স্কুল প্রজেক্টের জন্য ৩০টি বিজ্ঞান এক্সপেরিমেন্ট
স্কুল প্রজেক্টের জন্য ৩০টি বিজ্ঞান এক্সপেরিমেন্ট খুঁজছেন? আমাদের এই ব্লগে
সৃজনশীল ও সহজে করা যায় এমন অসাধারণ বিজ্ঞান প্রজেক্ট আইডিয়া শেয়ার করবো যেগুলো
আপনার প্রজেক্টকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলবে। বিজ্ঞান শুধু বইয়ের মধ্যে
সীমাবদ্ধ না বরং হাতে কলমে শেখার একটি দারুণ মাধ্যম।
এই ব্লগে আপনি পাবেন ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি এবং জেনারেল সায়েন্স
সম্পর্কিত সহজ ও কার্যকরী এক্সপেরিমেন্ট আইডিয়া। ফলে আপনি যেকোনো বিজ্ঞান মেলা,
ক্লাস প্রেজেন্টেশন অথবা স্কুল প্রজেক্টে এগুলো ব্যবহার করে ভালো নম্বর ও প্রশংসা
অর্জন করা সম্ভব হবে।
পেজ সূচিপত্রঃ স্কুল প্রজেক্টের জন্য ৩০টি বিজ্ঞান এক্সপেরিমেন্ট
- স্কুল প্রজেক্টের জন্য ৩০টি বিজ্ঞান এক্সপেরিমেন্ট
- পানি ও তেলের ঘনত্ব পরীক্ষার প্রজেক্ট
- কাগজের নৌকা ও সারফেস টেনশন
- বেলুনের সাহায্যে স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি তৈরি
- লেবু দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এক্সপেরিমেন্ট
- আগ্নেয়গিরি তৈরি করার সহজ উপায়
- বোতলের ভিতর রেইনবো তৈরির পরীক্ষা
- সূর্যের আলো দিয়ে সৌর ওভেন তৈরি
- চুম্বকের শক্তি দিয়ে কাগজ ক্লিপ সরানো
- মোমবাতি ও গ্লাস দিয়ে অক্সিজেন টেস্ট
- বেলুন দিয়ে রকেট তৈরি
- পানি বিশুদ্ধ করার ছোট ফিল্টার মডেল
- রঙ পরিবর্তনকারী ফুলের এক্সপেরিমেন্ট
- বেলুন দিয়ে শব্দ তরঙ্গ প্রমাণ
- বোতলে ঘূর্ণিঝড় তৈরি
- লবণ পানিতে ডিম ভাসানোর পরীক্ষা
- হাতের তৈরি কম্পাস তৈরি করার প্রজেক্ট
- পানি বাষ্পীভবন ও ঘনীভবনের মডেল
- আলুর সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রজেক্ট
- কাগজ দিয়ে উড়োজাহাজ ও এরোডাইনামিক্স টেস্ট
- কোকাকোলা ও মেনটস দিয়ে গ্যাসের চাপ প্রমাণ
- সাবানের বাবল দিয়ে রঙধনু প্রতিফলন দেখা
- ছোট সৌর শক্তি চালিত ফ্যান তৈরি
- বেলুন দিয়ে বায়ুর চাপ প্রমাণ
- গ্লাস পানিতে আলো ভেঙে যাওয়ার পরীক্ষা
- ঘরে তৈরি জলচাকা বানানো
- ঘরে তৈরি সহজ সার্কিট বোর্ড
- সোলার প্যানেলের সাহায্যে আলো জ্বালানো
- লেখকের মন্তব্যঃস্কুল প্রজেক্টের জন্য ৩০টি বিজ্ঞান এক্সপেরিমেন্ট
স্কুল প্রজেক্টের জন্য ৩০টি বিজ্ঞান এক্সপেরিমেন্ট
স্কুল প্রজেক্টের জন্য ৩০ বিজ্ঞান এক্সপেরিমেন্ট করা শুধু পড়াশোনাকে
মজার করে তোলে না বরং বাস্তব জীবনের সঙ্গে বিজ্ঞানকে যুক্ত করে শেখার সুযোগ
করে দেয়। ছোট বড় নানা ধরনের সহজ এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা
পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিজ্ঞান কিংবা পরিবেশবিদ্যার মতো বিষয়গুলো আরও
ভালোভাবে বুঝতে পারে।
স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞান পরীক্ষার মাধ্যমে শেখা অনেক বেশি
আকর্ষণীয় এবং মজার হয়। আমরা এমন কিছু বিজ্ঞান এক্সপেরিমেন্ট শেয়ার করবো যা
সহজ, সাশ্রয়ী এবং প্র্যাকটিক্যালি যা বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের জন্য এ
এক্সপেরিমেন্টগুলো শিক্ষামূলক হওয়ার পাশাপাশি সৃজনশীল চিন্তাভাবনা ও উদ্ভাবনী
ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
বিজ্ঞান এক্সপেরিমেন্ট করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি তাত্ত্বিক জ্ঞানকে
বাস্তবে রূপ দেয়। যেমন কাগজে পড়া রাসায়নিক বিক্রিয়া কেমন হয় তা যখন চোখের
সামনে দেখা যায় তখন সেটি মস্তিষ্কে দীর্ঘস্থায়ীভাবে গেঁথে যায়। তাছাড়া
শিক্ষার্থীরা যখন নিজের হাতে কোনো প্রজেক্ট বানায় তখন তাদের কৌতূহল,
আত্মবিশ্বাস এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
স্কুল প্রজেক্টে সাধারণত সহজে পাওয়া যায় এমন উপকরণ দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে
বলা হয় যাতে খরচ কম হয় এবং শেখার আগ্রহ বাড়ে। যেমন- লেবুর ব্যাটারি তৈরি,
আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ মডেল, জলের ছাঁকন পদ্ধতি, রঙ পরিবর্তনকারী রাসায়নিক
বিক্রিয়া কিংবা চৌম্বক ক্ষেত্র প্রদর্শনী ইত্যাদি। এই ধরনের এক্সপেরিমেন্ট
শুধু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নয় অভিভাবকদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
বর্তমান সময়ে অনেক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক গুগলে স্কুল প্রজেক্টের জন্য
বিজ্ঞান এক্সপেরিমেন্ট, সহজ সায়েন্স প্রজেক্ট আইডিয়া বা science fair project
in Bangla খোঁজে থাকেন। বিজ্ঞান প্রজেক্ট শুধু পরীক্ষার জন্য না বরং এটি
আপনার বাচ্চার সৃজনশীলতা, কল্পনা ও জ্ঞানকে একত্রিত করে। স্কুলের প্রতিটি
এক্সপেরিমেন্টই শিশুদের ভবিষ্যতের বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তাধারাকে গড়ে তোলে। তাই
প্রজেক্ট নির্বাচন করার সময় সহজ, নিরাপদ এবং শিক্ষামূলক বিষয় বেছে নেওয়া
উচিত।
পানি ও তেলের ঘনত্ব পরীক্ষার প্রজেক্ট
স্কুল প্রজেক্টের জন্য সবচেয়ে সহজ ও আকর্ষণীয় বিজ্ঞান এক্সপেরিমেন্টগুলোর
মধ্যে একটি হলো পানি ও তেলের ঘনত্ব পরীক্ষা। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে
শিক্ষার্থীরা সহজেই ঘনত্ব সম্পর্কে শিখতে পারে এবং কেন পানি ও তেল একসাথে
মিশে না তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানতে পারে।স্কুল প্রজেক্টের জন্য ৩০টি
বিজ্ঞান এক্সপেরিমেন্ট শিক্ষার্থীদের কৌতূহল, সৃজনশীলতা ও বাস্তব বিজ্ঞানের
