মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে খেলে কি হয় তা সম্পর্কে আপনি কি
জানেন?প্রাচীনকাল থেকেই প্রাকৃতিক ভেষজ উদ্ভিদগুলোর মধ্যে মরিঙ্গা অন্যতম এবং
বর্তমানে পুষ্টিতে ও আয়ুর্বেদিক চর্চায় বেশ আলোড়ন
তুলেছে।অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি
ফাইটোকেমিক্যাল সবকিছু মিলিয়ে মরিঙ্গাকে সুপারফুডই বলা চলে।
কিন্তু সুপারফুড বললেইতো আর কাজ শেষ হয় না।সঠিক মাত্রা, সঠিক সময়, এবং
নির্দিষ্ট সতর্কতা মেনে না চললে উপকারের বদলে অপকারও হতে পারে।চলুন এই লেখাটির
মাধ্যমে আমরা মরিঙ্গা পাউডারের উপকারিতা, মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার সঠিক
নিয়ম,পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং মরিঙ্গা পাউডার সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
পেজ সূচিপত্র:মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- মরিঙ্গা পাউডার কি
- মরিঙ্গা পাউডার পাতার পুষ্টিগুণ
- মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার সঠিক নিয়ম
- মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার উপকারিতা
- মরিঙ্গার ৫টি সহজ ও জনপ্রিয় কিছু রেসিপি
- মরিঙ্গা পাউডার কাদের জন্য উপকারী
- বাচ্চাদের জন্য মরিঙ্গা
- মরিঙ্গা পাউডারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য মরিঙ্গা পাউডার
- বাড়িতে মরিঙ্গা পাউডার তৈরির উপায়
- মরিঙ্গা পাউডার কোথায় পাওয়া যায় ও দাম
- লেখকের শেষ মন্তব্য:মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
মরিঙ্গা পাউডার কি
Moring khawar sothik niyom এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকা
জরুরি।মরিঙ্গাকে বাংলাদেশে সজনে বলা হয়।মরিঙ্গা বা সজনে গাছ একটি ভেষজ উদ্ভিদ যা
আয়ুর্বেদিক ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।নিয়মিত মরিঙ্গা পাউডার খেলে
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং
দেহে শক্তি ফিরাতে সাহায্য করে আসে।সজনে ডাটা সবজি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, রক্তচাপ কমানো, হজমে সহায়তা এবং ত্বক ও চুলের
স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী।বর্তমানে মরিঙ্গা পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে মরিঙ্গা
পাউডার বানিয়ে ব্যবহার করছে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের জন্য মরিঙ্গা একটি
প্রাকৃতিক ও নিরাপদ সুপারফুড।
মরিঙ্গা পাতার পুষ্টিগুণ
মরিঙ্গা পাউডার যা সজনে পাতার গুঁড়া নামেও পরিচিত এবং এটি একটি প্রাকৃতিক
ও পুষ্টিগুণে ভরপুর সুপারফুড।এটির মধ্যে দেহের প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের
ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে।চলুন মরিঙ্গা পাউডারে প্রধান যে পুষ্টি্উপাদান রয়েছে
তা সম্পর্কে জানি।
পুষ্টিউপাদান | কার্যকারিতা |
---|---|
ভিটামিন A | চোখের সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় |
ভিটামিন B1 | স্নায়ুতন্ত্র ও শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে |
ভিটামিন B2 | ত্বক, চুল ও চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে |
ভিটামিন B3 | হজমে সহায়তা করে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে |
ভিটামিন C | ঠান্ডাসর্দি প্রতিরোধ করে,ত্বক উজ্জ্বল রাখে |
ভিটামিন E | ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে |
প্রোটিন | শরীর গঠনে সহায়তা করে এবং পেশির শক্তি বাড়ায় |
