ব যা প্রতিযোগীদের থেকে আপনাকে আলাদা করে তোলে।যেমন:হাতের তৈরি অথেন্টিক হস্তশিল্প,২৪ ঘণ্টার মধ্যে হোম ডেলিভারি,১০০% প্রাকৃতিক এবং কেমিক্যালমুক্ত।

কীভাবে ব্র্যান্ড ভ্যালু নির্ধারণ করবেন

  • আপনার পণ্যের মূল বার্তা ঠিক করুন
  • পণ্যের বৈশিষ্ট্য তালিকাভুক্ত করুন
  • আপনার ব্যবসার উদ্দেশ্য ঠিক করুন
  • প্রতিযোগীদের USP যাচাই করুন
  • আপনি কী আলাদা অথবা উন্নত দিচ্ছেন তা নির্ধারণ করুন
  • একটি ছোট, পরিষ্কার, মনে থাকার মতো বাক্যে USP লিখুন
  • ওয়েবসাইট, প্রোডাক্ট পেজ, বিজ্ঞাপন সব জায়গায় USP ব্যবহার করুন
  • একটি নির্ভরযোগ্য ও মানুষের জন্য আপনার ব্র্যান্ড এর বন্ধুত্বপূর্ণ ইমেজ তৈরি করুন
  • সামাজিক মিডিয়া, প্যাকেজিং, ও কাস্টমার সার্ভিসে একই রকম টোন ও স্টাইল বজায় রাখুন
ধরুন আপনি যদি অনলাইন ক্যান্ডেল বিক্রেতা হন তবে আপনার USP হতে পারে:"হাতের তৈরি ফ্রেগ্র্যান্স ক্যান্ডেল-সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক,উপহার উপযোগী ডিজাইন সহ" এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু হতে পারে:"প্রতিটি ক্যান্ডেলই ভালোবাসা, যত্ন আর শান্তির প্রতীক"।


আপনার ব্যবসা যেন কেবল একটা পণ্যের দোকান না হয়ে একটি অনুভুতি,এক বিশ্বাসযোগ্যতা হয়ে ওঠে এটাই সফল ই-কমার্স ব্র্যান্ডের চাবিকাঠি। তাই শুরুতেই ব্র্যান্ড ভ্যালু ও USP ঠিক করুন এবং প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে ফুটিয়ে তুলুন।

প্রোডাক্ট লিস্টিং অপ্টিমাইজেশন

ই-কমার্স ব্যবসায় সফল হতে হলে শুধু ভালো পণ্য থাকলেই হবে না আপনার প্রোডাক্ট লিস্টিং কে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন সেটি সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় এবং ক্রেতাদের আকর্ষণ করে বিক্রি বাড়ে।

প্রোডাক্ট লিস্টিং অপ্টিমাইজেশন মানে হলো পণ্যের নাম, বর্ণনা, ছবি, প্রাইস, ক্যাটাগরি ইত্যাদি তথ্যগুলো SEO ও কাস্টমার ফ্রেন্ডলি করে সাজানো যাতে তা সার্চ ইঞ্জিন এবং ই-কমার্স মার্কেটপ্লেসে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় এবং ক্লিক ও বিক্রি বাড়ে।

প্রোডাক্ট লিস্টিং অপ্টিমাইজেশন এর মাধ্যমে গুগল ও ই-কমার্স সার্চে ভালো র‍্যাংক করা যায়,বেশি ভিজিটর টানা যায়,কাস্টমারের আস্থা বাড়ে,কনভারশন রেট বাড়ে,কমপিটিটরদের থেকে এগিয়ে থাকা যায়।

প্রোডাক্ট লিস্টিং অপ্টিমাইজ করাতে আপনাকে প্রোডাক্ট টাইটেল অপ্টিমাইজেশন এ স্পষ্ট, ছোট এবং তথ্যপূর্ণ শিরোনাম দিতে হবে।আপনাকে ব্র্যান্ড নাম, রঙ, সাইজ, প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য যুক্ত করে মূল কীওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।প্রোডাক্ট ডিসক্রিপশন SEO অনুযায়ী লিখুতে হবে।