জ্ঞান বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রথমে একটি স্বচ্ছ গ্লাসে পানি নিয়ে এর উপর ধীরে ধীরে কিছুটা ভোজ্য তেল
ঢালুন। দেখা যাবে তেল কখনোই পানির সাথে মিশছে না বরং উপরে ভেসে যাচ্ছে। এর
কারণ হলো তেলের ঘনত্ব পানির চেয়ে কম। পানি ভারী হওয়ায় নিচে থাকে আর তেল হালকা
হওয়ায় উপরে ভেসে থাকে।
এই পরীক্ষার মাধ্যমে ঘনত্বের ধারণা যেমন পরিষ্কার হয় তেমনি শিক্ষার্থীরা
মিশ্রণ এবং বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পর্কেও ধারণা পায়। তেল ও পানি দুটি ভিন্ন
ভিন্ন তরল হওয়ায় এরা একে অপরের সাথে মিশে না। বিজ্ঞানের ভাষায় পানি একটি
পোলার পদার্থ আর তেল একটি নন পোলার পদার্থ। তাই এরা একে অপরের সাথে দ্রবীভূত
হতে পারে না।
আরোও পড়ুনঃ কিভাবে একটি মনিটাইজ ফেসবুক পেজ তৈরি করা যায়
স্কুল প্রজেক্টে এই এক্সপেরিমেন্ট খুব সহজে করা যায়, খরচও কম এবং এটি
দৃষ্টিনন্দনও বটে। শিশুরা নিজেরাই পর্যবেক্ষণ করতে পারে কিভাবে তরলের ঘনত্ব
ভিন্ন হলে স্তর তৈরি হয়। আপনি চাইলে এর সাথে বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করে এটিকে
আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন।
কাগজের নৌকা ও সারফেস টেনশন
কাগজের নৌকা ও সারফেস টেনশন এই পরীক্ষার মাধ্যমে পানির উপরিভাগে থাকা অদৃশ্য
বল বা সারফেস টেনশন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। সারফেস টেনশন হলো এমন
একটি প্রক্রিয়া যেখানে পানির অণুগুলো একে অপরকে শক্তভাবে ধরে রাখে ফলে পানির
উপরিভাগ একটি পাতলা ঝিল্লির মতো আচরণ করে। এজন্য আমরা দেখতে পাই হালকা
জিনিসপত্র যেমন-কাগজের নৌকা বা পোকামাকড় পানির উপর ভেসে থাকতে পারে।
এই এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য খুব বেশি উপকরণ লাগে না। কেবল একটি ছোট বাটি বা
গ্লাস ভর্তি পানি, একটি কাগজের নৌকা এবং সামান্য ডিটারজেন্ট বা সাবানই
যথেষ্ট। প্রথমে পানিতে কাগজের নৌকাটি ভাসিয়ে দিতে হবে। দেখা যাবে নৌকাটি
শান্তভাবে ভেসে আছে। এরপর নৌকার পিছনের দিকে এক ফোঁটা ডিটারজেন্ট দিলে সাথে
সাথেই নৌকাটি সামনে দিকে ছুটে যাবে।
এর কারণ হলো ডিটারজেন্ট পানির সারফেস টেনশন ভেঙে দেয়। নৌকার পেছনের অংশে
টেনশন কমে যায় কিন্তু সামনে টেনশন একই থাকে। এই পার্থক্যের কারণে নৌকাটি
তৎক্ষণাৎ সামনের দিকে চলে যায়। এই পরীক্ষাটি থেকে শিক্ষার্থীরা সহজেই শিখতে
পারে যে সারফেস টেনশন পানির ভৌত বৈশিষ্ট্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
এছাড়াও বোঝা যায় কেন সাবান বা ডিটারজেন্ট কাপড় পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
কারণ এগুলো পানির সারফেস টেনশন কমিয়ে দেয় ফলে ময়লা সহজে পরিষ্কার হয়। এই সহজ
বিজ্ঞান পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের শেখায় কিভাবে ছোট ছোট বৈজ্ঞানিক নিয়ম আমাদের
দৈনন্দিন জীবনের সাথে সম্পর্কিত।স্কুল প্রজেক্টের জন্য ৩০টি বিজ্ঞান
এক্সপেরিমেন্ট শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা আনন্দদায়ক করে তোলে এবং বাস্তব জীবনে
বিজ্ঞানের ব্যবহারিক দিক সহজে বোঝাতে সাহায্য করে।
বেলুনের সাহায্যে স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি তৈরি
স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি বা স্থির বিদ্যুৎ একটি মজার বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া যা
সহজেই বেলুনের সাহায্যে দেখানো যায়। যখন আমরা একটি বেলুনকে শুকনো চুল, উলের
কাপড় বা কার্পেটে ঘষি তখন ইলেকট্রন এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে স্থানান্তরিত
হয়। বেলুনের গায়ে অতিরিক্ত ইলেকট্রন জমে গিয়ে এটি নেগেটিভ চার্জযুক্ত হয়ে
যায়।
অন্যদিকে যেটার সঙ্গে ঘষা হয় সেটি পজিটিভ চার্জযুক্ত হয়। ফলে দুই বস্তুর
মধ্যে চার্জের পার্থক্যের কারণে একটি আকর্ষণ শক্তি তৈরি হয় যেটিকেই আমরা
স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি বলি। এই প্রক্রিয়াটি পরীক্ষা করার জন্য একটি সাধারণ
বেলুন এবং শুকনো কাপড় বা উলের সোয়েটার প্রয়োজন।
প্রথমে বেলুনটি ফোলাতে হবে এবং তারপর কয়েক সেকেন্ড ধরে কাপড়ে জোরে জোরে
ঘষতে হবে। ঘষার পর দেখা যাবে বেলুনটি দেয়ালে আটকে যাচ্ছে অথবা ছোট ছোট
কাগজের টুকরোকে আকর্ষণ করছে। এমনকি চুলের কাছে ধরলে চুলগুলো দাঁড়িয়ে যাবে।
এটি ঘটে কারণ চার্জযুক্ত বেলুন আশেপাশের নিরপেক্ষ বস্তুতে বিপরীত চার্জ
সৃষ্টি করে এবং সেই আকর্ষণ শক্তি বস্তুটিকে কাছে টেনে আনে।
এই ছোট্ট এক্সপেরিমেন্ট থেকে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি বিদ্যুতের মূল ধারণা
এবং চার্জের পারস্পরিক আকর্ষণ বিকর্ষণ। স্কুল প্রজেক্ট বা বিজ্ঞান মেলার জন্য
বেলুনের সাহায্যে স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি তৈরি একটি সহজ, আকর্ষণীয় এবং কম
খরচের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা।
লেবু দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এক্সপেরিমেন্ট
লেবু ব্যাটারি কি ঃ লেবুতে থাকা প্রাকৃতিক অ্যাসিডকে
ব্যবহার করে ছোট পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায়। এটি একটি কেমিক্যাল সেল বা
ব্যাটারি তৈরি করার মজার ও সহজ উপায়। স্কুল প্রজেক্ট বা বিজ্ঞান মেলার জন্য
এটি খুবই আকর্ষণীয় এবং শিক্ষামূলক।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- ১ বা ২ টি লেবু
- ১ টি তামা তার বা কয়েন
- ১ টি জিঙ্ক তার বা জিঙ্ক প্লেট
- কয়েকটি সংযোগ তার
- ছোট LED বা ঘড়ির ব্যাটারি