ফাইবার | হজমে সাহায্য করে কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় |
ক্যালসিয়াম | হাড় ও দাঁতের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ |
আয়রন | রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে রক্তশূন্যতা কমায় |
পটাসিয়াম | হৃদপিণ্ড ও পেশির কার্যকারিতা ঠিক রাখে |
ম্যাগনেসিয়াম | স্নায়ুতন্ত্র, হাড় ও হৃদযন্ত্রের সহায়তা করে |
জিংক | রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে |
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট | কোষের ক্ষয় রোধ করে, বার্ধক্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে |
অ্যামিনো অ্যাসিড | শরীরের জন্য শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে |
মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার সঠিক নিয়ম
মরিঙ্গা পাউডার যা সজনে পাতার গুঁড়ো নামে পরিচিত এটি একটি প্রাকৃতিক সুপারফুড
হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। তবে এর উপকার পেতে হলে মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার সঠিক
নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুত
চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।মরিঙ্গা পাউডার খালি পেটে খাওয়া শরীরের জন্য অত্যন্ত
উপকারী কারণ এই সময়ে শরীর দ্রুত পুষ্টি শোষণ করতে পারে।যেমন সকালে খালি পেটে এবং
বিকেলে হালকা নাস্তার পরে।
প্রথম দিকে অল্প পরিমাণে হাফ চা চামচ দিয়ে শুরু করা ভালো এবং পরিমাণ ধীরে ধীরে
বাড়াতে হবে।এক সপ্তাহ পর এই পরিমাণ ১ থেকে ২ চা চামচ পর্যন্ত বাড়ানো যেতে
পারে।খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট কিছু না খাওয়াই ভালো যেন মরিঙ্গার উপাদানগুলো
ভালোভাবে কাজ করতে পারে ।
তবে যারা হরমোন, রক্তচাপ বা থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন তারা খালি পেটে খাওয়ার আগে
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিয়মিত খালি পেটে মরিঙ্গা পাউডার খেলে রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ে, হজমশক্তি ভালো হয় এবং দেহে সতেজ হয়।মরিঙ্গা পাউডার প্রতিদিন
খাওয়ার পরিমাণ নির্ভর করে বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং অভ্যাসের ওপর। সাধারণত
প্রাপ্তবয়স্ক একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন ১ থেকে ২ চা চামচ মরিঙ্গা পাউডার খেতে
পারবে।
মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার উপকারিতা
মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ।মরিঙ্গা প্রাকৃতিক পুষ্টিবহুল উপাদান যা বহু রোগ প্রতিরোধ করতে
সাহায্য করে। মরিঙ্গার পুষ্টিউপাদান ভিটামিন A, B,C, E, ক্যালসিয়াম, আয়রন,
পটাসিয়াম ও প্রোটিন শরীরের প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণে সাহায্য করে।নিয়মিত
মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।এমনকি মরিঙ্গা
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য সংক্রমণ থেকেও রক্ষা করে।
এছাড়াও এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে ফলে ডায়াবেটিস
রোগীদের জন্য এটি খুবই উপকারী। মরিঙ্গা পাউডারে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস হজম
শক্তি বাড়ায়।যা আপনার ত্বক উজ্জ্বল করতে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে
সাহায্য করে। মরিঙ্গা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে হৃদরোগের ঝুঁকি
