নিয়মিত ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা
স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন এর জন্য ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা আমাদের জানা
অত্যন্ত জরুরী।কর্মব্যস্তময় জীবনে নিয়মিত ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা দুই
ই রয়েছে।বর্তমানে গতিশীল যুগে শরীর ও মন সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করার কোন
বিকল্প নেই।আপনার সুস্থতার পাশাপাশি আপনার সৌন্দর্য ধরে রাখাতেও ব্যায়ামের
ভূমিকা অপরিসীম।নিয়মিত যেমন আপনার কর্ম ক্ষমতা কে বাড়ায় তেমনি মানসিক
স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।
নিয়মিত ব্যায়াম আপনার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা, অসুখ বিসুখ কেউ নিয়ন্ত্রণে
রাখে।কিন্তু অতিরিক্ত,ভুল নিয়মে ব্যায়াম করলে উপকারের তুলনায় ক্ষতির সম্ভাবনাই
বেশি।তাই আমাদের জানা দরকার সঠিক ব্যায়ামের পদ্ধতি এবং ব্যায়াম সঠিক নিয়মের না
করলে কি কি ক্ষতি হতে পারে। চলুন ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে
বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পেজসূচিপত্র:নিয়মিত ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা
- ব্যায়াম কি এবং কেন প্রয়োজন
- নিয়মিত ব্যায়ামের শারীরিক উপকারিতা
- নিয়মিত ব্যায়ামের মানসিক উপকারিতা
- সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যসম্মত কিনা
- সকালে ব্যায়ামের আগে উপযুক্ত খাবার কি হতে পারে
- উপকারী ব্যায়ামের তালিকা
- নিয়মিত ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
- কখন,কিভাবে করলে বেশি কার্যকর
- রোগ প্রতিরোধে ব্যায়ামের ভূমিকা
- দৈনন্দিন জীবনে ব্যায়ামের ইতিবাচক প্রভাব
- রাতে ঘুমানোর আগে ব্যায়াম করলে কি হতে পারে
- ব্যায়াম করা ছেড়ে দিলে কি হতে পারে
- ঘরে জিম কিভাবে করবেন
- ব্যায়ামের আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে
- ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা:শেষ মন্তব্য
ব্যায়াম কি এবং কেন প্রয়োজন
ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা একে অপরের সাথে যুক্ত।ব্যায়াম আমাদের
অতিপরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি বিষয়।কমবেশি আমরা অনেকেই ব্যায়াম করে থাকি।কিন্তু
আমরা অনেকেই ব্যায়ামের সঠিক নিয়ম জানি না ।সঠিক নিয়মে ব্যায়াম না করলে
উপকারিতার পাশাপাশি ক্ষতিও হতে পারে।
ব্যায়াম হলো পরিকল্পিত শারীরিক কার্যকলাপ। যা আমাদের শরীরের কর্মক্ষমতা ও
সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।শুধু জিমে গেলে,দৌড়াদৌড়ি করলেই ব্যায়াম হয়
না।সাইকেলিং, হাটাহাটি খেলাধুলা এমনকি বাড়ির কাজের মাধ্যমে ব্যায়াম হয়ে থাকে।
উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। দুটি জানাই আমাদের অত্যন্ত জরুরী ।এই
লেখায় ব্যায়াম করার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।জানো ব্যায়াম
করার আগে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।চলুন বিস্তারিত জানি।
নিয়মিত ব্যায়ামের শারীরিক উপকারিতা
নিয়মিত ব্যায়াম শারীর ও মনের নানাভাবে উপকার করে থাকে।নিয়মিত ব্যায়াম আপনার