লেবু দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করার ধাপ ঃ লেবুগুলোতে দুটি ছোট
ছিদ্র করুন। একটি ছিদ্রে তামা অন্য ছিদ্রে জিঙ্ক ঢোকান। সংযোগ তার দিয়ে LED
বা ঘড়ির ব্যাটারির সঙ্গে লেবুর ইলেকট্রোড যুক্ত করুন তাহলে দেখতে পাবেন LED
জ্বলছে বা ঘড়ি কাজ করছে। যদি এক লেবুতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ না আসে একাধিক লেবু
সিরিজে সংযুক্ত করে LED বা ঘড়ি চালানো যায়।
লেবু ব্যাটারি কাজের বিজ্ঞান ঃলেবুর অ্যাসিড ধাতব ইলেকট্রোডের
সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন মুক্ত হয়
এবং ইলেকট্রনের প্রবাহ তৈরি হয়। ইলেকট্রন প্রবাহের কারণে LED জ্বলে বা ঘড়ি
কাজ করে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় স্ট্যাটিক বা কেমিক্যাল বিদ্যুৎ উৎপাদন।
সহজ ও কম খরচে ঘরে থাকা লেবু, কয়েন ও তার ব্যবহার করতে পারবেন। রাসায়নিক
বিক্রিয়া, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ইলেকট্রনের ধারণা বোঝায়। ছোট LED জ্বলে বা ঘড়ি
চালু হওয়ায় শিশুদের আগ্রহ বেড়ে যায়।
লেবু ব্যাটারি তৈরির টিপস ঃ লেবু ভালোভাবে ফোলা এবং তাজা
হলে ভালো হয়। তামা ও জিঙ্ক ইলেকট্রোড পরিষ্কার রাখলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশি
হয়। একাধিক লেবু সিরিজে সংযুক্ত করলে বড় LED বা ছোট বৈদ্যুতিক যন্ত্র
চালানো সম্ভব হয়।
আগ্নেয়গিরি তৈরি করার সহজ উপায়
আগ্নেয়গিরি একটি মজার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা যা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে
আগ্নেয়গিরির মতো লাভা বের হতে শেখায়। স্কুল প্রজেক্ট, বিজ্ঞান মেলা বা
শিশুদের জন্য এটি খুবই আকর্ষণীয় এবং সহজ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- ১ টি ছোট প্লাস্টিকের বোতল বা কাগজের ট্রে
- বেকিং সোডা
- ভিনেগার
- ঐচ্ছিক লাভার রঙের জন্য লবণ বা খাবার রঙ
- আগ্নেয়গিরির আকার তৈরি করার জন্য মাটি, রোল বা প্লাস্টার
আগ্নেয়গিরি তৈরি করার ধাপ ঃ প্লাস্টিকের বোতলটি মাঝখানে
রাখুন। বোতলের চারপাশে মাটি, রোল বা প্লাস্টার দিয়ে আগ্নেয়গিরির আকার তৈরি
করুন। বোতলে ২-৩ চামচ বেকিং সোডা দিন। চাইলে খাবার রঙ দিয়ে লাভার রঙ সুন্দর
করতে পারেন। এবার ভিনেগার ঢালুন। দেখবেন লাভা বের হচ্ছে এবং আগ্নেয়গিরির মতো
প্রভাব সৃষ্টি হচ্ছে।
এর বিজ্ঞান ব্যাখ্যা হলো বেকিং সোডা হলো একটি বেসিক পদার্থ আর ভিনেগার হলো
অ্যাসিডিক পদার্থ।
দুটি পদার্থ মিলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস তৈরি করে। গ্যাসের চাপ বোতল থেকে
বের হতে চাইলে লাবার মতো ফেনা বের হয়। এই প্রক্রিয়াকে বলা যায় রাসায়নিক
বিক্রিয়ার মাধ্যমে আগ্নেয়গিরি প্রদর্শন।
বোতলের ভিতর রেইনবো তৈরির পরীক্ষা
বোতলের ভিতর রেইনবো তৈরির পরীক্ষা হলো এমন একটি মজার বিজ্ঞান প্রজেক্ট যেখানে
পানির ঘনত্ব এবং আলোর প্রতিফলনের মাধ্যমে রঙের স্তর তৈরি হয়। এই পরীক্ষাটি
শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় এবং একই সঙ্গে পদার্থবিজ্ঞানের Density & Light
Refraction ধারণা বোঝার সহজ উপায়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- স্বচ্ছ প্লাস্টিক বা কাঁচের বোতল
- চিনি
- পানি
- খাবার রঙ -লাল, নীল, সবুজ, হলুদ ইত্যাদি
- চামচ
রেইনবো তৈরি করার ধাপ ঃ প্রথমে আলাদা আলাদা গ্লাসে পানি
নিন। প্রতিটি গ্লাসে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণে চিনি মিশিয়ে নিন। যেমন- প্রথম
গ্লাসে ১ চামচ, দ্বিতীয় গ্লাসে ২ চামচ, এভাবে বাড়াতে থাকুন। প্রতিটি গ্লাসে
ভিন্ন ভিন্ন খাবার রঙ দিন। এবার ধীরে ধীরে বেশি চিনিযুক্ত পানি বোতলের নিচে
ঢালুন। এরপরে কম চিনিযুক্ত রঙিন পানি আস্তে আস্তে উপরে ঢালুন। সাবধানে করলে
বোতলের ভেতরে সুন্দর রঙিন স্তর বা রেইনবোর মতো ধাপ তৈরি হবে।
এর বিজ্ঞান ব্যাখ্যা চিনির পরিমাণ যত বেশি হবে পানির ঘনত্ব তত বেশি হবে। বেশি
ঘনত্বের পানি নিচে থাকে এবং কম ঘনত্বের পানি উপরে ভেসে ওঠে। ভিন্ন ভিন্ন রঙের
কারণে পানির স্তর আলাদা আলাদা দেখা যায় এবং বোতলের ভেতরে রেইনবোর মতো সুন্দর
দৃশ্য তৈরি হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে Density Difference এবং Light
Refraction বোঝা যায়।
সূর্যের আলো দিয়ে সৌর ওভেন তৈরি
সৌর ওভেন হলো এমন একটি যন্ত্র যা সূর্যের আলোকে ব্যবহার করে তাপ তৈরি করে এবং
খাবার রান্না বা গরম করতে সক্ষম হয়। এটি একটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং
স্কুল প্রজেক্টের জন্য খুবই আকর্ষণীয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- একটি মাঝারি সাইজের কার্টুন বক্স Pizza Box ভালো হয়
- অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল
- কালো কাগজ
- স্বচ্ছ প্লাস্টিক শীট বা কাচ
- কাঁচি, টেপ ও আঠা
সৌর ওভেন তৈরির ধাপ ঃ প্রথমে কার্টুন বক্সের ঢাকনার মাঝখানে
একটি বর্গাকার কাটুন তবে এক পাশ না কেটে ফ্ল্যাপ আকারে রাখুন।
কাটা ফ্ল্যাপের ভেতরের অংশে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল লাগান যাতে সূর্যের আলো
প্রতিফলিত হয়। বক্সের নিচের অংশে কালো কাগজ লাগান। কালো রঙ বেশি তাপ শোষণ
করে।
কাটা অংশের উপরে স্বচ্ছ প্লাস্টিক শীট বা কাচ লাগান যাতে ভেতরে সূর্যের আলো
ঢুকে আটকে যায়। এখন খাবার যেমন বিস্কুট, চকলেট বা ছোট কিছু ভেতরে রেখে
বক্সটিকে রোদে রাখুন। ফয়েল যুক্ত ফ্ল্যাপ সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে ভেতরে
পাঠাবে এবং খাবার ধীরে ধীরে গরম হবে।