পণ্যের ফিচার, উপকারিতা ও ব্যবহার, LSI কীওয়ার্ড ব্যবহার করে লিখতে হবে।আপনার পণ্যের বর্ণনা ৪-৫ লাইনের প্যারাগ্রাফে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করুন।সুবিধা বোঝাতে Bullet points ব্যবহার করুন,উচ্চ মানের প্রোডাক্ট ইমেজ দিন,ফ্রন্ট, ব্যাক, ক্লোজআপ একাধিক দিক থেকে জুমযোগ্য হাইরেজুলেশন ছবি ব্যবহার করুন।

প্রোডাক্ট ব্যবহারের লাইফস্টাইল ছবি দিন যেমন: মোমবাতি জ্বলছে এমন ছবি।সঠিক ক্যাটাগরি ও ট্যাগ নির্বাচন করুন।ট্যাগে পণ্যের ধরন, রঙ, ব্যবহার ইত্যাদি লিখুন।দাম ও ডিসকাউন্ট সঠিকভাবে দেখান,প্রতিযোগিতামূলক মূল্য দিন,ডিসকাউন্ট থাকলে তা আলাদা হাইলাইট করুন।

মূল্য মানে শুধু টাকা না কাস্টমার ভ্যালু বোঝাতে হবে।রিভিউ ও রেটিং বাড়াতে সন্তুষ্টভাবে ক্রেতাদের কাছে রিভিউ চেয়ে নিন।কারণ ভালো রেটিং থাকলে সেটি SEO এবং বিশ্বাসযোগ্যতা দুটোই বাড়াতে পারে।

আপনার পণ্যের গুণগত মান যতই ভালো হোক যদি আপনার লিস্টিং সঠিকভাবে সাজানো না থাকে তাহলে বিক্রির সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।তাই প্রতিটি লিস্টিং যেন SEO, ভিজ্যুয়াল এবং ব্যবহারকারীর দৃষ্টিকোণ থেকে অপ্টিমাইজ করা থাকে এটাই সফল ই-কমার্স ব্যবসার মেরুদণ্ড।

আকর্ষণীয় প্রোডাক্ট টাইটেল ও মেটা ডেসক্রিপশন লেখা

ই-কমার্স ব্যবসায় প্রতিটি পণ্যের টাইটেল ও মেটা ডেসক্রিপশন এমনভাবে তৈরি করতে হয় যেন তা কাস্টমারকে আকৃষ্ট করে ক্লিক করায়।আবার সার্চ ইঞ্জিনে র‍্যাংকেও সহায়তা করে।প্রোডাক্ট টাইটেল লেখার কৌশল হলো সংক্ষিপ্ত কিন্তু তথ্যবহুল,কীওয়ার্ডসহ,স্পষ্ট ও ব্র্যান্ড রিলেটেড,কাস্টমারের দৃষ্টিকোণ থেকে আকর্ষণীয়।যেমন :প্রোডাক্টের নাম - ব্র্যান্ড/গুণ-বৈশিষ্ট্য/রঙ/সাইজ।

অপরদিকে মেটা ডেসক্রিপশন হলো পণ্যের এমন একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা যা গুগল সার্চ অথবা মার্কেটপ্লেস সার্চে দেখা যায়।

মেটা ডেসক্রিপশন লেখার নিয়ম 

  • সর্বোচ্চ ১৫০-১৬০ অক্ষরের মধ্যে রাখুন
  • প্রোডাক্টের মূল উপকারিতা ও ব্যবহার যুক্ত করুন
  • Call to action  ব্যবহার করুন যেমন:এখনই অর্ডার করুন, ঘরে বসেই কিনুন
  • টার্গেট কীওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত করুন যেমন:অরগানিক টারমারিক সাবান, যা ত্বককে উজ্জ্বল করে ও দাগ হালকা করে। প্রতিদিনের ব্যবহারে ত্বক নরম ও প্রাণবন্ত থাকে।সীমিত স্টক,এখনই অর্ডার করুন
মেটা ডেসক্রিপশন লেখার সময় শুধুই পণ্যের নাম দিয়ে রাখা,কপি পেস্ট করা টেক্সট,ইংরেজি বাংলা মিলিয়ে এলোমেলো বানান,অতিরিক্ত কীওয়ার্ড ঠেসে দেওয়া এগুলো কাজ করবেন না।আপনার পণ্যের টাইটেল এবং মেটা ডেসক্রিপশন ইম্প্রেশন ঠিকভাবে না হলে কাস্টমার স্ক্রল করে পাশ কাটিয়ে যাবে। তাই এই দুটি অংশে মার্কেটিং কৌশল, ক্রিয়েটিভিটি ও SEO সঠিক ভাবে ব্যবহার করুন।