কমায়। এছাড়াও মরিঙ্গা লিভার পরিষ্কার করে এবং শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমতে বাধা
দেয়।
আরোও পড়ুন:ত্বকের যত্নে থানকুনি পাতার ব্যবহার।প্রাকৃতিক ঘরোয়া সমাধান
নারীদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী কারণ এটি হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে
সাহায্য করে এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। শরীর সতেজ
রাখতে, মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে এবং ক্লান্তি দূর করতে মরিঙ্গা পাউডার বেশ
কার্যকর। তবে সঠিক পরিমান এবং সঠিক নিয়মিত অনুযায়ী না খেলে উপকারিতার চাইতে
ক্ষতিও হতে পারে।
মরিঙ্গার ৫টি সহজ ও জনপ্রিয় কিছু রেসিপি
সজনে গাছের পাতা বা মরিঙ্গা যে নামেই ডাকুন না কেন এর পুষ্টিগুণ এত বেশি যে একে
"ম্যাজিক ট্রি" পর্যন্ত বলা হয়ে থাকে। মরিঙ্গা পাউডার বা তাজা পাতা দুটিই সহজে
রান্নায় ব্যবহার করা যায়। এবং স্বাদ ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন।চলুন পাঁচটি সহজ ও
জনপ্রিয় রেসিপি বানানোর নিয়ম সহ বিস্তারিত জানি।
১. মরিঙ্গা ও লেবুর সরবত
উপকরণ-
১/২ চা চামচ মরিঙ্গা পাউডার১ কাপ গরম পানি
১ চা চামচ লেবুর রস
সামান্য মধু বা গুড়
প্রস্তুত প্রণালী-
১ কাপ গরম পানিতে মরিঙ্গা গুঁড়া গুলিয়ে ২ মিনিট ঢেকে রাখুন।এরপরে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেয়ে ফেলুল।এটি সারাদিন আপনার শরীর সতেজ রাখতে সাহায্য করবে।২.মরিঙ্গা স্মুদি
উপকরণ-
১ চা চামচ মরিঙ্গা পাউডার১টা পাকা কলা
১ কাপ ঠান্ডা দুধ অথবা দই
১ চা চামচ মধু
২-৩ টুকরো বরফ
প্রস্তুত প্রণালী-
সব উপকরণ একসাথে ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন এবং সবুজঘন স্মুদি তৈরি । এরপর গ্লাসে ঢেলে ঠান্ডা ঠান্ডা স্মুদি পরিবেশন করুন
৩. মরিঙ্গা এনার্জি ice cube
উপকরণ-
১ কাপ বীজ ছাড়ানো খেজুর
১/৪ কাপ কাজু বাদাম
১ টেবিল চামচ তিল
১ চা চামচ মরিঙ্গা পাউডার
৪-৫টা কোয়া রসুন কুচি
শুকনা মরিচ
সরিষার তেল
স্বাদমতো লবণ
১ টেবিল চামচ চিনি
১ গ্লাস ঠান্ডা পানি
১/২ চা চামচ মরিঙ্গা পাউডার
কয়েকটি টুকরা পুদিনা পাতা
বরফকুচি
১/৪ কাপ কাজু বাদাম
১ টেবিল চামচ তিল
১ চা চামচ মরিঙ্গা পাউডার
প্রস্তুত প্রণালী-
সব উপকরণ ব্লেন্ড করে আঠালো মিশ্রণ বানিনে নিনি।ice box এ করে ফ্রিজে রাখুন। ব্যস্ত দিনে ঝটপট হাফ কাপ পানির সাথে একটি বা দুটি করে আইসক্রিউব মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। এটি আপনার সারাদিনের শক্তির জোগান দিতে সাহায্য করবে।৪.মরিঙ্গার পাতার ভাজি
উপকরণ-
সজনে পাতা
১কাপ পেঁয়াজ কুচি ৪-৫টা কোয়া রসুন কুচি
শুকনা মরিচ
সরিষার তেল
স্বাদমতো লবণ
প্রস্তুত প্রণালী-
প্রথমে সজনে পাতাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।কড়াইয়ে সরিষার তেল
গরম করে তাতে রসুন ও শুকনা মরিচ দিয়ে হালকা বাদামি করে ভেজে নিন।পেঁয়াজ
কুচি দিয়ে নরম হওয়া পর্যন্ত ভাজতে থাকুন।এবার সজনে পাতা দিয়ে দিন এবং
স্বাদমতো লবণ ছিটিয়ে দিন।পাতাগুলো একটু নরম হয়ে এলে ঢেকে দিন এবং মাঝে মাঝে
নাড়তে থাকুন যাতে পুড়ে না যায়।সব পানি শুকিয়ে গেলে নামিয়ে ফেলুন।
৫.মরিঙ্গা লেমনেড
উপকরণ-
২ টেবিল চামচ লেবুর রস১ টেবিল চামচ চিনি
১ গ্লাস ঠান্ডা পানি
১/২ চা চামচ মরিঙ্গা পাউডার
কয়েকটি টুকরা পুদিনা পাতা
বরফকুচি
প্রস্তুত প্রণালী-
১ গ্লাস লেবুর রস, চিনি, মরিঙ্গা পাউডার,পুদিনা পাতা ও এরপর পানি দিয়ে
গুলিয়ে নিন।এখন বরফকুচি দিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।
মরিঙ্গা পাউডার কাদের জন্য উপকারী
