চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়
সেন্টমার্টিন ভ্রমণ মানেই জীবনের একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।বাংলাদেশের একমাত্র
প্রবাল দ্বীপটি তার স্বচ্ছ নীল পানি, নারকেল গাছ আর নির্জন পরিবেশের জন্য
বিখ্যাত।অনেক পর্যটকই জানতে চান চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায় কী,
কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন ভাড়া কত।
কোন রুটে গেলে ভ্রমণটা সবচেয়ে সুবিধাজনক হবে।বিশেষ করে যারা কক্সবাজার, টেকনাফের
মাধ্যমে সেন্টমার্টিনে যেতে চান তাদের জন্য এই তথ্যগুলো জানা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ।এই গাইডে আমরা আলোচনা করবো চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার, টেকনাফ হয়ে
সেন্টমার্টিন যাওয়ার বিভিন্ন মাধ্যম, ভাড়া, সময় এবং ভ্রমণের সেরা টিপস।আসুন
তাহলে শুরু করি।
পেজ সূচিপত্র:চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়
- চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়
- চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার উপায়
- কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার পদ্ধতি
- টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়
- ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গেলে কেমন সুবিধা-অসুবিধা
- পরিবারের সাথে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত গাইড
- ব্যাকপ্যাকারদের জন্য সাশ্রয়ী ভ্রমণ পরিকল্পনা
- সেন্টমার্টিন যাওয়ার সেরা সময় ও ঋতু
- সেন্টমার্টিনে পৌঁছানোর পর করণীয়
- সেন্টমার্টিনে থাকা-খাওয়া ও হোটেল বুকিং
- স্থানীয় খাবার ও দ্বীপের বিখ্যাত জায়গাগুলো
- সেন্টমার্টিন ভ্রমণে করণীয় এবং বর্জনীয়
- লেখকের মন্তব্য:চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়
চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়
সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ যার নীল পানি, সাদা বালু আর
শান্ত প্রকৃতি ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে এক স্বপ্নের ঠিকানা।চট্টগ্রাম থেকে
সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথ যদিও সরাসরি নাই তবে কিছু ধাপ পেরিয়ে খুব সহজেই
আপনি পৌঁছে যেতে পারেন সেন্টমার্টিনের বুকে।
চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন যাওয়ার কোনো সরাসরি বাস, নৌরুট
কোনোটিই নেই।তাই আপনাকে প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার তারপর টেকনাফ এবং সেখান
থেকে জাহাজ বা ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন।এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নিরাপদ
রুট।এই গাইডে আমরা ধাপে ধাপে দেখাবো চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার, টেকনাফ এবং
সেন্টমার্টিন যাওয়ার পুরো প্রক্রিয়া।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার উপায়
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার বাস, ট্রেন, প্রাইভেটকার অথবা মাইক্রোবাস এর
মাধ্যমে যাওয়া যায়।সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সাশ্রয়ী মাধ্যম হচ্ছে বাস
ভ্রমণ।চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট, অক্সিজেন মোড় ও দোহাজারী থেকে সরাসরি
কক্সবাজারগামী বাস পাওয়া যায়।এসি ও নন-এসি দুই ধরণের বাসই চলাচল
করে।নন-এসি বাসের ভাড়া ৫৫০-৬৫০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৯০০-১২০০ টাকার
মধ্যে।যাত্রা সময় সাধারণত ৫-৬ ঘণ্টা লাগে।
বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প এর
আওতায় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিসও চালু হয়েছে।তবে
এটি এখনো পুরোপুরি বাণিজ্যিক পর্যটকদের জন্য চালু না হওয়ায় অধিকাংশ
যাত্রী বাসকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে।আপনার যদি নিজের গাড়ি থাকে তাহলে
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যেতে প্রায় ৪.৫-৫ ঘণ্টা সময় লাগবে।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার পদ্ধতি