হাই-কোয়ালিটি পণ্যের ছবি এবং ভিডিও কনটেন্ট

ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন পণ্য মার্কেটিং কৌশল সঠিকভাবে অনুসরণ করলে একটি সফল অনলাইন ব্যবসা গড়ে তোলা সম্ভব।ই-কমার্সে ক্রেতা পণ্যের বাস্তব রূপ দেখতে পায় না তারা নির্ভর করে ছবি ও ভিডিও এর উপর।তাই আপনার বিক্রি বাড়াতে চাইলে পণ্যের উচ্চমানের ছবি ও ভিডিও কনটেন্ট অপরিহার্য।

হাই কোয়ালিটি কনটেন্ট হলে মানুষের আপনার পণ্যের প্রতি বিশ্বাস তৈরি হবে।পেশাদার ব্র্যান্ড ইমেজ গড়ে তোলবে।আপনার সাইটে ভিজিটরের সময় বাড়াবে ফলে বিক্রির হার বাড়বে।সোশ্যাল শেয়ারিং ও এনগেজমেন্ট বাড়বে।

পণ্যের ছবি তোলার নিয়ম

  • স্বচ্ছ আলোতে পরিষ্কার ও আলোকিত ছবি তুলুন।
  • সামনে থেকে, পাশ থেকে, পিছন থেকে, ক্লোজআপ, ইউজিং মোড বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করুন।
  • ছবিতে প্রোডাক্টের টেক্সচার, ম্যাটারিয়াল বোঝা জরুরি তাই জুম করলে যেন ডিটেইল বোঝা যায় এমন ছবি তুলুন।
  • ছবি রিসাইজ ,ক্রপ করুন কিন্তু কোয়ালিটি নষ্ট যেন না হয়।প্রয়োজন হলে CanvaAdobe Lightroom সহ ভালো মানের অ্যাপ দিয়ে এডিট করুন।
এছাড়া ভিডিও কনটেন্টের গুরুত্বও অনেক কারণ ভিডিওতে ক্রেতা পণ্যের ব্যবহার, সাইজ, কার্যকারিতা আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে।ভালো ভিডিও হলেপ্রোডাক্ট কিভাবে কাজ করে তা বোঝা যায় ফলে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।আবার রিলস, ইউটিউব, টিকটকে শেয়ার করা যায়।

কোন ধরনের ভিডিও বানাবেন

  • Unboxing ভিডিও প্যাকেজিং ও প্রথম ইমপ্রেশন
  • পণ্য কিভাবে কাজ করে তা দেখানো
  • ব্যবহার পদ্ধতি
  • সন্তুষ্ট কাস্টমারদের ফিডব্যাক মূলক
আপনার পণ্যের ছবি ও ভিডিও এমনভাবে তুলুন যেন একজন ক্রেতা ছবির মাধ্যমে পণ্যের গন্ধ ও স্পর্শও কল্পনা করতে পারে। কন্টেন্ট যত বেশি আকর্ষণীয় ও ইনফরমেটিভ হবে বিক্রিও তত বাড়বে।

প্রোডাক্ট রিভিউ ও গ্রাহক টেস্টিমোনিয়াল ব্যবস্থাপনা

একজন ক্রেতা যখন অনলাইনে কোনো পণ্য কিনতে চান তখন তিনি প্রথমেই অন্য গ্রাহকের মতামত কী তা দেখেন এ কারণেই রিভিউ ও টেস্টিমোনিয়াল ই-কমার্সে বিশ্বাসযোগ্যতা ও বিক্রি বাড়ানোর সবচেয়ে শক্তিশালী উপকরণ।
 
ক্রেতাদের রিভিউ ও টেস্টিমোনিয়াল নিলে নতুন ক্রেতার আস্থা বাড়ায়,SEOতে সাহায্য করে,Social Proof তৈরি করে,পণ্যের গুণগত মান প্রমাণ করে এমনকি কনভার্শনও বাড়ায়।