মরিঙ্গা পাউডার নানা ধরণের শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষের জন্য বিশেষভাবে
উপকারী।মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে খেতে হবে কারণ অতিরিক্ত বা
অনিয়মিত ব্যবহারে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, এলার্জি বা অন্যান্য
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।রক্তস্বল্পতায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য এটি
অত্যন্ত কার্যকর কারণ এতে থাকা আয়রন ও ভিটামিন সি একসঙ্গে কাজ করে হিমোগ্লোবিন
দ্রুত বাড়াতে সাহায্য করে। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের জন্য মরিঙ্গা
পাউডার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে
সাহায্য করে।
মরিঙ্গা পাউডারে থাকা পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
হৃদ্স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে ফলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি ও উচ্চ রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে রাখে। যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল তাদের জন্য এটি এক শক্তিশালী
সাপ্লিমেন্ট হিসেবে কাজ করে।
বয়স্কদের জন্য মরিঙ্গা হাড়ের শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে কারণ এতে
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন রয়েছে ।যারা নিয়মিত শরীরচর্চা বা খেলাধুলা করেন তাদের
জন্য এটি পেশি পুনর্গঠনে এবং দ্রুত শক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করে। মরিঙ্গা
পাউডার পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায় ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে
রাখতেও সাহায্য করে ।সঠিক নিয়মে ও পরিমিতভাবে মরিঙ্গা পাউডার প্রায় সকল
বয়সের মানুষের জন্যই এক আশীর্বাদস্বরূপ।
বাচ্চাদের জন্য মরিঙ্গা
Moringa powder বাচ্চাদের জন্য একটি দুর্দান্ত প্রাকৃতিক পুষ্টির উৎস। এতে
রয়েছে ভিটামিন A, C, ক্যালসিয়াম, আয়রন, প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে যেসব শিশু
খেতে চায় না, দুর্বল, রক্তস্বল্পতায় ভুগছে বা প্রায়ই সর্দি কাশিতে আক্রান্ত
হয় তাদের জন্য মরিঙ্গা খুব উপকারী হতে পারে।মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার সঠিক নিয়ম
মেনে খেলে শরীরের পুষ্টি বৃদ্ধি পায়।
আরোও পড়ুন:অয়েলি স্কিন কেয়ার রুটিন-ঘরোয়া টিপস
মরিঙ্গা শিশুদের হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে, চোখের দৃষ্টিশক্তি
ভালো রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি শিশুর হজমশক্তি উন্নত করে
পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তবে বাচ্চাদের জন্য মরিঙ্গা পাউডার খুব
অল্প পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত।প্রথমে দিনে ১/৪ চা চামচ দিয়ে শুরু করতে পারেন
এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ১/২ চা চামচ পর্যন্ত বাড়াতে পারেন।
এটি চিতই পিঠা, খিচুড়ি, ডিম ভাজি, ডালের সাথে মিশিয়ে বা স্মুদি বানিয়ে
শিশুদের খাওয়ানো পারেন যাতে তারা বুঝতে না পারে।কারণ এর তিতা স্বাদের জন্য
বাচ্চারা নাও খেতে চাইতে পারে।তবে শিশুদের বয়স, স্বাস্থ্যের অবস্থা ও কোনো
বিশেষ রোগ থাকলে মরিঙ্গা দেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের
কাজ। সঠিক নিয়মে দিলে মরিঙ্গা শিশুদের জন্য প্রাকৃতিক সুপারফুড হিসেবে কাজ
করবে।
মরিঙ্গা পাউডারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
