হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া
আমাদের ব্যস্ত জীবন,অর্থনৈতিক টানাপোড়ন, সম্পর্কের জটিলতা ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা
দিন দিন আমাদের হতাশা ও দুশ্চিন্তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।আল্লাহর কাছে হতাশা ও
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া,মাথা থেকে বাজে চিন্তা দূর করার দোয়া আমাদের
মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে।
দুশ্চিন্তা শুধু আমাদের মনকেই নয় দেহকে অক্ষম করে তোলে।আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা
ও বিশ্বাস রেখে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এমন বহু দোয়া ও আমল রয়েছে যা হতাশা ও
দুশ্চিন্তার সময়ে পড়লে অন্তরে প্রশান্তি আনে আল্লাহর রহমতের দ্বারা।এই লেখায় আমরা
এমন কিছু সহিহ দোয়া তুলে ধরার চেষ্টা করবো যা আপনার মনকে প্রশান্ত করতে সাহায্য
করবে ইনশাল্লাহ।
পেজসূচিপত্র:হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া
মাথা থেকে বাজে চিন্তা দূর করার দোয়া
শয়তানের কুমন্ত্রণা,ধোঁকা, ক্ষতি,বাজে চিন্তা থেকে নিরাপদ থাকতে আমাদের অবশ্যই
সবসময় আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত।শয়তান থেকে বাঁচার দোয়া বেশি বেশি
পড়া উচিত।শয়তান থেকে বাঁচার দোয়া:আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির
রাজীম।অর্থ:আমি আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
সারাদিন শয়তান থেকে বাঁচার দোয়া যা নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) আরো একটি দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন।দোয়াটি হলো:আউজু বিল্লাহিল আজিম ওয়া
বিউয়াঝহিল কারিম, ওয়া সুলত্বানিহিল কাদিমি মিনাশ শাইত্বানির রাঝিম।অর্থ :আমি
মহান আল্লাহর কাছে,তাঁর মহানুভব চেহারার কাছে, তাঁর অনাদি অনন্ত কর্তৃত্বের
কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই।
এছাড়া একজন মানুষ তার আশেপাশের পরিবেশ দ্বারাও গভীরভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে।যখন
কেউ নেককার ও আল্লাহভীতির আলোয় ঘেরা পরিবেশে বসবাস করে তখন তার অন্তর পরিষ্কার
থাকে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা দুর্বল হয়ে পড়ে। নেকের পরিবেশ মানুষকে নামাজ,
কুরআন তিলাওয়াত, ভাল কথা বলা ও গোনাহ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে থাকে।
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তেন
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য আপনাকে নিয়মিত ৫ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সহ আল্লাহর
দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ভালো
হয়।বিশ্বনবী (সা.) কে যখন দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরতো তখন তিনি ইয়া হাইয়ু, ইয়া
কাইয়্যুম বিইরাহমাতিকা আস্তাগীস পড়তেন।
এছাড়া সবসময় আস্তাগফিরুল্লাহ ও দরুদ পড়া।মহানবী (সা.) বলেছেন যে সবসময়
ইস্তেগফারের সাথে লেগে থাকে আল্লাহর তাকে কোনো বিপদে আটকান না এবং
দুশ্চিন্তা দুর হয়।এছাড়া কুরআনে এমন একটি আয়াত রয়েছে যা প্রতিদিন সকাল ও
সন্ধ্যায় সাতবার পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা সেই দিন ও রাতের সমস্ত দুশ্চিন্তা ও
কষ্ট দূর করে দেন।
দোয়াটি:হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হু, আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়া হুয়া
রাব্বুল আরশিল আযীম।অর্থ:আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য
নেই। আমি তাঁরই ওপর ভরসা করি, আর তিনি মহা আরশের মালিক।
বিপদে পড়লে কোন সূরা পড়তে হয়
কঠিন বিপদে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ৩টি আমল নিজের জন্য করতে থাকুন ইনশাআল্লাহ
আল্লাহ আপনাকে এমনভাবে উদ্ধার করবে আপটি অবাক হয়ে যাবেন।হযরত ইউনুস (আ.) একটি
মাছের পেটে গভীর অন্ধকার, গভীর সমুদ্র এবং একাকী ছিলেন।
সেই নির্জন জায়গায় তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া ইউনুস পাঠ করেছিলেন:লা ইলাহা
ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ্জালিমিন।আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল
করেন এবং তাকে মুক্তি দেন।নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিপদে
পড়লে বেশি বেশি দোয়া ইউনুস পাঠ করতে বলেছেন।
দ্বিতীয় আমলটি হলো ইস্তেগফার।নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন সবসময় ইস্তেগফার পড়লে আল্লাহ’তালা কঠিন কঠিনবিপদ থেকে
এমনভাবে পথ দেখাবে যে সে নিজেও কল্পনা করতে পারবে না।
৩নাম্বার দরূদ।হাদিসে আছে যে ব্যক্তি বেশি বেশি দরূদ পাঠ করবে ঐ ব্যক্তির
সমস্ত পেরেশানি আল্লাহ’তালা দূর করবেন।
ভয় পেলে কোন সূরা পড়তে হয়
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত নবী করিম (সা.) বিপদেরসময় এই দোয়া পাঠ করতেন।
(সহিহ বুখারি)উচ্চারণ :লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আযিমুল হালিম। লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আযিম।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদ্বি ও রাব্বুল আরশিল
কারিম।
অর্থ : মহান ও মহা ধৈর্যশীল আল্লাহ ছাড়া সত্যই কোনো উপাস্য নেই। মহান আরশের
রব আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই। আসমান ও জমিনের রব এবং মহান আরশের রব
আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই।
অন্যের বিপদে কোন দোয়া পড়তে হয়
আমরা অনেক সময় রাস্তায়,হাসপাতালে,কারো জীবনে বিপদ, কষ্ট অবস্থায় দেখে হতবাক হয়ে
যাই। ইসলাম আমাদের শুধু অনুভব করতে নয় বরং সেই মুহূর্তে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা
ও আশ্রয় চাওয়ার দোয়া শিখিয়েছে।
প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মানুষকে কষ্টে,
বিপদে, দুঃখে, শারীরিক সমস্যায় দেখলে তিনি এই আমাদের এই দোয়াটি পড়তে
বলেছেন।দোয়াটি:আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আফানি মিম্মাবতালাকা বিহি, ওয়া
ফাদ্দালানি আলা কাছিরিম মিম্মান খালাকা তাফদিলা।
অর্থ:সকল প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য, যিনি তোমাকে বিপদ দ্বারা পরীক্ষায় ফেলেছেন,
তা থেকে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং তার সৃষ্টির অনেকের ওপর আমাকে অধিক সম্মানিত
করেছেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত প্রিয় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যদি কেউ কোনো
বিপদগ্রস্ত, রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখে উক্ত দোয়া পাঠ করে তবে সে একই
বিপদ,রোগে আক্রান্ত হবে না।(তিরমিজি)
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির দোয়া কি
স্মৃতিশক্তি আল্লাহর এক অমূল্য নিয়ামত। দোয়া, আমল, ও হালাল উপায়ে জীবন
পরিচালনার মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি রক্ষা করা সম্ভব।স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য কিছু
দোয়া, সূরা ও আমল রয়েছে যেগুলো নিয়মিত আমল করলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের স্মৃতি
ও জ্ঞান উজ্জ্বল করে দেন। মেধা,মনোযোগ ও উন্নত হয়।
উচ্চারণ :রব্বি জিদনি ইলমা। অর্থ :হে আমার প্রতিপালক, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি
করো(ত্বা-হা : ১১৪)।নিয়মিত দোয়া, অধ্যবসায় ও পাপ থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে
স্মৃতিশক্তি বাড়ে।যিনি পাপ করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তাঁর অন্তর অন্ধকারে
ঢেকে যায় এবং ধীরে ধীরে তাঁর স্মরণশক্তি ক্ষীণ হতে থাকে।পাপের কারণে
স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পরে।
লেখকের শেষ মন্তব্য:হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া
হতাশা ও দুশ্চিন্তা আমাদের মানসিক শান্তি নষ্ট করে দেয় সাথে আত্মবিশ্বাস নষ্ট
করে দেয়। কিন্তু একজন মুমিন কখনোই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় না।প্রতিটি কষ্ট,
দুশ্চিন্তা ও হতাশার বিপরীতে রয়েছে বাণী এবং প্রভাবশালী দোয়া।
তাই হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া নিয়মিত পাঠ করার চেষ্টা করুন।
আমাদের উচিত সব ধরনের মানসিক চাপ ও হতাশার মুহূর্তে আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া
এবং কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো নিয়মিত পাঠ করা।ভালো থাকবেন।ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url