রিভিউ সংগ্রহের কৌশল

অর্ডার ডেলিভারির পর Follow up করুন।ইমেইল,ইনবক্সে মেসেজ দিন।ক্রেতাদের অনুরোধ করুন আপনার মতামত আমাদের জানালে খুশি হবো।ডিসকাউন্ট , কুপন অফার দিন।রিভিউ দিলে পরবর্তী কেনাকাটায় ৫% ছাড় দিন এতে গ্রাহক উৎসাহিত হবেন।

আপনার ওয়েবসাইটে সহজে রিভিউ লেখার,স্টার রেটিং,ফিডব্যাক ফর্ম অপশন রাখুন।বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে ফটো আপলোডের অপশন দিন।ফেসবুক পেইজে  Review Section চালু রাখুন এবং ফেক রিভিউ থেকে সতর্ক থাকুন।

প্রয়োজনে প্রকৃত রিভিউ কে পিন করে রাখুন।ভাল রিভিউ সংগ্রহ করে ছবি Before and After সহ ভিজ্যুয়াল টেস্টিমোনিয়াল তৈরি করুন।ফেসবুক,Instagram Reels এ ৫-৬ লাইনের Honest ফিডব্যাক ভিডিও টেস্টিমোনিয়াল তুলে ধরুন।

হোমপেজে What Our Customers Say সেকশন,পণ্যের নিচে রিভিউ ছবি দিতে পারেন।কাস্টমারের কোনো সমস্যা হলে প্রয়োজনে ইনবক্সে গিয়ে বিষয়টি সমাধান করুন।সমাধান শেষে গ্রাহকের কাছে অনুরোধ করুন যেন সে আপডেটেড ফিডব্যাক দেয়।

রিভিউ এবং টেস্টিমোনিয়াল কখনোই জোর করে নেবেন না।বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে হলে গ্রাহকের প্রকৃত অভিজ্ঞতা তুলে ধরুন। ভালো সার্ভিস দিন স্বাভাবিকভাবেই ভালো রিভিউ আসবে।

ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং কৌশল

বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী অধিকাংশ অনলাইন ব্যবহারকারী সময় কাটান ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে।তাই ই-কমার্স ব্যবসার সফলতার জন্য এই দুইটি প্ল্যাটফর্মে কার্যকর ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।

লক্ষ লক্ষ ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী বলে লক্ষ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায় ও সহজে ব্র্যান্ড পরিচিতি বৃদ্ধি করা সম্ভব।এছাড়া ইনবক্সে সরাসরি বিক্রির ও কাস্টমার এনগেজমেন্ট বাড়ানের সুবিধাও রয়েছে।

ফেসবুক মার্কেটিং কৌশল

আপনার একটি প্রোফেশনাল ফেসবুক পেইজ তৈরি করুন।পেইজের ব্র্যান্ড নাম ও লোগো দিন এবং পরিষ্কার Bio ও Contact Info,Shop ও Website বাটন যুক্ত করুন।সপ্তাহে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় পোস্ট করার কনটেন্ট প্ল্যান তৈরি করুন।

পণ্যের ছবি, ভিডিও, অফার ও কাস্টমার ফিডব্যাক শেয়ার করুন।ফেসবুক লাইভে এসে পণ্য ডেমো দিন।ফেসবুকে Boost & Ads Manager এ বয়স, এলাকা, আগ্রহ লক্ষ্যভিত্তিক অডিয়েন্স সেট করুন।টার্গেটিং সঠিক হলে কম বাজেটেও ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।

অটো রিপ্লাই সেট করুন সাথে  দ্রুত কমেন্ট ও ইনবক্সে সাড়া দেওয়ার চেষ্টা করুন।আপনার ব্যবসা চালানোর সুবিধার জন্য Business Suite ব্যবহার করুন।

ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং কৌশল

আপনার ব্যবসার Instagram Business Account খুলুন।ব্র্যান্ড নাম, লিঙ্ক ও হ্যাশট্যাগ যুক্ত করুন।Bioতে Call to Action দিন।ভিজ্যুয়ালি আকর্ষণীয় কনটেন্ট তৈরি করুন।High Quality পণ্যের ছবি পোস্ট করুন।নিয়মিত Reels ও Stories দিন।

