চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার।ঘরেই প্রাকৃতিক সমাধান


আপনি কি চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহারের গুণগত মান সম্পর্কে জানেন?চলুন জানি ঘরোয়া উপায়ে কারি পাতা ব্যবহার করে কিভাবে চুল লম্বা করা যায় এবং চুলের যত্ন নেয়া যায়।চুল আমাদের শরীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির এবং আত্মবিশ্বাসের একটি অংশ।কিন্তু এখনকার দিনে আমাদের চুল নিয়ে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। যেমন চুল ফেটে যায়, রুক্ষ হয়ে যায়, অনবরত চুল ঝরতে থাকে।
চুলের -যত্নে- কারি- পাতার- ব্যবহার
দামি দামি প্রোডাক্ট ইউজ করলে সাময়িকভাবে তা রোধ হলেও, ব্যবহার করা ছেড়ে দিলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।তাই অনেকের প্রাকৃতিক উপায় খুঁজে চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য।প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে এক অসাধারণ সংযোজন হলো কারি পাতা। কারি পাতা একটি শক্তিশালী ও কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান ।যা চুলের সকল সমস্যা দূর করতে আপনাকে সাহায্য করবে।

আমার এই লেখাটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন ঘরে বসেই কিভাবে ঘন কালো ও স্বাস্থ্যজ্জল চুল পেতে পারেন কারি পাতার ব্যবহারের জাদুতে।এ লেখাটির মাধ্যমে আমরা জানবো কারি পাতার সঠিকভাবে ব্যবহারের নিয়ম, হেয়ার প্যাক, তেল, পেস্ট, ধোঁয়ার পদ্ধতি এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা যা আপনাকে সঠিক পদ্ধতিতে কারি পাতার ব্যবহার করতে সাহায্য করবে।চলুন চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার এবং কার্যকর টিপস সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

পেজ সূচিপত্র:চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার।ঘরেই প্রাকৃতিক সমাধান 

কারি পাতার পুষ্টিগুণ

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান যা প্রচুর পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।অনেকেই কারি পাতাকে শুধু মসলা হিসেবে জানে। কিন্তু ত্বক ও চুলের যত্নে এটি একটি জাদুকরী সমাধান হতে পারে।আসুন কারি পাতার পুষ্টিগুণ উপাদানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

ভিটামিন এ

Vitamin A একটি চর্বি দ্রবণীয় ভিটামিন।যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনে ব্যবহৃত হয়।কারি পাতায় ভিটামিন A রয়েছে। যা আমাদের চোখ, চুল,ত্বক এবং বিভিন্ন রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী।ভিটামিন এ আমাদের চোখের রেটিনা কে সুরক্ষিত রাখে। চোখের রড কোষের কার্যকারিতা বজায় রাখে।এটি রাতে দেখার জন্য সহায়তা করে।

ভিটামিন A আমাদের শরীরের ত্বক এবং চুলের কোষ পুনর্গঠন ওন তুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে।আমাদের ত্বকের নিচের থাকা তৈল গ্রন্থিকে সক্রিয় রেখে মাথার ত্বকের প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক তেল উৎপন্ন করে। এই তেল চুলের গোড়াকে শক্ত ও মজবুত করে এবং চুলকে সুস্থ রাখে। ভিটামিন A কে antiaging উপাদানও বলা হয়। ভিটামিন এ আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।

ভিটামিন বি

কারি পাতাতে রয়েছে ভিটামিন B কমপ্লেক্স।B কমপ্লেক্স মানে এটিতে B2, B3, B6, B9, B12 একাধারে রয়েছে।ভিটামিন বি চুলের গোড়ার রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করায় চুলের গোড়া শক্ত হয়।ফলে চুল পড়া রোধ হয় এবং নতুন চুল গজাতে ভূমিকা পালন করে