মরিঙ্গা পাউডার সাধারণত নিরাপদ একটি প্রাকৃতিক উপাদান হলেও ভুল মাত্রায় বা
অতিরিক্ত খেলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এটি বিশেষ করে তখনই
হয় যখন শরীর নতুন উপাদানের সাথে মানিয়ে নিতে পারে না অথবা আগে থেকেই কিছু রোগ
বা ওষুধ চলছে।
প্রথমদিকে অনেকেরই হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন-গ্যাস, পেট ফুলে যাওয়া বা
ডায়রিয়া। কারণ মরিঙ্গা পাউডারে ফাইবার ও প্রাকৃতিক ডিটক্স উপাদান বেশি
পরিমাণে থাকে। আবার যাদের গলব্লাডার সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত
মরিঙ্গা খেলে জটিলতা বাড়তে পারে।
মরিঙ্গা রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে ফলে যারা আগে থেকেই উচ্চ
মাত্রার ওষুধ খাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে ব্লাড প্রেশার বা সুগার অনেক কমে যেতে
পারে।গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে মরিঙ্গা পাউডার খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে
কারণ গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়ায় এমন কিছু যৌগ থাকতে পারে।
অতিরিক্ত মরিঙ্গা খেলে মাথা ঘোরা, বমিভাব বা ক্লান্তিও লাগতে পারে। আর যারা
থাইরয়েড বা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মরিঙ্গা
খাওয়া উচিত নয়।মরিঙ্গা পাউডার উপকারী হলেও এটি দিনে ১-২ চা চামচের বেশি না
খাওয়াই ভালো।যাদের দীর্ঘমেয়াদি অসুখ আছে যেকোনো নতুন খাবার যুক্ত করার আগে
অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।সঠিক পরিমাণে খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার
আশঙ্কা অনেকটাই কম থাকে।
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য মরিঙ্গা পাউডার
মরিঙ্গা পাউডার গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি
প্রাকৃতিক উপাদান। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন , এবং
প্রোটিন থাকায় মা ও শিশুর উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।স্তন্যদানকারী
মায়েরা মরিঙ্গা পাউডার খেলে দুধ উৎপাদন বাড়ে এবং মায়ের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ
হয়।
ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে এটি উপকারী কারণ এতে রয়েছে vitamin E ও
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এবং চুলের গোড়া শক্ত
করে।নিয়মিত গ্রহণ করলে দুধের গুণগতমানও ভালো হয় ফলে শিশুর বৃদ্ধি ও রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
যদিও মরিঙ্গা পাতা অত্যন্ত পুষ্টিকর তবুও গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে মরিঙ্গা
পাউডার খাওয়া একেবারে এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এর কিছু প্রাকৃতিক যৌগ জরায়ুর
সংকোচন ঘটাতে পারে যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।স্তন্যদানকারী মায়েরা দিনে
১/২ চা চামচ দিয়ে শুরু করতে পারেন এবং ধীরে ধীরে শরীরের অবস্থা অনুযায়ী
মাত্রা বাড়াতে পারেন।
বাড়িতে মরিঙ্গা পাউডার তৈরির উপায়
মরিঙ্গা পাউডার বাজার থেকে কেনার চেয়ে বাড়িতে নিজে তৈরি করাই বেশি
স্বাস্থ্যকর ও সাশ্রয়ী হবে।গাছ থেকে তাজা সবুজ ও কীটমুক্ত সজনে পাতা সংগ্রহ
করুন।ডাঁটা থেকে পাতাগুলো ঝরিয়ে নিন।পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ময়লা
পরিষ্কার করে নিন।ধোয়ার পর পাতাগুলো একটি পরিষ্কার কাপড় বা চালুনিতে ছড়িয়ে
দিন যেন পানি ঝরে যায়।