Instagram Hashtag ব্যবহার করুন।আপনার ব্র্যান্ডের নিজস্ব হ্যাশট্যাগও চালু করতে পারেন।Instagram Influencer অথবা Micro Influencer যুক্ত করুন।আপনার পণ্যের রিভিউ করে পোস্ট করালে Trust বাড়বে।Local influencer নির্বাচন করুন যাদের রিলেভেন্ট ফলোয়ার রয়েছে।

কোন পোস্টে বেশি এনগেজমেন্ট হচ্ছে খেয়াল রাখতে ফেসবুক ইনসাইটস ও ইনস্টাগ্রাম অ্যানালাইটিক্স ব্যবহার করুন।সেই অনুযায়ী পরবর্তী কনটেন্ট কৌশল ঠিক করুন।ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম শুধু প্রচারের জায়গা না এগুলো হলো ক্রেতার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার শক্তিশালী মাধ্যম।বিশ্বাস, এনগেজমেন্ট এবং ভিজিবিলিটি বাড়াতে প্রতিদিন কিছু সময় ব্যয় করুন। ধীরে ধীরে এর ফলাফল আপনাকে অবাক করবে।

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং কীভাবে কাজ করে

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং দুনিয়ায় এক শক্তিশালী কৌশল।আপনি যদি অনলাইনে পণ্য বিক্রি করেন তাহলে একটি প্রভাবশালী ইনফ্লুয়েন্সারের মাধ্যমে খুব সহজেই আপনার প্রোডাক্ট হাজারো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন।

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হলো এমন এক মার্কেটিং পদ্ধতি যেখানে কোনো জনপ্রিয় ব্যক্তি তার অনুসারীদের মাঝে কোনো পণ্য,ব্র্যান্ডের প্রচার করে।এই ইনফ্লুয়েন্সার হতে পারেফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম কন্টেন্ট ক্রিয়েটর,ইউটিউবার,টিকটকে জনপ্রিয়।

পণ্যের ধরন অনুযায়ী সঠিক ইনফ্লুয়েন্সার নির্বাচন করুন।যেমন: বিউটি প্রোডাক্ট হলে বিউটি ব্লগার।ফুড আইটেম হলে ফুড রিভিউয়ার।অনেকে শুধু ফ্রি প্রোডাক্ট পেলেই প্রমো করে দেয় আবার কেউ নির্ধারিত চার্জ রাখে।ইনফ্লুয়েন্সারের রিভিউ  ভিডিও,রিলস পোস্ট করলেHonest Review,Experience শেয়ার করুন।

সেই কনটেন্ট দেখে ফলোয়াররা আগ্রহী হবে।Engagement ও বিক্রি বাড়ে এবং আপনার পণ্যের উপর ভরসা তৈরি হবে।আপনার পণ্যের উপর ভিত্তি করে মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্সার বেছে নিন। তারা সাধারণত বেশি আন্তরিক এবং কম খরচে ভালো রেজাল্ট দিতে পারে।

ডিসকাউন্ট, অফার ও লিমিটেড টাইম ডিলের কৌশল

অনলাইন ব্যবসার সাফল্যে এককালীন আকর্ষণীয় প্রোডাক্টই যথেষ্ট না সঠিক সময়ে ডিসকাউন্ট ও অফার ব্যবহার করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাস্টমারের মন জয় করতে ও বিক্রি বাড়াতে লিমিটেড টাইম ডিল অত্যন্ত কার্যকর কৌশল।


ডিসকাউন্ট ও অফার দিলে কাস্টমারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।ওয়েবসাইট,সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাফিক বাড়াতে সাহায্য করে।পুরোনো,সিজনাল স্টক দ্রুত সেল হয়।কাস্টমারের মধ্যে fear of missing out তৈরি হয় ফলে দ্রুত কিনতে আগ্রহী হয়।এছাড়া নতুন কাস্টমার আকর্ষণ ও লয়াল কাস্টমার ধরে রাখা সহজ হয়।