ভিটামিন বি শুধু আমাদের চুল এবং ত্বকের উপকার করইকরে না।বরঞ্চ এটি আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান।ভিটামিন B আমাদের শরীরের শক্তি উৎপাদন করে, রক্ত গঠন করে, স্নায়ু তন্ত্র রক্ষা করে, স্বাস্থ্য বজায় রাখে।

ভিটামিন সি

কারি পাতায় প্রচুর পরিমাণে Vitamin C রয়েছে। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহ ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।ভিটামিন সি শক্তিশালী এন্টিজেন্ট হিসেবে কাজ করে।যা আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় না আমাদের চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় অসাধারণ ভূমিকা রাখে।

ভিটামিন সি চুল ও ত্বক গঠনের প্রয়োজনীয় কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে ফলে চুলের গোড়া মজবুত হয়, ত্বক টান টান উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত দেখায় এবং ন্যাচারাল গ্লোট ধরে রাখে। ভিটামিন সি চুলের কালার ধরে রাখতেও সাহায্য করে ।

ভিটামিন ই

কারি পাতা ভিটামিন ই তে ভরপুর।Vitamin E এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চুল ও ত্বকের কোষ রক্ষা করে।চুলের আগা ফাটা কমায় এবং বয়সের ছাপকে দূরে রাখে রাখতে সাহায্য করে।

আয়রন

কারি পাতায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন বিদ্যমান।Iron রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে যা শরীরকে অ্যানিমিয়া থেকে রক্ষা করে।অনেক সময় দেখা যায় আয়রনের ঘাটতি হলে চুল ঝরা শুরু হয়।

ক্যালসিয়াম

কারি পাতায় খনিজ উপাদান ক্যালসিয়ামও রয়েছে। যা আমাদের শরীরের হাড়ের গঠনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এমনকি চুল ও নখের বৃদ্ধি জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।কারি পাতার ক্যালসিয়াম চুলের গোড়াকে পুষ্টি সরবরাহ করে ফলে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুল পড়া কমে এবং ঘন হয়।

ম্যাগনেসিয়ামে

আরো একটি খনিজ উপাদান ম্যাগনেসিয়াম কারি পাতাতে উপস্থিত।Magnesium স্নায়ু ও পেশীর স্বাভাবিক কার্যক্রম ধরে রাখতে সাহায্য করে ফলে স্ট্রেস কমে এবং মানসিক শান্তি দেয়।ম্যাগনেসিয়াম চুলের স্বাস্থ্য কে স্বাস্থ্যবান রাখে।

ফাইবার

কারি পাতায় বিদ্যমান ফাইবার আমাদের শরীরের হজম শক্তি বাড়িয়ে অন্ত্র পরিষ্কার রাখে ।ফলে দেহে টক্সিক পদার্থ জমতে দেয় না এবং চুল ও ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে।এমনকি এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

কারি পাতায় শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা কোষের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে, দ্রুত বার্ধক্যতে বাধা দেয় এবং শরীরকে সুস্থ রাখে এবং চুল ও ত্বকে প্রাণবন্ত রাখে দীর্ঘ ।

অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান

কারি পাতায় প্রাকৃতিক অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানও রয়েছে।Anti bacterial মাথার স্কাল্পের সংক্রামক, খুশকি এবং প্রদাহ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে।এছাড়াও এটি ত্বকে ব্রণ হলে স্বাভাবিকভাবে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে।

কারি পাতা ও নিম পাতা কি একই

নিম পাতা ও কারি পাতা দুটিই অতি পরিচিত।অনেকে মনে করেন নিম পাতা ও কারি পাতা দুটি একই গাছের পাতা কারণ দুটি দেখতে কিছুটা একই ।কিন্তু এগুলো একেবারে আলাদা আলাদা দুটি গাছের পাতা।