এরপর ছায়াযুক্ত এবং বাতাস আছে এমন জায়গায় পাতাগুলো ২-৩ দিন শুকাতে দিন।রোদে
না শুকিয়ে ছায়ায় শুকানোই ভালো এতে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে।তবে চুলার পাশে
শুকানো যাবে না এতে গন্ধ ও রঙ নষ্ট হতে পারে।পাতাগুলো পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে
হাত দিয়ে চেপে যতটা সম্ভব গুঁড়ো করুন এরপর ব্লেন্ডারে ভালোভাবে গুঁড়ো করে
নিন।যদি গুঁড়ো একটু মোটা হয়, তাহলে একটি সূক্ষ্ম চালুনি দিয়ে ছেঁকে নিন। ফলে
মসৃণ ও ঝরঝরে পাউডার বের হবে।
আরোও পড়ুন:চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার।প্রাকৃতিক সমাধান ঘরে বসেই
মরিঙ্গা পাউডার একটি পরিষ্কার, শুকনো, বায়ুরোধী কাচের বয়ামে ভরে ঠান্ডা ও
অন্ধকার স্থানে সংরক্ষণ করুন। ঠিকভাবে রাখলে এটি ৬ মাস পর্যন্ত ভালো
থাকে।এইভাবে বাড়িতে সহজেই মরিঙ্গা পাউডার তৈরি করতে পারবেন। এবং আপনি ও আপনার
পরিবার প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার উপভোগ করতে পারবেন।পাউডার যেন
স্যাঁতসেঁতে না হয় সেজন্য ভালোভাবে শুকিয়ে রাখুন।প্রতি মাসে একবার চেক করুন
কোনো দুর্গন্ধ বা আর্দ্রতা হয়েছে কিনা।
মরিঙ্গা পাউডার কোথায় পাওয়া যায় ও দাম
আপনি যদি মরিঙ্গা পাউডার বাড়িতে বানাতে না পারেন তবে এটি বাজার থেকেও কিনতে
পারবেন।কারণ মরিঙ্গা পাউডার এখন বাংলাদেশে সহজেই পাওয়া যায়। এটি একটি
জনপ্রিয় হারবাল পণ্য হয়ে উঠেছে।আপনি এটি আপনার নিকটস্থ হারবাল ও আয়ুর্বেদিক
দোকানে, বড় ফার্মেসি কিংবা সুপারশপ যেমন খুঁজে পেতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন
অনলাইন পেইজ থেকেও মরিঙ্গা পাউডার অর্ডার করা যায়।
দামের দিক থেকে মরিঙ্গা পাউডারের পরিমাণ ও ব্র্যান্ডভেদে কিছুটা পার্থক্য দেখা
যায়। সাধারণত ৫০ গ্রাম প্যাকেটের দাম ৮০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে, ১০০ গ্রাম ১৫০
থেকে ২৫০ টাকা আর ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত প্যাকেটের দাম ৬০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে
হতে পারে। অর্গানিক ও রাসায়নিকমুক্ত পাউডারের দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশি
হয়ে থাকে।
কেনার সময় অবশ্যই পণ্যের উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেখে নেওয়া উচিত।
এছাড়াও প্যাকেটটি সিল করা ও বায়ুরোধী কিনা তা খেয়াল রাখাও জরুরি।চাইলে আপনি
নিজেই বাড়িতে মরিঙ্গা পাতা শুকিয়ে বিশুদ্ধ পাউডার তৈরি করতে পারেন যা
সাশ্রয়ী হবে ।
লেখকের শেষ মন্তব্য:মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার সঠিক নিয়ম,পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও উপযুক্ত মাত্রা
সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।কারণ এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত
খাওয়া বিপদ ডেকে আনতে পারে।মরিঙ্গা পাউডার শুধুমাত্র একটি সাধারণ ভেষজ নয় এটি
একটি প্রাকৃতিক ও শক্তিশালী খাদ্য উপাদান। নিয়মিত ও সঠিকভাবে ব্যবহারে এটি
আমাদের শরীর ও মন দুটোই সুস্থ রাখতে পারে।
তবে যে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদে গ্রহণের
পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।আশা করি আমার এই লেখাটির মাধ্যমে আপনি
মরিঙ্গা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন এব মরিঙ্গা পাউডার খাওয়া যেন আপনার
জন্য উপকার বয়ে আনে ও আপনি এর প্রকৃত উপকারিতা লাভ করতে পারবেন।সুস্থ থাকুন।
ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url