ঈদ,পূজা,নিউ ইয়ার,ইভেন্ট অফার আইডিয়া,নিউ প্রোডাক্ট লঞ্চ,উইন্টার/সামার সেল,জন্মদিন/বার্ষিকীলয়াল কাস্টমারের জন্য কুপন এই সময় গুলোতে অফার দিলে সেরা ফল পাওয়া যায়।

লিমিটেড টাইম ডিল কৌশল

"শুধু আজকের জন্য"এই বাক্যটাই অনেককে কিনতে বাধ্য করে। ২৪ ঘণ্টার ফ্ল্যাশ সেল,Midnight Madness অফার রাত ১২টা পর্যন্ত,Countdown Timer যুক্ত করে প্রোডাক্ট পেইজে চাপ সৃষ্টি,সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে অফার যেমন ফ্রাইডে ফেস্ট,১ম ৫০ জন ক্রেতার জন্য অফার কৌশল ।

ডিসকাউন্ট অফার Facebook Ad,Instagram Story,ইমেইল মার্কেটিং,ওয়েবসাইট ব্যানার প্রচারের চ্যানেলের মাধ্যমে।অথবা আগ্রহী গ্রাহকদের সরাসরি WhatsApp,Messenger অফার পাঠাতে পারেন।

ইমেইল মার্কেটিং কৌশল এবং কাস্টমার ধরে রাখার উপায়

একবার গ্রাহককে পণ্য বিক্রি করেই থেমে গেলে চলবে না। একজন সফল ই-কমার্স উদ্যোক্তার প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ক্রেতাকে দীর্ঘদিন ধরে রাখা ও বারবার বিক্রি করা।আর এই কাজে ইমেইল মার্কেটিং অত্যন্ত কার্যকর একটি মাধ্যম।

ইমেইল মার্কেটিং হলো গ্রাহকদের সাথে ইমেইলের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করার কৌশল। এতে আপনি নতুন অফার, পণ্যের আপডেট, কুপন কোড,ইনফরমেশন পাঠিয়ে তাদের সক্রিয় রাখতে পারেন।

ইমেইল মার্কেটিং কৌশলসমূহ

নতুন সাবস্ক্রাইবার,ক্রেতাকে স্বাগত জানিয়ে একটি পেশাদার ওয়েলকাম ইমেইল পাঠাতে পারেন।নিয়মিত পণ্যের আপডেট, টিপস ও অফার শেয়ার করুন নিউজলেটার পাঠানোর মাধ্যমে,যাঁরা পণ্য যোগ করেও  কেনেন নি তাদের স্মারণ করে দিন।পুরাতন,নিষ্ক্রিয় কাস্টমারদের আবার সক্রিয় করতে অফার,নোটিফিকেশন পাঠান।

কাস্টমারের নাম, আগ্রহ, পূর্বের অর্ডার অনুযায়ী সাজানো পার্সোনালাইজড ইমেইল পাঠান।কাস্টমার ধরে রাখাতে অর্ডার, ডেলিভারি ও রিটার্নে উন্নত কাস্টমার সার্ভিস সহায়তা দিন।ক্যাশব্যাক,ফ্রি ডেলিভারি দিন।কাস্টমারের ফিডব্যাক নিন এবং আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? এমন প্রশ্ন করে বিশ্বাস অর্জন করুন।

জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী মতো বিশেষ দিনের শুভেচ্ছা ও অফার  ডিসকাউন্ট দিন।ইমেইল মার্কেটিং হলো ই-কমার্স ব্যবসার প্রাণ।যারা কিনেছেন তারা আবারও কিনতে পারেন শুধু তাদের সাথে সম্পর্কটা ধরে রাখতে হবে। আর সেটা হয় নিয়মিত অর্থবহ ইমেইল দিয়েই।

রিমার্কেটিং ও রিটার্গেটিং অ্যাড কৌশল

অনেক সময় একজন ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটে ঢুকে পণ্য দেখেন কিন্তু কেনেন না। আপনি কি জানেন এই আধাইচ্ছুক কাস্টমারদের আবার টার্গেট করা যায়।এটিই হলো রিমার্কেটিং ও রিটার্গেটিং কৌশল যা ই-কমার্সে বিক্রি বাড়ানোর অন্যতম কার্যকর উপায়।