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকিও
কমায়।হার্ট আমাদের শরীরে প্রধান অঙ্গ।যা রক্ত পাম্প করে অক্সিজেনসহ বিভিন্ন
পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছায়ে দেয়।তাই হার্ট সুস্থ রাখা
অত্যন্ত জরুরী।নিয়মিত ব্যায়াম হার্টকে শক্তিশালী ও মজবুত করে।যা আপনার শরীরের
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
অনেক সময় মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহ হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। যাকে আমরা স্ট্রোক
বলি।স্ট্রোকের ফলে আমাদের মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছায় না এবং এটি অকেজ হয়ে পড়ে।
এমনকি এর কারণে আপনার মৃত্যু হতে পারে।নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে এটি কন্ট্রোল
করা সম্ভব।নিয়মিত ব্যায়াম ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে স্ট্রোকের
ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
নিয়মিত ব্যায়ামের মানসিক উপকারিতা
নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের পাশাপাশি আপনার মন মানসিকতাকেও সুস্থ রাখতে সহায়তা
করে।নিয়মিত ব্যায়াম মস্তিষ্কের স্ট্রেস লেভেল কন্ট্রোল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখে।নিয়মিত ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের এন্ডোরফিন ও সেরোটোনিন নামক হরমোন
নিঃসৃত হয়।এগুলো সুখ অনুভূতির হরমোন নামে পরিচিত। এই হরমোন গুলো নিঃসরণের এর
মাধ্যমে আপনার মন ভাল রাখে।
এন্ডোরফিন মস্তিষ্ক নিঃসৃত প্রাকৃতিক হরমোন যা আমাদের আনন্দ ,স্বস্তির অনুভূতি
জাগায়।নিয়মিত ব্যায়াম,পছন্দের কাজ,হাসাহাসির মাধ্যমে এন্ডোরফিনের মাত্রা বেড়ে
যায় ।যা আপনাকে মানসিকভাবে সুস্থ্য রাখে।সেরোটোনিন মস্তিষ্ক নিঃসৃত
নিউরোট্রান্সমিটার।সেরোটোনিন আপনার মেজাজ, ঘুম, ক্ষুধা, নিয়ন্ত্রণে রাখে।
এমনকি আপনার মানসিক শক্তি সেরোটোনিন এর মাধ্যমে কন্ট্রোল হয়।অনেক সময়
সেরোটোনিনকে "হ্যাপিনেস কেমিক্যাল" বলা হয়ে থাকে।সেরোটোনিনের মাত্রা কমে গেলে
মানসিক ডিপ্রেশন, অবসাদ দেখা দেয়।নিয়মিত ব্যায়াম,পর্যাপ্ত ঘুম, সূর্যের
আলো,পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।যা
আপনার মন ভালো রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়।
সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যসম্মত কিনা
সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় ভোগে ।অনেকে মনে করে সকালে
খালি পেটে ব্যায়াম করা বেশি কার্যকর। আবার অনেকে মনে করে এটি শরীরকে দুর্বল করে
দেয় ।চলুন বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে কি বলে জেনে নেই।সকালে খালি পেটে গ্লুকোজের
লেভেল কম থাকায় শরীরের চর্বি কে গলিয়ে শক্তি উৎপন্ন করে ফলে ওজন কমাতে সাহায্য
করে।
কিন্তু সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করলে অনেকের শরীর খারাপ করে। মাথা ঘুরে,
ক্লান্তি অনুভব হয় যা আপনার সারাদিনের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।খালি পেটে
পর্যাপ্ত গ্লুকোজ না থাকায় শরীর ক্ষয় হওয়াও শুরু করে।দীর্ঘ সময় ধরে খালি পেটে
ব্যায়াম করলে আপনার কর্মক্ষমতাও কমে যেতে পারে।ব্লাড প্রেসার,হার্টের রোগীর কখনো
সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করা উচিত না। এতে তাদের ক্ষতি হতে পারে।
সকালে ব্যায়াম করার আগে কি খাওয়া উচিত
ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা জানার জন্য অবশ্যই সঠিক ব্যায়াম করার পদ্ধতি
জানা দরকার।সকালে ব্যায়াম করার আগে হালকা কিছু খাওয়া উচিত ।যা আপনার শরীরের
শক্তি ধরে রাখবে এবং দুর্বলতা থেকে রক্ষা করবে।তবে তা অবশ্যই হতে হবে কম
ক্যালরিযুক্ত এবং সহজে হজম হয় এমন কিছু।
চলুন জানি ব্যায়ামের আগে খাওয়ার উপযুক্ত কিছু খাবারের নাম।
কলা
প্রাকৃতিক চিনি, পটাশিয়ামযুক্ত একটি খাবার যা দ্রুত শরীরে শক্তি যোগায়।
বাদাম
প্রোটিন সরবরাহ করে।
ওটস
কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে যা ধীরে হজম হয় ফলে অনেক সময় ধরে শক্তি যোগায়।
ফল
ভিটামিন সমৃদ্ধ কিন্তু সহজে হজম হয় এমন।
দুধ, টক দই
প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে।
তবে ব্যায়াম করার ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে খাবার খেয়ে নেয়া উচিত। যাতে তা শরীরে
শক্তি যোগায়। তবে ভারী খাবার, চিনি জাতীয় খাবার,ক্যাফেইন জাতীয় খাবার এড়িয়ে
চলা উচিত।এসব খাবার হজমে ব্যাঘাত ঘটায় যা ব্যায়ামের সময় অস্বস্তির কারণ
হতে।ভরাপেটে ব্যায়াম করা ঠিক নয়।
উপকারী ব্যায়ামের তালিকা
নিয়মিত ব্যায়াম মন ও শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।ব্যায়াম সুস্থ জীবনের
জন্য খুবই জরুরী একটি অভ্যাস ।কিছু উপকারী ব্যায়ামের তালিকা চলুন জেনে নেওয়া যাক
যা আপনারা সহজে করতে পারবেন।
জগিং
নিয়মিত ব্যায়াম যেমন ওজন কমায়, তেমন হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, সাথে
মানসিক চাপ কমে কমায়।
পায়ে হাটা
হাঁটুর জন্য কম চাপের একটি ব্যায়াম, নিয়মিত হাটাহাটি রক্তচাপ ও সুগার
নিয়ন্ত্রণে রাখে, সাথে আপনার ওজন কমায়।
যোগব্যায়াম
যোগব্যায়াম শরীরের ব্যথা কমায় ভারসাম্য বৃদ্ধি করে, ট্রেস কমায়, হরমোন এবং
স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে রাখে।স্কোয়াট,পুশ আপ,প্ল্যাঙ্কবাসায় করার
উপযোগী,আপনার পেশি গঠনে সাহায্য করে এমণকি ভুড়ি কমাইতেও কার্যকর ।
সাইক্লিং
পা এবং কোমরের পেশির কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে শক্তিশালী করে,কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস
বাড়াতে সাহায্য করে।
সাঁতার
সাঁতারের মাধ্যমে পুরো শরীরের ওয়ার্কআউট হয়, জয়েন্ট,হাড়ের উপরে চাপ
কমায়,হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতাও বাড়ায়।
স্ট্রেচিং
শরীরের ব্যথা কমায়।
এসব ব্যায়াম আপনি ঘরেই করতে পারবেন জিমে ভর্তি হওয়া ছাড়াই ।ব্যায়ামগুলো আপনার
শরীরকে ফিট এবং মনকে ভালো রাখবে, শরীরকে শক্তিশালী করবে এবং আপনাকে স্ট্রেস ফ্রি
রাখতে সাহায্য করবে।
নিয়মিত ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
নিয়মিত ব্যায়াম আপনার শরীরের স্ট্রেন্থ বৃদ্ধির পাশাপাশি ওজনও কমাতে সাহায্য
করে।নিয়মিত ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণের রাখার একটি বাস্তব এবং কার্যকরী উপায়।
নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করে ফলে ওজন কমাতে সাহায্য