আরোও পড়ুনঃ How to become a pro in PUBG Mobile
অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে ভেতরে পাঠায়। কালো কাগজ
সূর্যের তাপ শোষণ করে। প্লাস্টিক শীট বা কাচ ভেতরের তাপ আটকে রাখে। এই
প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৌর শক্তিকে ব্যবহার করে রান্না করা যায়।
চুম্বকের শক্তি দিয়ে কাগজ ক্লিপ সরানো
চুম্বক হলো এমন একটি পদার্থ যা লোহা, ইস্পাত, নিকেল বা কোবাল্টের মতো ধাতুকে
আকর্ষণ করতে পারে। চুম্বকের দুই প্রান্তকে বলা হয় উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু।
চুম্বকের চারপাশে একটি অদৃশ্য শক্তিক্ষেত্র থাকে যাকে বলা হয় চৌম্বক
ক্ষেত্র। এই শক্তিই কাগজ ক্লিপ, পিন বা অন্যান্য ধাতব বস্তুকে টেনে আনে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- একটি শক্তিশালী চুম্বক
- কয়েকটি কাগজ ক্লিপ
- একটি টেবিল বা মসৃণ পৃষ্ঠ
পরীক্ষা করার ধাপ ঃ প্রথমে টেবিলের ওপর কয়েকটি কাগজ ক্লিপ
রাখুন। এবার চুম্বকটি আস্তে আস্তে কাগজ ক্লিপগুলোর কাছে আনুন। লক্ষ্য করবেন
কাগজ ক্লিপগুলো চুম্বকের দিকে টেনে আসছে এবং লেগে যাচ্ছে। চাইলে কাগজ
ক্লিপগুলো একটার পর একটা যুক্ত হয়ে চেইনের মতো ঝুলেও থাকতে পারে।
চুম্বক কাগজ ক্লিপের ভেতরের লোহাকে অস্থায়ী চুম্বকে রূপান্তরিত করে। ফলে
কাগজ ক্লিপও অন্য কাগজ ক্লিপকে আকর্ষণ করতে পারে। এই প্রক্রিয়াকেই বলা হয়
চৌম্বক প্রভাব। পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা চৌম্বক ক্ষেত্র এবং আকর্ষণ শক্তির
কার্যকারিতা বুঝতে পারি।
মোমবাতি ও গ্লাস দিয়ে অক্সিজেন টেস্ট
অক্সিজেন আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য গ্যাস। কিন্তু আমরা খালি চোখে
অক্সিজেন দেখতে পারি না। তাই বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে
প্রমাণ করেন যে আগুন জ্বালিয়ে রাখতে অক্সিজেন প্রয়োজন। মোমবাতি ও গ্লাসের
সাহায্যে অক্সিজেন টেস্ট একটি সহজ এবং আকর্ষণীয় পরীক্ষা, যা স্কুল প্রজেক্ট
বা বিজ্ঞান মেলার জন্য উপযুক্ত।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- একটি মোমবাতি
- একটি স্বচ্ছ গ্লাস
- একটি প্লেট
- পানি
পরীক্ষা করার ধাপ ঃ প্রথমে প্লেটের ওপর মোমবাতি দাঁড়
করান এবং চারপাশে অল্প পানি ঢেলে দিন।এবার মোমবাতি জ্বালিয়ে গ্লাসটি উল্টে
দিয়ে মোমবাতির ওপরে রাখুন। কিছু সময় পর লক্ষ্য করবেন মোমবাতির আগুন ধীরে
ধীরে নিভে গেছে এবং প্লেটের ভেতরের পানি গ্লাসের ভেতরে উঠে গেছে।
এই পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি আগুন জ্বালিয়ে রাখতে অক্সিজেন
অপরিহার্য। মোমবাতি জ্বলার জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন। গ্লাস দিয়ে ঢেকে দেওয়ার
পর ভেতরের অক্সিজেন দ্রুত পুড়ে যায়। অক্সিজেন শেষ হয়ে গেলে মোমবাতি নিভে
যায়। অক্সিজেন কমে যাওয়ায় ভেতরে চাপ কমে এবং বাইরের পানি গ্লাসের ভেতরে
উঠে আসে।
বেলুন দিয়ে রকেট তৈরি
বেলুন রকেট হলো একটি মজার বিজ্ঞান পরীক্ষা যেখানে বেলুন থেকে বের হওয়া
বাতাসের চাপকে ব্যবহার করে রকেটের মতো গতি সৃষ্টি করা হয়। এটি শিশুদের জন্য
আকর্ষণীয় ও শিক্ষামূলক প্রজেক্ট এবং স্কুলের বিজ্ঞান মেলা বা বাড়িতে শেখার
জন্য খুবই উপযোগী।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- একটি বড় বেলুন
- লম্বা একটি দড়ি
- একটি স্ট্র
- টেপ
বেলুন দিয়ে রকেট তৈরির ধাপ ঃ প্রথমে লম্বা দড়িটি দুই
প্রান্তে শক্তভাবে বেঁধে নিন যেমন-দুটি চেয়ারের সঙ্গে। দড়ির মধ্যে একটি
স্ট্র ঢুকিয়ে দিন। এবার স্ট্রের গায়ে একটি বেলুন টেপ দিয়ে ভালোভাবে আটকে
দিন। বেলুনটি ফোলান কিন্তু মুখ বেঁধে দেবেন না। এবার বেলুনের মুখ ছেড়ে দিন
এবং দেখুন বেলুনটি দড়ির ওপর দিয়ে রকেটের মতো ছুটে যাচ্ছে।
এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় নিউটনের তৃতীয় সূত্র। বেলুনের ভেতরে বাতাস জমে
থাকে। বেলুনের মুখ ছেড়ে দিলে বাতাস দ্রুত বের হয়ে যায়। বাতাসের চাপ
বেলুনকে বিপরীত দিকে ঠেলে দেয়।
পানি বিশুদ্ধ করার ছোট ফিল্টার মডেল
পানি জীবনধারার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু মাটির ময়লা, বালু,
কাদা বা জীবাণুর কারণে পানি প্রায়ই দূষিত হয়। তাই পানি বিশুদ্ধ করা অত্যন্ত
জরুরি। স্কুল প্রজেক্ট বা বিজ্ঞান মেলার জন্য একটি ছোট পানি ফিল্টার মডেল
তৈরি করা একটি আকর্ষণীয় এবং শিক্ষামূলক এক্সপেরিমেন্ট।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- একটি খালি প্লাস্টিকের বোতল
- পরিষ্কার তুলা বা কাপড়
- ছোট পাথর বা কংকর
- বালি
- কয়লা
- একটি গ্লাস ময়লা পানি
ফিল্টার মডেল তৈরির ধাপ ঃ প্রথমে প্লাস্টিকের বোতলের নিচের
অংশ কেটে নিন। বোতলটি উল্টিয়ে মুখের দিকে তুলা বা কাপড় দিয়ে আটকে দিন। তার
উপর একে একে স্তর তৈরি করুন প্রথমে কয়লা, তারপর বালি এরপর কংকর। এবার উপরে
থেকে ময়লা পানি ঢালুন। লক্ষ্য করবেন নিচ দিয়ে বের হওয়া পানি অনেকটা
পরিষ্কার হয়ে আসছে।
এর পিছনের বিজ্ঞান হলো কংকর ও পাথর বড় ময়লা আটকে রাখে। বালি ছোট ময়লা,
কাদা ও ধুলা ফিল্টার করে। কয়লা জীবাণু ও দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
তুলা বা কাপড় শেষ স্তরে ক্ষুদ্র কণাগুলো আটকায়। এভাবে স্তরভিত্তিক ফিল্টার
পানিকে বিশুদ্ধ করে।
রঙ পরিবর্তনকারী ফুলের এক্সপেরিমেন্ট
আপনি কি জানেন ফুলের রঙ পরিবর্তন করা যায়? এটি একটি চমৎকার বিজ্ঞান
এক্সপেরিমেন্ট, যেখানে গাছের ক্যাপিলারি অ্যাকশন ব্যবহার করে আমরা ফুলকে নতুন