রিমার্কেটিং মূলত ইমেইল, SMSএর মাধ্যমে আগের কাস্টমারদের,ভিজিটরদের আবার যোগাযোগ করা।রিটার্গেটিং বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আগের ওয়েবসাইট ভিজিটরদের পুনরায় আকৃষ্ট করা যেমন: Facebook,Google অ্যাড।ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন পণ্যে মার্কেটিং কৌশল উপযুক্ত পণ্যের নির্বাচন এবং লক্ষ্যভিত্তি  একটি স্থায়ী ও লাভজনক অনলাইন ব্যবসার মজবুত ভিত্তি তৈরি করে।

এই কৌশলে কাজ করতে আপনার ওয়েবসাইটে ট্র্যাকিং কোড।যেসব ভিজিটর কোনো প্রোডাক্ট দেখেছেন শপিং কার্টে অ্যাড করেছেন কিন্তু কেনেননি তাদের তথ্য ধরে রাখুন।তারপর সেই কাস্টমারদের নির্দিষ্টভাবে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দেখান।যেসব গ্রাহক ওয়েবসাইটে এসে চলে গেছেন তাদের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপনার প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দেখান।

বিশেষ ডিসকাউন্ট, অফার কিংবা আপনার দেখা পণ্যটি এখন ডিসকাউন্টে এমন বার্তা পাঠান।নতুন কাস্টমার পাওয়ার চেয়ে আগের আগ্রহী কাস্টমারকে ফেরানো অনেক সহজ।সঠিক রিটার্গেটিং অ্যাডে আপনি কম খরচে বেশি বিক্রি করতে পারবেন।

মার্কেটিং অ্যানালিটিক্স ও রিপোর্টিং

মার্কেটিং অ্যানালিটিক্স হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনি আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং কার্যক্রমের ফলাফল বিশ্লেষণ করে।যেমন কোন প্ল্যাটফর্মে বেশি বিক্রি হচ্ছে,কোন কন্টেন্ট বেশি এনগেজমেন্ট পাচ্ছে কিংবা কোন বিজ্ঞাপন সবচেয়ে বেশি কনভার্সন দিচ্ছে।

সঠিক রিপোর্টিং আপনাকে কী ধরনের কনটেন্ট কাস্টমারদের বেশি আকর্ষণ করে বুঝতে সাহায্য করে।গুগল, ফেসবুক, ইমেইল কোন সোর্স থেকে বেশি ট্রাফিক আসছে।কোন অফার,ক্যাম্পেইন বেশি কনভার্সন আনছে।আপনার বিনিয়োগে লাভ হচ্ছে নাকি ক্ষতি এসব তথ্য আপনাকে দিয়ে সাহায্য করবে।

কোন কোন টুল ব্যবহার করবেন

Google Analytics ওয়েবসাইটে কে আসছে, কোথা থেকে আসছে, কতক্ষণ থাকছে তা বুঝায়।Google Search Console কোন কিওয়ার্ডে আপনার সাইট র‍্যাংক করছে তা জানতে পারবেন।Meta Ads Manager ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম বিজ্ঞাপনের ফলাফল বিশ্লেষণ করবে।

ভালো ফল পেতে প্রতি সপ্তাহ,মাসে একবার মার্কেটিং রিপোর্ট তৈরি করুন।ডেটা দেখে ভবিষ্যতের মার্কেটিং কৌশল ঠিক করুন।যা কাজ করছে না তা বন্ধ করে অন্য অপশন চেষ্টা করুন।গ্রাফ ও চার্ট ব্যবহার করে সহজে বোঝার মতো রিপোর্ট তৈরি করুন।

মার্কেটিং অ্যানালিটিক্স এমন এক অস্ত্র যা আপনাকে শুধু অন্ধভাবে বিজ্ঞাপন না চালিয়ে তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।যে যত বেশি বিশ্লেষণ করতে পারে তার ব্যবসা তত দ্রুত এগোবে।

ভুল মার্কেটিং কৌশলগুলো এবং কীভাবে এড়াবেন

ই-কমার্স ব্যবসায় সফল হতে হলে শুধু মার্কেটিং করলেই চলবে না বরং সঠিকভাবে এবং সময়োচিত কৌশলে মার্কেটিং করতে হয়।অনেকেই না জেনে,না বুঝে এমন কিছু ভুল করেন যা বিক্রির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