কারি পাতা মিষ্টি নিম পাতা নামেও কিন্তু পরিচিত।কারি পাতা মূলত রান্নার স্বাদ ও গন্ধ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে।এটি চুলে চুলের যত্নেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে যেমন চুলের গোড়া মজবুত করে, চুল ঝরা কমায় এবং অকালপক্বতা দূরে রাখে।কারি পাতার বৈজ্ঞানিক নাম Murraya koenigii.কারি পাতা একটি মিষ্টি সুবাস যুক্ত মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয় যা রান্নার স্বাদকে ,পুষ্টি বৃদ্ধি করে।আবার কারি পাতা খাবারের ফ্লেভার ও আনে।


অপরদিকে নিম পাতামূলত আয়ুর্বেদিক ওষুধ এবং শরীরের বিভিন্ন চুলকানি চিকিৎসায়,মাথার খুশকি দূর করতে ,ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস জাতীয় কোন সমস্যা হইলে, বিষাক্ত কোন কিছু দূর করতে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।নিম পাতা অত্যন্ত তিতা স্বদযুক্ত এবং এর গন্ধ ও অনেক তীব্র। নিম পাতা বৈজ্ঞানিক নাম Azadirachta indica.এছাড়াও নিমপাতা দাঁত জনিত বিভিন্ন সমস্যায় এবং রক্ত বিশুদ্ধকরনে বিশেষভাবে কার্যকর।

স্বাস্থ্যউজ্জ্বল চুলের জন্য কারি পাতার তেল

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার এক রকমের প্রাকৃতিক ওষুধস্বরূপ। কারি পাতার তেল ব্যবহারের ফলে আপনার চুল গোড়া থেকে মজবুত হবে ।আপনার চুল পড়ার সমস্যা ঠিক হবে এবং আপনার চুল প্রাকৃতিক ভাবে উজ্জ্বলতা ফিরে পাবে।আসুন কারি পাতার তেল তৈরির উপকরণ ও প্রস্তুত প্রণালী সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

উপকরণ

এক কাপ আপনার ব্যবহৃত নারিকেল তেল এবং এক মুঠো ফ্রেশ তাজা কারিপাতা ব্যাস।

প্রস্তুত প্রণালী

কারি পাতাগুলো ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে ।এরপর একটি পাত্রে নারকেল তেল গরম করতে হবে এবং হালকা গরম হয়ে গেলে তার মধ্যে পানি ঝরানো শুকনো কারি পাতাগুলো দিয়ে দিতে হবে।পাতাগুলো যখন ভাজা ভাজা হয়ে বাদামি কালারের রং ধারণ করবে তখন নামিয়ে ঠান্ডা করে ছেকে নিয়ে একটি কাঁচের বোতলে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।তবে মনে রাখতে হবে এটি এক মাসের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।

নিয়ম ব্যবহারের নিয়ম

এই তেলটি রাতে ঘুমানোর আগে অথবা দিনের বেলা গোসলের আগে ১-২ ঘন্টা মাসাজ করে দিয়ে রাখতে হবে। এরপর আপনি আপনার ব্যবহারের শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন ।সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার এই তেল ব্যবহারের মাধ্যমে আশা অনুযায়ী ফল পাওয়া যেতে পারে ।

চুলের খুশকি দূর করতে কারি পাতা ও মেথির প্যাক

উপকরণ

২ টেবিল চামচ মেথি এবং এক মুঠো ফ্রেশ তাজা কারিপাতা।

প্রস্তুত প্রণালী

মেথি গুলো ভালো করে ধুয়ে একটি পাত্রে সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে।কারিপাতা এবং মেথি একসঙ্গে বেটে নিতে হবে।

ব্যবহারের নিয়ম

মেথি ও কারি পাতার এই পেস্টটি মাথার স্কাল্পে ভালো ভাবে দিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রাখতে হবে।এরপর আপনার ব্যবহৃত শ্যাম্পু দিয়ে ঠিকমতো ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ব্যবহারের ফলে আপনার মাথার স্কাল্প পুষ্টি পাবে এবং স্বাস্থ্যবান হবে।এমনকি আপনার চুলের খুশকি জনিত সকল সমস্যা দূর হবে।সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহারের মাধ্যমে ভালো ফল পেতে পারেন ।