রঙে দেখতে পারি। স্কুল প্রজেক্ট, শিশুদের জন্য বিজ্ঞান শেখানো কিংবা ঘরে বসে
মজার জন্য এই এক্সপেরিমেন্ট করা যায়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- সাদা রঙের ফুল যেমন - গ্লাডিওলাস, গোলাপ, টিউলিপ বা চন্দ্রমল্লিকা
- বিভিন্ন রঙের ফুড কালার লাল, নীল, সবুজ, হলুদ ইত্যাদি
- পানি ভর্তি কয়েকটি গ্লাস
- কাঁচি
এক্সপেরিমেন্ট করার ধাপ: প্রথমে সাদা ফুলগুলো সংগ্রহ করুন।
কয়েকটি গ্লাসে পানি নিয়ে তাতে ভিন্ন ভিন্ন ফুড কালার মিশিয়ে নিন। ফুলের
ডাঁটা কাঁচি দিয়ে তির্যকভাবে কেটে নিন যাতে পানি সহজে শোষণ করতে পারে। এখন
প্রতিটি ফুলকে আলাদা আলাদা রঙের পানিতে রাখুন। কয়েক ঘণ্টা বা রাতভর রেখে
দিন। দেখবেন ফুলের পাপড়িতে ধীরে ধীরে পানির রঙ ছড়িয়ে পড়ছে এবং ফুলের আসল
রঙ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।
এর পিছনের বিজ্ঞান হলো ফুলের ডাঁটার ভেতরে ক্ষুদ্র নালী জায়লেম থাকে যেগুলো
ক্যাপিলারি অ্যাকশন এর মাধ্যমে পানি টেনে তোলে। যখন আমরা পানিতে রঙ মিশাই তখন
সেই রঙও ফুলের ভেতরে চলে যায়। ফলে ফুলের পাপড়িতে রঙ পরিবর্তনের দৃশ্য দেখা
যায়।
বেলুন দিয়ে শব্দ তরঙ্গ প্রমাণ
আমরা সবাই জানি শব্দ আসলে এক ধরনের তরঙ্গ, যা বাতাস, পানি বা যেকোনো মাধ্যমের
মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু শব্দ যে সত্যিই তরঙ্গ আকারে চলে, তা সহজে
বোঝানোর জন্য বেলুনের সাহায্যে শব্দ তরঙ্গের প্রমাণ দেখানো যায়। এটি স্কুল
প্রজেক্ট ও বিজ্ঞান মেলার জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি পরীক্ষা।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ একটি বড় ফোলানো বেলুন। একটি ঘড়ি বা
টিকটিক শব্দ করা যন্ত্র। একটি টেবিল বা শান্ত পরিবেশ। এক্সপেরিমেন্ট করার
ধাপ। প্রথমে একটি বেলুন ভালোভাবে ফোলান। এবার ঘড়ি বা টিকটিক শব্দ করা
যন্ত্রটিকে বেলুনের সাথে লাগান। বেলুনটিকে কানে ধরে রাখুন। সাধারণভাবে শোনা
শব্দের তুলনায় বেলুনে কানে রাখলে শব্দ অনেক স্পষ্ট ও জোরে শোনা যায়।
এর পিছনের বিজ্ঞান শব্দ তরঙ্গ বাতাসের অণুগুলোর কম্পনের মাধ্যমে ছড়িয়ে
পড়ে। যখন আমরা বেলুন ব্যবহার করি তখন বেলুনের পাতলা রাবারের স্তর শব্দ
তরঙ্গকে আরও বেশি কম্পিত করে এবং তা কানে পৌঁছে দেয়। ফলে শব্দ অনেক বেশি
স্পষ্ট শোনা যায়। এটি প্রমাণ করে যে শব্দ তরঙ্গ আকারে ছড়ায় এবং ভিন্ন
ভিন্ন মাধ্যমে তার তীব্রতা পরিবর্তিত হয়।
বোতলে ঘূর্ণিঝড় তৈরি
ঘূর্ণিঝড় প্রকৃতির এক ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তবে আমরা চাইলে খুব সহজে
একটি ছোট্ট ঘূর্ণিঝড় বোতলের ভিতরে তৈরি করতে পারি। এটি শুধু মজার একটি
এক্সপেরিমেন্ট না বরং ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিজ্ঞান প্রজেক্টে অসাধারণ আইডিয়া।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- ২টি স্বচ্ছ প্লাস্টিক বোতল
- পানি
- বোতল আটকানোর জন্য ডাকটেপ
- ঘূর্ণিঝড়কে আরও আকর্ষণীয় দেখাতে গ্লিটার বা রঙিন গুঁড়া
এক্সপেরিমেন্ট করার ধাপ ঃপ্রথমে একটি বোতলে প্রায় পুরোটা পানি
ভরুন শুধু ১/১০ অংশ খালি রাখুন। চাইলে এর মধ্যে সামান্য গ্লিটার বা রঙিন
গুঁড়া মিশিয়ে দিন। এখন অন্য বোতলটি খালি রেখে প্রথম বোতলের মুখে উল্টো করে
বসান। দুটি বোতলের মুখ ভালোভাবে ডাকটেপ দিয়ে আটকান যেন পানি বের না হয়। এবার
বোতল দুটো উল্টে ধরুন যেন পানিভরা বোতল উপরে থাকে।
ধীরে ধীরে বোতলটি ঘুরিয়ে একটি ভরপাকানো গতি দিন।দেখা যাবে পানি ঘূর্ণায়মান
হয়ে একটি ছোট ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘূর্ণি তৈরি করবে। এর পিছনের বিজ্ঞান ঘূর্ণিঝড়
তৈরি হয় বাতাসের চাপের পার্থক্য ও ঘূর্ণনগতির কারণে।
বোতলের এই এক্সপেরিমেন্টে যখন আপনি বোতল ঘুরিয়ে দেন তখন পানি নিচে নামতে গিয়ে
বৃত্তাকারে ঘুরতে শুরু করে। এর ফলে একটি vortex তৈরি হয় যা দেখতে একদম
ঘূর্ণিঝড়ের মতো। এটি প্রমাণ করে যে প্রকৃতির ঘূর্ণিঝড়ও আসলে একই নীতিতে
তৈরি হয় – বায়ুর চাপ ও ঘূর্ণন শক্তির কারণে।
লবণ পানিতে ডিম ভাসানোর পরীক্ষা
বিজ্ঞান শেখার সবচেয়ে মজার উপায় হলো ছোট ছোট এক্সপেরিমেন্ট করা। তার মধ্যে
একটি জনপ্রিয় পরীক্ষা হলো লবণ পানিতে ডিম ভাসানো। সাধারণ পানিতে ডিম ডুবে যায়
কিন্তু লবণ মেশানো পানিতে ডিম ভেসে ওঠে। কেন এমন হয়? আসুন জেনে নেই।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- একটি কাঁচা ডিম
- একটি স্বচ্ছ গ্লাস বা বাটি
- পানি
- লবণ
- একটি চামচ
এক্সপেরিমেন্ট করার ধাপ ঃ একটি গ্লাসে সাধারণ পানি নিন। এখন
এর মধ্যে ডিমটি আলতো করে ছেড়ে দিন। দেখা যাবে ডিমটি নিচে ডুবে যাচ্ছে। এবার
একই গ্লাসে ধীরে ধীরে কয়েক চামচ লবণ যোগ করুন এবং ভালোভাবে নেড়ে মিশিয়ে দিন।
লবণের ঘনত্ব বাড়তে থাকলে লক্ষ্য করবেন, ডিমটি আস্তে আস্তে ভেসে উঠছে।
এর পিছনের বিজ্ঞান এই পরীক্ষার মূল বিজ্ঞান হলো ঘনত্বের পার্থক্য। ডিমের
ঘনত্ব পানির চেয়ে বেশি হওয়ায় সাধারণ পানিতে এটি ডুবে যায়। কিন্তু যখন পানিতে
লবণ মেশানো হয়, তখন পানির ঘনত্ব বেড়ে যায়। লবণ পানির ঘনত্ব ডিমের চেয়ে
বেশি হয়ে গেলে ডিম ভেসে ওঠে। এটি প্রমাণ করে যে কোনো বস্তু পানিতে ভাসবে না
ডুববে তা নির্ভর করে বস্তু ও তরলের ঘনত্বের উপর।
হাতের তৈরি কম্পাস তৈরি করার প্রজেক্ট
কম্পাস হলো এমন একটি যন্ত্র যা আমাদের দিকনির্দেশনা চিহ্নিত করতে সাহায্য
করে। সাধারণ কম্পাসে একটি চুম্বকযুক্ত সূচ থাকে যা সর্বদা উত্তরের দিকে
নির্দেশ করে। স্কুল প্রজেক্ট বা শিশুদের জন্য এটি তৈরি করা খুবই সহজ এবং