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার যা সড়কপথে
আপনি ২ থেকে ২.৫ ঘণ্টার মধ্যে অতিক্রম করতে পারবেন।এই রুটে আপনি চাইলে
লোকাল মিনিবাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট হায়েস অথবা সিএনজি ব্যবহার করতে
পারেন।কক্সবাজার শহরের কলাতলী, বাস টার্মিনাল বা সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে
প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত টেকনাফগামী গাড়ি ছাড়ে।লোকাল বাসে
জনপ্রতি ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা।
আরোও পড়ুন:বাহরাইন যেতে কত টাকা লাগে ২০২৫
শেয়ার মাইক্রোবাসে ৩০০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।চাইলে আপনি প্রাইভেট
কার রিজার্ভ করেও যেতে পারেন যেখানে গাড়ির ভাড়া প্রায় ২০০০-২৫০০ টাকা
পর্যন্ত পড়তে পারে।পথটি মোটামুটি ভালো এবং নিরাপদ হলেও বর্ষাকালে কিছু
কিছু জায়গায় কাদাযুক্ত ভাঙা রাস্তা পেতে পারেন তাই সেই সময় একটু সতর্ক
থাকতে হয়।যাত্রা শুরুর আগে কক্সবাজার থেকে টেকনাফের বাস বা মাইক্রো
সার্ভিস সম্পর্কে আগেভাগে খোঁজ নিয়ে রাখলে আপনার জন্য ভালো হবে।
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়
সেন্টমার্টিন যাওয়ার একমাত্র নির্ভরযোগ্য পথ হলো টেকনাফ থেকে নৌপথে জাহাজ
বা ট্রলারে যাত্রা। টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে প্রতিদিন শীত মৌসুমে
অক্টোবর থেকে মার্চ নিয়মিত যাত্রীবাহী জাহাজ ও স্পিডবোট চলাচল করে।সবচেয়ে
জনপ্রিয় ও নিরাপদ মাধ্যম হলো কেয়ারি সিন্দবাদ , Atlantic Cruise,
Karnafuly Express ইত্যাদি প্যাসেঞ্জার জাহাজগুলো।
জাহাজে যেতে সময় লাগে প্রায় ২ থেকে ২.৫ ঘণ্টা এবং ভাড়া নির্ভর করে
ক্লাসের উপর।ডেকে সাধারণত ৫৫০-৬৫০ টাকা আর কেবিনে ১০০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত
হতে পারে।অন্যদিকে যদি আপনি দ্রুত যেতে চান তাহলে স্পিডবোট ব্যবহার করতে
পারেন।এটি মাত্র ১-১.৫ ঘণ্টায় আপনাকে পৌঁছে দেবে তবে তুলনামূলকভাবে খরচ
বেশি এবং ঝাঁকুনিও বেশি।এছাড়া কিছু পর্যটক ট্রলার ব্যবহার করেন যা সস্তা
হলেও সাগর উত্তাল থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
টিকিট আপনি অনলাইনে Shohoz,
Obhai, অথবা
Keari official site বা
টেকনাফ ঘাটে সরাসরি গিয়েও সংগ্রহ করতে পারেন।যাত্রার আগে আবহাওয়ার খবর
জেনে নেওয়া জরুরি কারণ প্রতিকূল আবহাওয়ায় জাহাজ চলাচল বন্ধ
থাকে।নৌযানগুলো সকাল ৯:০০-১০:০০টার মধ্যে ছাড়ে এবং বিকেলে সেন্টমার্টিন
থেকে ফিরে আসে।
ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গেলে কেমন সুবিধা-অসুবিধা
চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের পথে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করলে
অনেক সুবিধা পাওয়া যায় তবে কিছু অসুবিধাও আছে।সুবিধার দিক থেকে দেখলে
নিজের গাড়িতে করে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ রুটে আপনি ভ্রমণ
করতে পারবেন সম্পূর্ণ নিজের সময় ও আরাম অনুযায়ী।রাস্তায় ইচ্ছেমতো
বিরতি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে
পারবেন।যাত্রীদের সংখ্যা বেশি হলে ব্যক্তিগত গাড়ি খরচেও সাশ্রয়ী হয়।
তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অসুবিধাও রয়েছে।টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে
নৌপথ ব্যবহার করতে হয় তাই গাড়িটি টেকনাফেই পার্ক করে যেতে হবে।টেকনাফে
নিরাপদ পার্কিং সুবিধা সীমিত এবং নির্ভরযোগ্য পার্কিং খোঁজে বের করা
সময়সাপেক্ষ হতে পারে।এছাড়া দীর্ঘ যাত্রার ফলে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ,
ফুয়েল খরচ এবং রাস্তার গর্ত ও দুর্গম এলাকায় গাড়ি চালানোর ঝুঁকিও থাকে।
যদি আপনি পরিবারসহ আরামদায়ক ও স্বাধীনভাবে ভ্রমণ করতে চান তাহলে
ব্যক্তিগত গাড়ি ভালো অপশন।তবে ভ্রমণের আগে টেকনাফে নিরাপদ পার্কিং ও
রাস্তার পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিয়ে যাওয়ায় বুদ্ধিমানের কাজ
হবে।
পরিবারের সাথে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত গাইড
পরিবারের সঙ্গে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে গেলে কিছু বিষয় মাথায় রাখা