এখানে উল্লেখযোগ্য কিছু সাধারণ ভুল এবং তা এড়ানোর উপায় সম্পর্কে আসুন জানি।অনেকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, গুগল, ইউটিউব সব প্ল্যাটফর্মে একসাথে বিজ্ঞাপন চালাতে চান এতে বাজেট ছড়িয়ে যায় কিন্তু ফল মেলে না।সব প্ল্যাটফর্মে একসাথে মার্কেটিং করার চেষ্টা না করাই ভালো।

শুরুতে ১-২টি প্ল্যাটফর্মে ফোকাস করুন।যেখানে টার্গেট কাস্টমার বেশি সেখানে প্রাধান্য দিন।পর্যবেক্ষণ করে পরে অন্য প্ল্যাটফর্মে সম্প্রসারণ করুন।মার্কেটিং করার আগে টার্গেট অডিয়েন্স না বুঝে সবার জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করলে আসলে কারোর কাছেই ঠিকমতো পৌঁছায় না।

তাই বয়স, পেশা, অবস্থান, আগ্রহ ইত্যাদির ভিত্তিতে কন্টেন্ট ও বিজ্ঞাপন তৈরি করুন।প্রোডাক্টের Unique Selling Proposition স্পষ্ট না করে অনেকে শুধু "ভালো পণ্য", "সেরা মান" এমন সাধারণ শব্দ ব্যবহার করেন যা কাস্টমারকে আগ্রহী করে না।

পণ্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য,সুবিধা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরুন।আপনার ব্র্যান্ড কেন আলাদা সেটা বোঝান।প্রোডাক্ট লিস্টিংয়ে ভুল বানান, কম তথ্য, খারাপ ছবি থাকলে কাস্টমার চলে যায়।তাইSEO ফ্রেন্ডলি টাইটেল, মেটা ট্যাগ, ডিসক্রিপশন লিখুনও  হাই-কোয়ালিটি ছবি, ভিডিও ও রিভিউ যোগ করুন।

Google Ads Tag ব্যবহার করে রিমার্কেটিং করুন যাতে যাদের আগ্রহ ছিল তাদেরকে অফার দিয়ে ফিরিয়ে আনা যায়।রেজাল্ট না দেখেই একই কৌশল না চালিয়ে প্রতি ৫-৭ দিনের রিপোর্ট দেখুন যা কাজ করছে না তা বদলান।

ই-কমার্সে সফল হতে হলে শুধু খরচ করলেই হবে না বুঝেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে।ভুলগুলো আগে থেকেই জানলে ব্যবসার গতি ধীর হবে না বরং আরও বাড়বে।ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন পণ্য মার্কেটিং কৌশল মিলেই একটি টেকসই ও লাভজনক অনলাইন ব্যবসা গড়ে তোলার পথ তৈরি করতে পারে।

লেখকের পরামর্শ:ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন পণ্য মার্কেটিং কৌশল

ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন পণ্য মার্কেটিং কৌশল অনুসরণই অনলাইন ব্যবসায় টিকে থাকা ও সফলতার জন্য পরিকল্পিতভাবে শুরু এবং ধারাবাহিকভাবে স্মার্ট মার্কেটিং হলো মূল চাবিকাঠি।প্রথমে নিজের ব্র্যান্ড ভ্যালু ও টার্গেট অডিয়েন্স নির্ধারণ করা জরুরি।

এরপর সঠিক প্ল্যাটফর্ম বেছে নিয়ে ধাপে ধাপে কনটেন্ট তৈরি, রিভিউ সংগ্রহ, ইনফ্লুয়েন্সার ও সোশ্যাল মিডিয়া কৌশল প্রয়োগ করলে বিক্রি আসবে ইনশাআল্লাহ।তবে ভুল কৌশল এড়িয়ে সঠিক মার্কেটিং অ্যানালিটিক্স ও গ্রাহকের মন বুঝে এগোলে আপনার ই-কমার্স ব্র্যান্ড একদিন বড় নাম হতে সাহায্য করবে।সেজন্য সফলতার জন্য ধারাবাহিকতা ও বিশ্লেষণ এই দুটি অস্ত্র সবসময় হাতে রাখতে হবে।ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url