শিক্ষণীয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- একটি ছোট চুম্বক
- একটি ছোট সূচ বা পিন
- একটি ছোট প্লাস্টিক বা কাঠের ঢাকনা
- পানি
- কাগজ, টেপ
কম্পাস তৈরি করার ধাপ ঃ প্রথমে সূচ বা পিনটি চুম্বকের সঙ্গে
কয়েকবার ঘষে চুম্বকিত করুন। এরপর বাটির ঢাকনায় পানি ঢালুন। চুম্বকিত
সূচটিকে পানি ভর্তি ঢাকনার ওপর রাখুন। সূচটি ধীরে ধীরে স্থির হয়ে যাবে এবং
উত্তরের দিকে নির্দেশ করবে।
চাইলে সূচের চারপাশে কাগজের ওপর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম চিহ্ন আঁকতে
পারেন।এর পিছনের বিজ্ঞান সূচটি চুম্বকিত হওয়ায় এটি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র
অনুভব করে। ফলে সূচ সর্বদা উত্তর-দক্ষিণ দিকে স্থিত হয়। এটি মূলত নিউটনের
তৃতীয় সূত্র এবং চুম্বক শক্তি এর সমন্বয়ে কাজ করে।
পানি বাষ্পীভবন ও ঘনীভবনের মডেল
পানি যে শুধু তরল অবস্থায় থাকে তা নয়। এটি গ্যাসে ও কঠিন বা তরল ঘন
অবস্থায় ঘনীভবন রূপান্তরিত হতে পারে। ছোটদের জন্য পানি বাষ্পীভবন ও ঘনীভবনের
মডেল তৈরি করা খুবই শিক্ষামূলক। এটি স্কুল প্রজেক্টে, বিজ্ঞান মেলায় বা ঘরে
শেখার জন্য সহজভাবে করা যায়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- একটি স্বচ্ছ কাচের বাটি
- ছোট প্লাস্টিক বা কাচের ঢাকনা
- পানি
- চুলা বা হিটিং প্লেট
- বরফের টুকরা
এক্সপেরিমেন্ট করার ধাপঃ
বাষ্পীভবন দেখার জন্য বাটিতে পানি নিন এবং চুলা বা হিটিং প্লেটে গরম করুন।
পানি ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হলে ছোট ছোট বুদবুদ উঠতে শুরু করবে। লক্ষ্য করুন পানি
গরম হয়ে ধীরে ধীরে বাষ্পে রূপান্তরিত হচ্ছে।
ঘনীভবন দেখার জন্য কাচের ঢাকনায় বরফের টুকরা রাখুন। গরম পানির উপর ঢাকনাটি
রাখুন। কিছু সময় পর দেখবেন ঢাকনার ভেতরে বাষ্প সংরক্ষিত হয়ে পানি বা টুকরো
জল হিসেবে জমে যাচ্ছে। এটি বাষ্পের ঘনীভবন।
এর পিছনের বিজ্ঞান বাষ্পীভবন যখন পানি উত্তপ্ত হয় তখন তার অণু দ্রুতগতিতে
চলতে থাকে এবং বাষ্প আকারে বাতাসে চলে যায়। ঘনীভবন বাষ্প ঠান্ডা পৃষ্ঠের
সঙ্গে ছোঁয়ায় জলবিন্দুতে রূপান্তরিত হয়।এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা
প্রকৃতির জলচক্রের একটি ছোট মডেল দেখতে পাই।
আলুর সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রজেক্ট
আলু ব্যবহার করে ছোট পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদন একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞান পরীক্ষা।
এটি শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় এবং স্কুল প্রজেক্টে দারুণ। পরীক্ষার মাধ্যমে
বোঝা যায় কিভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- একটি বড় আলু
- একটি তামা তার
- একটি জিঙ্ক পিন বা দস্তা
- ছোট LED বাতি
- তামা ও জিঙ্কের সংযোগের জন্য প্লাস্টিক বা টেপ
প্রজেক্ট করার ধাপ ঃ আলুর দুই পাশে তামা তার এবং জিঙ্ক পিন
প্রবেশ করান। LED বাতির দুই তার আলুর তামা ও জিঙ্কের সঙ্গে সংযুক্ত করুন।
দেখবেন LED বাতি আলুর রাসায়নিক শক্তির মাধ্যমে উজ্জ্বল হতে শুরু করছে।
লক্ষ্য করা বিষয় হলো LED বাতি সম্পূর্ণ আলুর শক্তিতে খুব উজ্জ্বল হবে না তবে
ছোট দীপ্তি দেখা যায়।
চাইলে একাধিক আলু সিরিজে সংযুক্ত করলে LED আরও ভালোভাবে জ্বলে। এর পিছনের
বিজ্ঞান আলুর ভেতরের অ্যাসিড এবং ধাতব তামা ও জিঙ্কের মধ্যে রাসায়নিক
বিক্রিয়া ঘটে। এই বিক্রিয়ায় ইলেকট্রনের স্থানান্তর ঘটে এবং বিদ্যুৎ উৎপন্ন
হয়। এটি রাসায়নিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তর করার একটি উদাহরণ।
কাগজ দিয়ে উড়োজাহাজ ও এরোডাইনামিক্স টেস্ট
কাগজের উড়োজাহাজ বানানো একটি মজার এবং শিক্ষণীয় বিজ্ঞান পরীক্ষা। এর
মাধ্যমে শুধু আনন্দ পাওয়া যায় না বরং এরোডাইনামিক্স বা বায়ু গতির বিজ্ঞান
শেখার সুযোগও পাওয়া যায়। এটি শিশুদের জন্য স্কুল প্রজেক্ট বা বিজ্ঞান
মেলায় খুবই আকর্ষণীয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- একটি পাতলা কাগজ
- স্কিসর
- টেপ
- একটি খোলা স্থান বা ঘর
কাগজের উড়োজাহাজ বানানোর ধাপ ঃ কাগজটি অর্ধেক ভাঁজ করুন
এবং বিভিন্ন ডিজাইনের ভাঁজ করে নাকের অংশ তৈরি করুন। দুই পাশ ভাঁজ করে পাখার
আকার দিন। চাইলে টেপ ব্যবহার করে নাক বা পাখা শক্তভাবে আটকে দিন। এবার
উড়োজাহাজটি হালকা হাতের জোরে ছুড়ে দিন।
এরোডাইনামিক্স টেস্ট উড়োজাহাজের নাক, পাখা এবং ওজন পরিবর্তন করে লক্ষ্য
করুন, উড়ানের দূরত্ব ও স্থায়িত্বে কী প্রভাব পড়ে। ভিন্ন আকারের
উড়োজাহাজের তুলনা করে দেখুন কোনটি বেশি দূরত্বে যায় এবং কোনটি বেশি সময়
স্থিত থাকে। এর মাধ্যমে বায়ু প্রবাহ, ঘর্ষণ ও ভারসাম্য সম্পর্কে ধারণা
পাওয়া যায়।
এর পিছনের বিজ্ঞান লিফট উড়োজাহাজের পাখা বাতাসকে তাড়িয়ে উপরের দিকে
উঠতে সাহায্য করে। ড্র্যাগ বাতাসের প্রতিরোধ উড়োজাহাজকে ধীর করে। ওজন এবং
থ্রাস্ট নাকের ওজন এবং ছোঁড়ার শক্তি উড়োজাহাজের গতিকে প্রভাবিত করে। এই
পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা ছোট কাগজের মডেলের মাধ্যমে বায়ু গতির মৌলিক নীতি
বোঝতে পারি।
কোকাকোলা ও মেনটস দিয়ে গ্যাসের চাপ প্রমাণ
কোকাকোলা এবং মেন্টস দিয়ে একটি সহজ এবং দারুণ মজার বিজ্ঞান পরীক্ষা করা
যায়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায় গ্যাসের চাপ কিভাবে কাজ করে। এটি
শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় এবং স্কুল প্রজেক্ট বা বিজ্ঞান মেলায় প্রদর্শনের