করে।নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায় ফলে ওজন পোড়াতে থাকে এবং আপনার
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
বিভিন্ন শক্তি নির্ভর ব্যায়াম শরীরের চর্বি গলায় যা আপনার ওজন কমায়।প্রতিদিন
অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।সুষম খাদ্য অভ্যাস গঠন করার চেষ্টা
করুন। পর্যাপ্ত ঘুম এবং পানি পান করার চেষ্টা করুন ।এতে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে
থাকবে।ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে শরীরের সুস্থতা ফিল হয় এবং আপনি মানসিকভাবেও সুস্থ
ফিল হবে।
কখন,কিভাবে ব্যায়াম করলে বেশি কার্যকর
মন মতো ফলাফল চাইলে অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী সঠিক পদ্ধতিতে সঠিক সময়ে ব্যায়াম করা
অত্যন্ত জরুরি। সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে ব্যায়াম শরীর ও মনের জন্য অত্যন্ত
উপকারী। শুধু ব্যায়াম করলেই হবে না সঠিক নিয়ম এবং সঠিক সময় টা নির্ধারণ করে
ব্যায়াম করতে হবে।তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।ব্যায়াম শুরুর আগে একটু
ওয়ার্মআপ করে নিন।নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
ওজন কমাইতে চাইলে কার্ডিও ব্যাম করুন। মনোযোগ বৃদ্ধিতে,মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে
যোগব্যায়াম করুন।পেশি গঠনে স্ট্রেন্থ ট্রেনিং নিন।নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করা
বজায় রাখুন। সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন, ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
খালি পেটে অনেক সময় ধরে ব্যায়াম করবেন না।সকালে মানসিক ফোকাস, এনার্জি দুটিই
বেশি থাকে ।শরীর ও মন সতেজ থাকে তাই সকালে ব্যায়াম বেশি কার্যকর।এছাড়া
বিকেল,সন্ধ্যাও ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময়। কারণ এই সময় শরীর উষ্ণ ও নমনীয়
থাকে।সময় যেটাই হোক নিয়মিত ব্যায়ামটা ধরে রাখতে হবে।
রোগ প্রতিরোধে ব্যায়ামের ভূমিকা
রোগ প্রতিরোধে ব্যায়ামের ভূমিকা অপরিসীম।নিয়মিত ব্যায়াম ব্যায়াম শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।দীর্ঘমেয়াদি,সংক্রামক রোগ থেকেও রক্ষা করে। নিয়মিত
স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করা আপনার সুস্থতার জন্য
অপরিহার্য একটি বিষয়।
নিয়মিত ব্যায়াম ইমিউনিটি সিস্টেম সক্রিয় করে ফলে সাদা শ্বেত রক্তকণিকার
কার্যক্ষমতা বাড়ায় যা ভাইরাস ওব্যাকটেরিয়া এর বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।নিয়মিত
ব্যায়াম কোলেস্টরেল এবং রক্তচাপ কম রাখায় হৃদরোগের রোগের ঝুঁকি কম
থাকে।ব্যায়াম ইনসুলিন এর মাত্রা বাড়িয়ে ডায়াবেটিস কন্ট্রোল রাখে।নিয়মিত
ব্যায়াম স্ট্রেস উঠবেগ বিষন্নতা কমায় আপনাকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখে।
নিয়মিত ব্যায়াম হাঁড় মজবুত করে এবং এবং জয়েন্টের শক্তি বাড়ায়।এবং আমাদের
শরীরের কোষ গুলো ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস আরো কার্যকর হয়ে ওঠে ও দক্ষ হয়ে
ওঠে।দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতার জন্য ব্যায়াম একটি প্রাকৃতিক উপশমের উপায়।তাই আমাদের
উচিত নিয়মিত ব্যায়াম করা।
দৈনন্দিন জীবনে ব্যায়ামের ইতিবাচক প্রভাব
ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা থেকে আমরা জানতে পারবো নিয়মিত ব্যায়াম শুধু
শরীর ফিট রাখে তা না। আপনার ব্যক্তিজীবন, কর্মজীবন এবং সামাজিক জীবনযাত্রার মান
উন্নত করে।ব্যায়াম আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে যা আপনার কর্মক্ষমতাকে বাড়ায়
এবং আপনার অস্থিরতাও কমাবে।দেহের শক্তি ও কর্ম ক্ষমতা বাড়ানোর ফলে দৈনন্দিন কাজে
সহজে মনোযোগ ধরে রাখে।
ব্যায়াম আপনার শরীরের ক্লান্তি ও অলসতা দূর করতেও সাহায্য করে।যা আপনার
আত্মশক্তি, আত্মবিশ্বাস বাড়ায় ।ফলে ব্যক্তিগত এবং পেশাগত উভয় জীবনেই সফলতা
বয়ে আনতে সহায়তা করে।নিয়মিত ব্যায়াম সুস্থ জীবনের অনুপ্রেরণা যোগায়।
রাতে ঘুমানোর আগে ব্যায়াম করলে কি হতে পারে
ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা জানলে রাতে ঘুমানোর আগে ব্যায়াম করলে কি হতে
পারে জানতে পারবেন।অনেকেই দিনের কর্মব্যস্ততার জন্য দিনের বেলা ব্যায়াম করতে
পারে না ।কর্মব্যস্ততা শেষে রাতে ব্যায়াম করে।এখন প্রশ্ন হচ্ছে রাতে ঘুমানোর আগে
ব্যায়াম করলে কি হতে পারে?চলুন জেনে নেওয়া যাক
রাতে ঘুমানোর আগে হালকা ব্যায়াম করা উপকারী।ব্যায়াম ঘুমের প্রয়োজনীয় হরমোনের
নিঃসরণতা বাড়িয়ে মানসিক চাপ কমায়।যা রাতে ঘুমায় ভালো ঘুমাইতে সাহায্য করে।মন
মানসিকতা ভালো রাখে।যা আপনার ঘুমের মান উন্নত করবে।কিন্তু অতিরিক্ত, কঠিন
ব্যায়াম হৃদয় স্পন্দনের উত্তেজনা বাড়ায় ফলে ঘুমাতে সমস্যা হতে পারে।শরীর
উত্তেজিত ও সজাগ থাকার কারণে আপনার নিয়মিত স্বাভাবিক ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে
পারে।তাই ঘুমের অন্তত ১-২ ঘন্টা আগে ব্যায়াম করা ভালো।
ব্যায়াম করা ছেড়ে দিলে কি হতে পারে
নিয়মিত ব্যায়াম শরীর ও মনের উন্নতি সাধিত করলেও ,হঠাৎ করে ব্যায়াম ছেড়ে দিলে
তা শরীরের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে।হঠাৎ ব্যায়াম ছেড়ে দিলে ক্যালোরি পোড়ার হার
কমে যাবে। চর্বি জমতে শুরু করবে ।মেটাবলিজম এর হার কমে যাবে ফলে ওজন বেড়ে
যাবে।শরীরের পেশির শক্তি কমে যাবে যা আপনার ফিটনেস কমিয়ে দিবে।
আপনার মানসিক ট্রেস, চাপ, বিষন্নতা বাড়াতে পারে।যা আপনার মানসিক সুস্থতার উপর
প্রভাব ফেলবে।এছাড়াও আপনার আত্মবিশ্বাস আত্মশক্তি কমিয়ে ফেলবে যার ফলে আপনি
দৈনন্দিন ব্যক্তিজীবনে কর্মজীবনে মনোযোগ হারিয়ে ফেলতে পারেন।ব্যায়াম ছেড়ে দিলে
আপনার কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে যার ফলে আপনার হার্টের কর্মক্ষমতাও কমে যাবে।এমনকি
শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমও দুর্বল করে ফলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
ঘরে জিম কিভাবে করবেন
ঘরে জিম করতে পারলে যেমন সময় বাঁচে তেমন খরচও বাঁচে।বাড়িতে একটি ছোটখাটো
ব্যয়ামাগার তৈরি করতে পারেন।নিজের সুবিধামতো যে কোনো সময়ে করা যায়। সঠিক
পরিকল্পনা থাকলে ঘরেই জিম করা করাই উত্তম।ঘরের যে কোন একটা ফাঁকা জায়গা বেছে
নিয়ে আপনি সেখানে রেগুলার ব্যায়াম করতে পারেন।বাতাস প্রবাহ হয় এমন একটি জায়গা
যেখানে খোলা জানালা আছে এমন জায়গা হলে ভালো হয়।
জিমের কিছু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করুন। যেমন একটি ইয়োগা ম্যাট, ডাম্বেল,