কারি পাতা ও টক দই এর মিশ্রণ

উপকরণ

২ টেবিল চামচ টক দই ,১ মুঠো কারি পাতা এবং এক চামচ মধু।

প্রস্তুত প্রণালী

কারি পাতাগুলোকে ভালো করে ধুয়ে বেটে নিতে হবে ।তারপর এটির সাথে টক দই এবং মধু মিশিয়ে মিশিয়ে নিলেই আপনার প্যাক রেডি।

ব্যবহারের নিয়ম

প্যাকটি চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালোভাবে দিতে হবে।২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে ভালোভাবে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এতে আপনার চুলের রুক্ষতা দূর হবে।চুল প্রাকৃতিকভাবে নরম এবং মসৃণ ও কমল হবে।সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহারের মাধ্যমে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে ।

কারি পাতা ও লেবুর রসের মিশ্রণ

উপকরণ

১ মুঠো কারি পাতা,১টেবিল চামচ পরিমাণ লেবুর রস।

প্রস্তুত প্রণালী

কারি পাতাটিকে ভালোভাবে বেটে পেস্ট করে নিতে হবে।তারপরে এর মধ্যে লেবুর রস টি মিশিয়ে নিলেই পেস্ট টি তৈরি।

ব্যবহারের নিয়ম

পেস্টটি ২০ থেকে ২৫ মিনিট স্কাল্পে ভালোভাবে দিয়ে রাখতে হবে। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। অয়েলী স্কাল্পের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং স্কাল্প পরিষ্কার রাখে ।

চুলের যত্নে অ্যালোভেরা ও কারি পাতার প্যাক

উপকরণ

২ টেবিল চামচ এলোভেরা জেল একমুঠো পাতা ,একটি চুলে দেওয়া ভিটামিন E ক্যাপসুল।

প্রস্তুত প্রণালী

পাতাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে এটিকে বেটে পেস্ট করে নিতে হবে ।পেস্টটির সাথে ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল এবং একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল মেশালেই আপনার মিশ্রণটি রেডি ।

ব্যবহারের নিয়ম

মাথার স্কাল্পে এবং চুলে গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালোভাবে মাসাজ করে পেস্টটি এপ্লাই করতে হবে।৩০ মিনিট রাখতে হবে এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে এটিকে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। শ্যাম্পু করা যাবে না ।এটি আপনার ফাটা চুলকে ঠিক করবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার এই তেল ব্যবহারের মাধ্যমে আশা অনুযায়ী ফল পাওয়া যেতে পারে ।

চুল পাকা রোধে আমলা ও কারিপাতা

উপকরণ

১ কাপ আমলা ওয়েল, ১ মুঠো কারিপাতা ।

প্রস্তুত প্রণালী

আমলা তেল একটি পাত্রে নিয়ে হালকা কুসুম গরম করে তাতে পাতাগুলো দিয়ে দিতে হবে। তারপর এটিকে ১০-১৫ মিনিট জাল করে ঠান্ডা করে ছেকে একটি কাঁচের বোতলে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।অবশ্যই মনে রাখতে হবে একবার বানানো তেল এক মাসের বেশি রাখা যাবে না।

ব্যবহারের নিয়ম

রাতের বেলা ঘুমানোর আগে মাথার স্কাল্পে সহ পুরা চুলে ভালোভাবে মাসাজ করে দিয়ে রাখতে হবে । সকালে আপনার ব্যবহৃত শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে আপনার দ্রুত চুলপাকা রোদ হবে এবং চুলের যে ন্যাচারাল কালো কালার সেটি ধরে রাখবে এবং আপনার চুল স্বাস্থ্যবান দেখাবে।সপ্তাহে ২ বার এটি ব্যবহার করতে পারেন ।