জন্য দারুণ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- ১ বোতল কোকাকোলা
- কিছু মেন্টস ক্যান্ডি
- একটি বড় জায়গা
এক্সপেরিমেন্ট করার ধাপ ঃ কোকাকোলার বোতলটি উল্টে রাখুন বা
স্থির করে রাখুন। কয়েকটি মেন্টস ক্যান্ডি ধীরে ধীরে বোতলের মধ্যে ফেলুন।
কিছু সেকেন্ডের মধ্যে লক্ষ্য করুন, কোকাকোলা থেকে গ্যাস বের হয়ে ঝলস করে বের
হচ্ছে এবং ফোটা উঠে যাচ্ছে। এর পিছনের বিজ্ঞান কোকাকোলাতে কার্বনডাই অক্সাইড
থাকে। মেন্টস ক্যান্ডির পৃষ্ঠে ছোট ছোট খাঁজ থাকে।
যখন ক্যান্ডি বোতলে পড়ে, গ্যাস দ্রুত সেই খাঁজের মাধ্যমে বুদবুদ তৈরি করে।
বুদবুদের সংখ্যার বৃদ্ধি বোতলের ভেতরের চাপ বাড়ায়। চাপ বেড়ে গেলে ফোটা উঠে
এবং কোকাকোলা বাইরে বের হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা সহজে বোঝাতে পারি
গ্যাস চাপ এবং বুদবুদের বৃদ্ধি কিভাবে কাজ করে।
সাবানের বাবল দিয়ে রঙধনু প্রতিফলন দেখা
সাবানের বাবল শুধু মজা দেয় না বরং এটি বিজ্ঞান শেখার একটি চমৎকার উপায়।
সাবানের পাতলা ঝিল্লিতে রঙের খেলা বা রঙধনু প্রতিফলন সহজে দেখা যায়। স্কুল
প্রজেক্ট বা শিশুদের জন্য এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- সাবানের জল -সাবান + পানি + সামান্য গ্লিসারিন মিশিয়ে নিন
- বাবল তৈরির জন্য স্ট্র বা ছোট রিং
- সূর্যালোক বা শক্ত আলো
- রঙ স্পষ্টভাবে দেখতে একটি অন্ধকার বা ছায়াযুক্ত স্থান
এক্সপেরিমেন্ট করার ধাপ ঃ স্ট্র বা রিংটি সাবানের জলে
ডুবিয়ে নিন। আস্তে আস্তে রিং থেকে বাবল তৈরি করুন। সূর্যালোক বা শক্ত আলো
ব্যবহার করে বাবলকে আলোতে ধরুন। দেখবেন বাবলের ঝিল্লিতে রঙধনুর মতো আলোর
প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।
এর পিছনের বিজ্ঞান সাবানের ঝিল্লি খুব পাতলা এবং তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। আলো
ঝিল্লির উপর পড়ে প্রতিফলিত হয় এবং বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো পৃথকভাবে
প্রতিফলিত হয়। ফলে আমরা বাবলের ঝিল্লিতে রঙধনু দেখতে পাই। এটি আলোক
প্রতিসরণের এবং ইন্টারফেরেন্স এর একটি চমৎকার উদাহরণ।
ছোট সৌর শক্তি চালিত ফ্যান তৈরি
ছোট সৌর শক্তি চালিত ফ্যান তৈরি করা একটি মজার এবং শিক্ষণীয় বিজ্ঞান
পরীক্ষা। এটি শিশুদের জন্য সৌর শক্তি ও নবায়নযোগ্য শক্তি বোঝার সহজ উপায়।
স্কুল প্রজেক্ট বা বিজ্ঞান মেলায় এটি খুবই আকর্ষণীয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- একটি ছোট DC মোটর
- একটি ছোট সোলার প্যানেল 5V বা 6V
- ফ্যানের ব্লেড প্লাস্টিক বা কাগজ থেকে তৈরি করা
- তামার তার বা সংযোগকারী তার
- টেপ বা হালকা প্লাস্টিক স্ট্যান্ড
ফ্যান তৈরি করার ধাপ ঃ DC মোটর এর সঙ্গে ফ্যানের ব্লেড
সংযুক্ত করুন। সোলার প্যানেল থেকে মোটরের সঙ্গে তার ব্যবহার করে সংযোগ করুন।
সূর্যালোক বা শক্ত আলোতে ফ্যানটি রাখুন। দেখা যাবে ফ্যানটি সৌর শক্তিতে ঘুরতে
শুরু করবে।
এর পিছনের বিজ্ঞান সোলার প্যানেল সূর্যের আলোকে বিদ্যুতিতে রূপান্তর করে। DC
মোটর সেই বিদ্যুৎ গ্রহণ করে এবং যান্ত্রিক শক্তি উৎপন্ন করে যা ফ্যান ঘোরাতে
সাহায্য করে। এটি সৌর শক্তির ব্যবহার এবং নবায়নযোগ্য শক্তি বোঝার একটি সরল
উদাহরণ।
বেলুন দিয়ে বায়ুর চাপ প্রমাণ
আমরা প্রতিদিন বায়ুর চাপ অনুভব করি কিন্তু সেটা চোখে দেখা যায় না। একটি
সাধারণ বেলুন দিয়ে বায়ুর চাপ প্রমাণ করা যায়। এই পরীক্ষা স্কুল প্রজেক্ট,
বিজ্ঞান মেলা বা বাড়িতে ছোটদের শেখানোর জন্য খুব সহজ ও আকর্ষণীয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- একটি বেলুন
- একটি খালি গ্লাস/জলভর্তি গ্লাস
- রাবার ব্যান্ড
পরীক্ষার ধাপ ঃ একটি বেলুন ফোলান এবং মুখ ভালোভাবে বাঁধুন।
এবার একটি খালি গ্লাস বা পানিভর্তি গ্লাসের মুখে বেলুনটি চেপে ধরুন। গ্লাস
উল্টে ধরুন এবং বেলুনটি গ্লাসের মুখে আটকে রাখুন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে
গ্লাসটি উল্টে থাকলেও পানি বাইরে বের হবে না বা বেলুনটি গ্লাসের মুখে
শক্তভাবে লেগে থাকবে।
এর পিছনের বিজ্ঞান পৃথিবীর চারপাশে সবসময় বায়ুর চাপ বিদ্যমান। যখন বেলুন
গ্লাসের মুখে চাপিয়ে ধরা হয় তখন বাইরের বায়ুর চাপ ভেতরের পানিকে ঠেলে ধরে
রাখে। এইভাবে বোঝা যায় যে বায়ুর চাপ আমাদের চারপাশে সবসময় কাজ করছে।
গ্লাস পানিতে আলো ভেঙে যাওয়ার পরীক্ষা
আমরা প্রতিদিন আলো ব্যবহার করি কিন্তু আলো কিভাবে ভাঙে বা দিক পরিবর্তন করে
সেটা অনেকেই জানি না। আলো ভাঙার এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় আলোর অপবর্তন। একটি
সাধারণ গ্লাস পানিতে আলো ভেঙে যাওয়ার পরীক্ষা করে আমরা সহজেই এটি প্রমাণ করতে
পারি।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- স্বচ্ছ গ্লাস
- পরিষ্কার পানি
- একটি কলম, চামচ বা পেন্সিল
- আলো ফেলার জন্য জানালা বা টর্চ লাইট
পরীক্ষার ধাপ ঃ একটি স্বচ্ছ গ্লাসে পানি ভরে নিন। এবার সেই
গ্লাসে একটি কলম বা পেন্সিল ঢুকিয়ে রাখুন। বাইরের দিক থেকে গ্লাসে তাকালে
লক্ষ্য করবেন, পানির ভেতরে থাকা কলমটি ভাঙা বা বাঁকা দেখাচ্ছে। আলোর উৎস
পরিবর্তন করলে যেমন টর্চ লাইট ব্যবহার করলে এই ভাঙা দৃশ্য আরও স্পষ্ট হবে।
এর পিছনের বিজ্ঞান আলো সবসময় সোজা পথে চলে। কিন্তু যখন আলো এক মাধ্যম থেকে
অন্য মাধ্যমে যায় যেমন বাতাস থেকে পানি তখন এর গতি পরিবর্তিত হয়। এই গতি
পরিবর্তনের ফলে আলো বেঁকে যায় এবং বস্তুটি ভাঙা বা বাঁকা মনে হয়। এটিই আলোর
অপবর্তন।
ঘরে তৈরি জলচাকা বানানো
জলচাকা হচ্ছে এক ধরনের প্রাচীন যন্ত্র যা পানির প্রবাহ ব্যবহার করে শক্তি