স্কিপিং রোপ,কেটলবেল,পুল আপ বার,পুশআপ বার।এছাড়াও ইউটিউবে বিভিন্ন ব্যায়ামের
ভিডিও আছে সেগুলো দেখে দেখে ও ব্যায়াম করতে পারেন ।নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন,
নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়াম কার্যকর বেশি। সপ্তাহে অন্তত ৪-৫দিন ব্যায়াম
করুন। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট প্রতিদিন ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।প্রতিদিন পর্যাপ্ত
পানি পান করার চেষ্টা করুন এবং একটি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস গঠন
করুন ।এসব প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই জিম করতে পারবেন অনায়াসে।
ব্যায়ামের আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে
ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা না জানলে আমরা সঠিক নিয়মে ব্যায়াম করতে পারব
না ।এতে আমাদের উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হতে পারে।নিয়মিত ব্যায়াম শরীর ও মনের
জন্য উপকারী ।কিন্তু সঠিক নিয়মে, সঠিক পদ্ধতিতে ব্যায়াম না করলে শরীরের
মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে যারা নতুন ব্যায়াম শুরু করছেন তাদের বিষয়টা
মাথায় অবশ্যই রাখা উচিত।
প্রতিদিন অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে পেশির ক্ষয় হওয়া শুরু হতে পারে। এমনকি হরমোনের
ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার ভুল পদ্ধতিতে ব্যায়াম করলে যেমন ভুল
পদ্ধতিতে স্কোয়াট, ডেডলিফট, পুশআপ কোমর, হাঁটু ,কোমর ,শরীরের বিভিন্ন অংশে
ইনজুরি হতে পারে।
ব্যায়াম শুরুতে শরীরকে ওয়ার্মআপ না করে সরাসরি ভারী ব্যায়াম করলেও শরীরের
ক্ষতি হতে পারে ।ব্যায়ামের মাঝে ভুল পদ্ধতিতে দম নিলে হৃদপিন্ডের উপর চাপ পড়ে
ফলে হৃদপিন্ডের ক্ষতি হতে পারে।নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে ব্যায়াম না করলে
শরীরের পুনরুদ্ধার হয় না।
ফলে শরীরের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।এবং অবশ্যই পরিমাণমতো পানি পান করতে হবে।এসব
কারণে সঠিক পদ্ধতিতে ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরী।তাই ব্যায়াম শুরু করার আগে
সবারই উচিত সঠিক নিয়মটা জেনে নেওয়া।
ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা:শেষ মন্তব্য
ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা জানা স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের জন্য একটি
অপরিহার্য বিষয়।ব্যায়াম যেমন আমাদের শরীরের ফিটনেস ধরে রাখে, মানসিক সুস্থতা
বজায় রাখে,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তেমনি ভুল পদ্ধতিতে ব্যায়াম করলে
শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে। যা আপনার শরীরের ধ্বংসের কারণ হতে পারে।
ব্যায়ামের উপকার চাইলে সঠিক নিয়মে সঠিক পদ্ধতিতে সঠিক সময়ে যথাযথ খাদ্যাভ্যাস
গড়ার মাধ্যমে করা অত্যন্ত জরুরি ।ব্যায়াম অবশ্যই পরিমিত ও সচেতন ভাবে করতে হবে
যাতে শরীরের উপকার হয় ক্ষতি না হয়। নিজের শরীর অনুযায়ী আস্তে আস্তে অল্প অল্প
করে ব্যায়ামের অভ্যাস করা করায় বুদ্ধিমানের কাজ হবে আমার মতে।ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url