জবা ফুল এবং কারি পাতার হেয়ার প্যাক

উপকরণ

৫ থেকে ৬টি জবা ফুল, এক মুঠো কারি পাতা, ২ টেবিল চামচ নারকেল এর দুধ বা নারিকেলের পানি।

প্রস্তুত প্রণালী

জবা ফুল,কারি পাতা,নারকেলের দুধ/নারিকেলের পানি একসাথে ব্লেন্ডারে নিয়ে ব্লেন্ড করে পেস্ট বানাতে হবে।

ব্যবহারের নিয়ম

পুরো মাথায় পেস্টটি মাসাজ করে লাগাতে হবে। ২০-৩০মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাকটি ব্যবহারের ফলে আপনার চুল শাইনি, মজবুত ও অকালপক্কতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার এই প্যাক ব্যবহারের মাধ্যমে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে ।

কারি পাতা ও পেঁয়াজের রসের হেয়ার প্যাক

উপকরণ

এক মুঠো কারিপাতা ,২ টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস, এবং একটি কলা

প্রস্তুত প্রণালী

কেরি পাতা ,পেঁয়াজের রস এবং কলা ভালো ভাবে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন ।

ব্যবহারের নিয়ম

পুরো মাথায় ও চুলে ঠিকমত দিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট রাখুন। এরপর ভাল করে ঠান্ডা পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে এক থেকে দুইবার এটি ব্যবহার করুন।এই প্যাকটি ব্যবহারের ফলে এক্সট্রা করে আপনার কন্ডিশনার ইউজ করতে হবে না।এটি আপনার চুলকে স্মুথ করবে এবং চুল গজাতে সাহায্য করবে এবং চুল পড়া রোধও করবে।সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার এই প্যাক ব্যবহারের মাধ্যমে আশা অনুযায়ী ফল পাওয়া যেতে পারে ।

ক্যাস্টর অয়েল ও কারি পাতার হেয়ার অয়েল

উপকরণ

এক মুঠো তাজা কারি পাতা,৩ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল,৩ টেবিল চামচ আপনার ব্যবহৃত নারিকেলের তেল।

প্রস্তুত প্রণালী

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহারের ভূমিকা অপরিসীম। আসুন ক্যাস্টর অয়েল ও কারি পাতার হেয়ার অয়েলের প্রস্তুত প্রণালী জানি।কারি পাতা ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে জানো পানি না থাকে।এরপর একটি পাত্রে ক্যাস্টর অয়েল ও নারিকেলের তেল ধীরে তাপে জ্বাল দিতে হবে।

তেল গরম হয়ে গেলে কারি পাতা গুলো দিয়ে ৫-৬ মিনিট অল্প আচেঁ পাতাগুলো ভাজা ভাজা হওয়া পর্যন্ত নাড়তে হবে।এরপর নামিয়ে ঠান্ডা করে ছেকে নিয়ে একটি কাঁচের বোতলে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।তবে মনে রাখতে হবে এটি এক মাসের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।

ব্যবহারের নিয়ম

৫-১০ মিনিট মাথার স্কাল্পে ভালোভাবে মাসাজ করে দিয়ে ১-২ ঘন্টা রাখতে হবে।অথবা রাতে দিয়ে সকালে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে ভালোভাবে।এই তেলটি আপনার চুলকে ঘন করবে, চুল গজাতে সাহায্য করবে, চুল পড়া রোধও করবে,এছাড়াও ফাটা চুলকে ঠিক করবে এবং দ্রুত চুলপাকা রোধ করবে।সপ্তাহে ১ বার এই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে ।

সুস্থ থাকতে খাদ্যতালিকায় যোগ করুন কারি পাতা

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহারের পাশাপাশি এটি খাবারের মসলা হিসেবেও ব্যবহৃত হয় কারি পাতা একটি প্রাকৃতিক টনিক হিসেবে কাজ করে ।কারি পাতা শুধু রান্নার টেস্ট বাড়ায় না এটির উপকারিতা অসংখ্য।নিয়মিত কারি পাতা খাওয়ার মাধ্যমে এটি আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।কারি পাতা হজমে সাহায্য করে ফলে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম জনিত সকল সমস্যা দূর করে।