তৈরি করে। অতীতে এটি শস্য পিষতে, পানি তুলতে এবং যন্ত্র চালাতে ব্যবহৃত হতো।
আমরা চাইলে খুব সহজ উপায়ে ঘরে বসেই একটি ছোট জলচাকা তৈরি করতে পারি, যা
শিশুদের বিজ্ঞান প্রজেক্টের জন্য আদর্শ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- একটি প্লাস্টিক বোতল বা মোটা কার্ডবোর্ড
- কাঠি -স্ট্র বা আইসক্রিম স্টিক
- কাঁচি
- গ্লু বা সেলোটেপ
- পানি ঢালার জন্য মগ বা বোতল
জলচাকা তৈরির ধাপ ঃ প্রথমে বোতলের মাঝখান কেটে কয়েকটি সমান
আকারের ফালি তৈরি করুনপ্রতিটি ফালি জলচাকার পাখার মতো সাজিয়ে একটি গোলাকার
চাকার সাথে লাগান। মাঝখানে একটি কাঠি ঢুকিয়ে নিন, যাতে জলচাকা ঘুরতে পারে।
এবার কাঠিটিকে দুটি স্ট্যান্ড বা গ্লাসের ওপরে রেখে সেট করুন। মগ দিয়ে পানি
ঢাললে জলচাকা ঘুরতে শুরু করবে।
এর পিছনের বিজ্ঞান পানির প্রবাহ একটি বল তৈরি করে। এই বল জলচাকার পাখায় আঘাত
করে, ফলে চাকা ঘুরতে থাকে। এভাবে পানির প্রবাহ থেকে গতিশক্তি পাওয়া যায়।
অতীতে এই শক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ করা হতো, যা ছিল নবায়নযোগ্য শক্তির
একটি উৎস। স্কুল প্রজেক্টের জন্য ৩০টি বিজ্ঞান এক্সপেরিমেন্ট শিক্ষার্থীদের
নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক ধারণা আবিষ্কার ও শেখার সুযোগ করে দেয়।
ঘরে তৈরি সহজ সার্কিট বোর্ড
সার্কিট বোর্ড হলো বৈদ্যুতিক সংযোগের একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন উপাদান
বাল্ব, ব্যাটারি, সুইচ, রেজিস্টর ইত্যাদি একসাথে যুক্ত হয়ে কাজ করে। আমরা
চাইলে খুব সহজভাবে ঘরে বসেই একটি ছোট সার্কিট বোর্ড তৈরি করতে পারি। এটি
শিশুদের বিজ্ঞান মেলা বা স্কুল প্রজেক্টের জন্য দারুণ কার্যকরী।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- একটি ছোট কার্ডবোর্ড বা কাঠের টুকরা বোর্ড হিসেবে
- ব্যাটারি 1.5V বা 9V
- ছোট বাল্ব LED হতে পারে
- সুইচ
- কপার/ইলেকট্রিক ওয়্যার
- গ্লু বা টেপ
সার্কিট বোর্ড তৈরির ধাপ ঃ প্রথমে কার্ডবোর্ড বা কাঠের
টুকরোকে বোর্ড হিসেবে নিন। ব্যাটারি, বাল্ব ও সুইচকে বোর্ডে গ্লু বা টেপ দিয়ে
আটকে দিন। ব্যাটারির পজিটিভ (+) প্রান্ত থেকে তার নিয়ে বাল্বের একদিকে যুক্ত
করুন। ব্যাটারির নেগেটিভ (-) প্রান্ত থেকে সুইচ হয়ে আবার বাল্বের অপর দিকে
তার লাগান। এবার সুইচ অন করলে বাল্ব জ্বলে উঠবে, আর অফ করলে নিভে যাবে।
এর পিছনের বিজ্ঞান বিদ্যুৎ সবসময় বন্ধ সার্কিট দিয়ে প্রবাহিত হয়। যখন সুইচ অন
করা হয় তখন সার্কিট সম্পূর্ণ হয় এবং বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে বাল্ব জ্বলে ওঠে।
সুইচ অফ করলে সার্কিট ভেঙে যায় ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হয়।
সোলার প্যানেলের সাহায্যে আলো জ্বালানো
বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানির জন্য সোলার প্যানেল বর্তমানে খুবই
জনপ্রিয়। সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করে তা দিয়ে আমরা সহজেই ছোট বাল্ব বা
LED জ্বালাতে পারি। এটি একটি অসাধারণ বিজ্ঞান প্রজেক্ট, যা শিশুদের
নবায়নযোগ্য শক্তি সম্পর্কে ধারণা দেয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ঃ
- ছোট সোলার প্যানেল 3V-6V
- রিচার্জেবল ব্যাটারি
- LED বাল্ব বা ছোট লাইট
- তার
- সুইচ
- একটি ছোট বোর্ড/কার্ডবোর্ড
ধাপে ধাপে প্রজেক্ট তৈরির নিয়ম ঃ প্রথমে সোলার প্যানেলকে
বোর্ডে বসান। প্যানেল থেকে বের হওয়া তার ব্যাটারির সাথে যুক্ত করুন। ব্যাটারি
থেকে তার নিয়ে সুইচের সাথে যুক্ত করুন। সুইচ থেকে তার নিয়ে LED বাল্বে লাগান।
এবার প্যানেলকে সূর্যের আলোতে রাখুন। সূর্যের শক্তি বিদ্যুতে রূপান্তরিত হয়ে
LED বাল্ব জ্বালাবে।
এর পিছনের বিজ্ঞান সোলার প্যানেলের ভেতরে সোলার সেল থাকে যা সূর্যের আলোকে
বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে। এই বিদ্যুৎ সরাসরি LED বাল্বে পাঠানো যায় অথবা
ব্যাটারিতে জমিয়ে রাখা যায়। রাতে সেই ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে বাল্ব
জ্বালানো সম্ভব।
লেখকের মন্তব্যঃস্কুল প্রজেক্টের জন্য ৩০টি বিজ্ঞান এক্সপেরিমেন্ট
স্কুল প্রজেক্টের জন্য ৩০টি বিজ্ঞান এক্সপেরিমেন্ট হলো কৌতূহলের নাম। ছোট বড়
সবার মনেই থাকে পৃথিবী, প্রকৃতি আর প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার অদম্য ইচ্ছা।
স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিজ্ঞান প্রজেক্ট আমাদের কেবল পড়াশোনায় না
বরং চিন্তা করার ক্ষমতা, পর্যবেক্ষণ করার দক্ষতা এবং সমস্যা সমাধানের
মানসিকতা গড়ে তোলে।
এই প্রজেক্টগুলো তৈরি করার মাধ্যমে শিশুরা শুধু পরীক্ষার বই মুখস্থ করে না
বরং বাস্তব জীবনে বিজ্ঞানের প্রয়োগ বুঝতে শেখে। প্রতিটি এক্সপেরিমেন্ট সহজ
উপায়ে বিজ্ঞানকে হাতে-কলমে শেখার সুযোগ দেয়। আমার মতে, স্কুল প্রজেক্টের জন্য
এসব বিজ্ঞান এক্সপেরিমেন্ট শুধু শিক্ষামূলক না বরং শিশুর কল্পনাশক্তিকে
উন্মোচন করে।
এভাবে তৈরি হওয়া প্রজেক্ট শিশুদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, দলবদ্ধভাবে কাজ
করার অভ্যাস গড়ে তোলে এবং ভবিষ্যতে বিজ্ঞানমুখী চিন্তার ভিত্তি তৈরি করে। তাই
শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার অনুরোধ, বিজ্ঞানকে শুধু পরীক্ষার
খাতা না বরং খেলাধুলা ও আনন্দের মাধ্যম হিসেবে উপভোগ করুন। এতে করে শিশুদের
শেখা হবে আরও সহজ ও আনন্দময়। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।



অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url