নিয়মিত কারি পাতা খেলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক থাকে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কারি পাতা অত্যন্ত উপকারী।কারি পাতার রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রেখে আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।কারি পাতার ডিটক্সিফায়ার হিসেবেও কাজ করে যা লিভার, কিডনি থেকে বিভিন্ন টক্সিক পদার্থ দূর করে ।

আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় আমাদের রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে।অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকার কারণে কারি পাতা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে আমাদেরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।আমাদের শরীরের ফ্যাট ঝরাতেও কেরি পাতার ভূমিকা অপরিসীম।

কারি পাতা আমাদের ত্বক ও চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি দেয়। যার কারণে ত্বক উজ্জ্বল এবং চুল মজবুত ও সাইনি দেখায়।কারি পাতার মধ্যে ভিটামিন এ থাকার কারণে এটি আমাদের চোখ কেউ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

কারি পাতা ব্যবহারে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহারের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন অতিরিক্ত,অনিয়ম করে খেলে এটি আমাদের ক্ষতিও করতে পারে। তাই নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়াই উত্তম।কারি পাতা অতিরিক্ত খেলে এটি বদহজম হয়ে যেতে পারে। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ টি পাতায় বেশি খাওয়া উচিত না।

যাদের এলার্জি জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের উচিত সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করা অন্যথায় তাদের চুলকানি হতে পারে।গর্ভাবস্থায় অনেকেই কারিপাতা সহ বিভিন্ন ভেষজ ঔষধ খেয়ে থাকে। তবের ঔষধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপরে খাওয়া উচিত। অন্যথায় আপনার সন্তানের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।


শিশুদের জন্য অতিরিক্ত কারিপাতা খাওয়া বিপদজনক হতে পারে তাই তাদের অবশ্যই খুবই সামান্য পরিমাণে দিতে হবে।অনেকেই খাবারের স্বাদ বেশি করার জন্য প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কারি পাতা রান্নায় দেয় যার ফলটা উল্ট হতে পারে টেস্ট ভালো না হয়ে অতিরিক্ত তিতা হয়ে যেতে পারে।যারা দীর্ঘমেয়াদি কোন অসুখের ভোগে তাদের সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করা উচিত।কারণ কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো না।

কারি পাতা কোথায় পাওয়া যাবে

আপনার আশেপাশের কাঁচাবাজারে ফ্রেশ, টাটকা, সবুজ কেরি পাতা অনায়াসে পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন মুদিখানায় শুকনো,গুড়া কারি পাতার পাওয়া যায়।অনেক সময় বিভিন্ন সুপার সবগুলোতেও কারি পাতা পাওয়া যায়।

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার:উপসংহার

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার একটি প্রাকৃতিক আশীর্বাদ।কারি পাতার ভেতরে বিদ্যমান ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, আয়রন মাথার স্কাল্পের এবং চুলের ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায়।সঠিক নিয়মে এবং সঠিক পরিমাণে কারি পাতা ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার চুল পড়া কমাবে, চুলের গোড়া মজবুত করবে, দ্রুত চুল পাকা রোধ করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

এমনকি চুল ফাটাও সাড়াতেও সাহায্য করবে।নিয়মিত সঠিক পরিমাণে ব্যবহারের কারি পাতা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। যা আপনার আত্মবিশ্বাসকেও বাড়াতে সাহায্য করবে।ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি কারি পাতা আমাদের খাবারের স্বাদ ও বৃদ্ধি করে। সঠিক নিয়মে ব্যবহার ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অতিরিক্ত খেলে অথবা ব্যবহার করলে হজম,এলার্জি জনিত সমস্যা সহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।তাই ব্যবহারের আগে অবশ্যই সতর্কতার সহিত ব্যবহার করতে হবে এবং প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপরে ব্যবহার করা উচিত।সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url