জরুরি যাতে পুরো যাত্রা আরামদায়ক ও স্মরণীয় হয়।প্রথমত পরিবারের সকল
সদস্যের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শিশু এবং
বয়স্কদের জন্য হালকা ও আরামদায়ক পোশাক, সানস্ক্রিন ও পর্যাপ্ত পানীয়
রাখুন।ভ্রমণের সময় শিশুদের নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
ট্রান্সপোর্ট হিসেবে পরিবারের জন্য মাইক্রোবাস ব্যবহার করলে যাত্রা
সুবিধাজনক হয় কারণ এতে সবার জন্য বসার ব্যবস্থা নিশ্চিত হয় এবং যাত্রার
সময় নিজেদের সুবিধামতো বিরতি নেওয়া যায়।কক্সবাজার থেকে টেকনাফ এবং
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার সময় জাহাজে উঠে আরামদায়ক কেবিন বেছে
নেওয়া উচিত।
পরিবারের জন্য আগে থেকে হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং করে রাখা জরুরি বিশেষ করে
পিক সিজনে।শিশু ও প্রবীণদের সুবিধার্থে নিরাপদ ও পরিষ্কার পরিবেশ নিশ্চিত
করা উচিত।দ্বীপে থাকার সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামুদ্রিক খাবার
গ্রহণে সতর্ক থাকতে হবে।ভ্রমণের পূর্বে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে যাত্রার
দিন নির্ধারণ করুন।পরিবারের সঙ্গে সুখকর সময় কাটাতে ধৈর্য ও পরিকল্পনা
করে নিরাপত্তা বজায় থাকে এমন সিদ্ধান্ত নিন।।
ব্যাকপ্যাকারদের জন্য সাশ্রয়ী ভ্রমণ পরিকল্পনা
চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানলে আপনি কম খরচে
ও কম সময়ে সেখানে পৌঁছাতে পারবেন।সেন্টমার্টিন ভ্রমণে ব্যাকপ্যাকারদের
জন্য সাশ্রয়ী ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরি।চট্টগ্রাম থেকে
কক্সবাজার যাওয়ার জন্য ননএসি বাস অথবা শেয়ার্ড মিনিবাস ব্যবহার করলে তা
সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য হবে।কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত স্থানীয় বাস বা
মাইক্রোবাসে ভ্রমণ করলে খরচ অনেক কমে যায়।
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের জন্য সাধারণত ডেক সিটে প্যাসেঞ্জার জাহাজের
ভাড়া স্পিডবোটের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী।থাকার জন্য স্থানীয় গেস্টহাউস বা
হোস্টেল বেছে নিতে পারেন যা রিসোর্টের তুলনায় অনেক কম খরচে পাওয়া
যায়।খাবারে খরচ কম করতে হলে স্থানীয় সাধারণ খাবার বেছে নিতে হবে।
এছাড়া হালকা কিছু সামগ্রী প্রয়োজন অনুযায়ী বহন করতে পারেন যাতে অতিরিক্ত
খরচ এড়িয়ে যাওয়া যায়।অগ্রিম পরিকল্পনা ও অনলাইনে টিকিট বুকিং করলে আপনার
সময় ও খরচ দুটোই বাঁচবে।এছাড়া আপনি যদি গ্রুপে ভ্রমণ করেন তবে খরচ
ভাগাভাগি করার মাধ্যমে খরচ আরও সাশ্রয়ী করা সম্ভব।
সেন্টমার্টিন যাওয়ার সেরা সময় ও ঋতু
সেন্টমার্টিন ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো অক্টোবর থেকে মার্চ
মাস পর্যন্ত।এই সময়কালকে বলা হয় সেন্টমার্টিনের শীতকালীন মৌসুম যখন
আবহাওয়া বেশ শান্ত, সাগরও সাধারণত শান্ত থাকে এবং নৌযান চলাচল স্বাভাবিক
থাকে।এ সময়ের মধ্যে ভ্রমণ করলে ঝড়, বৃষ্টি বা সাগরের প্রবল ঢেউয়ের ঝুঁকি
কম থাকে ফলে যাত্রা অনেক বেশি আরামদায়ক ও নিরাপদ হয়।
গ্রীষ্মকালে বিশেষ করে এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে
যাওয়া কম উপযোগী কারণ এই সময় সাগর উত্তাল থাকে এবং বর্ষাকালে ভ্রমণের
সম্ভাব্যতা কমে যায়।এছাড়া গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রাও বেশির ভাগ সময় বেশি
থাকে যা পর্যটকের জন্য কষ্টকর হতে পারে।শীতকালীন মাসগুলোতে সেন্টমার্টিন
ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ কারণ তখন দ্বীপের প্রকৃতি
সবচেয়ে চমৎকার এবং পর্যটন সুবিধাও পুরোপুরি চালু থাকে।
ভ্রমণের আগে অবশ্যই আবহাওয়ার পূর্বাভাস
BMD থেকে সমুদ্রবন্দরের সংকেত এবং জাহাজ কর্তৃপক্ষের আপডেট দেখে
রওনা দেওয়া উচিত।লাইফজ্যাকেট পরা, অতিরিক্ত ভার বহন না করা এবং
নির্ধারিত সিটে বসে থাকা এসব নিয়ম মেনে চলা সমুদ্রপথে নিরাপদ ভ্রমণের
জন্য অত্যন্ত জরুরি।নিরাপদ ভ্রমণের জন্য সঠিক মৌসুম নির্বাচন এবং
আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই সেন্টমার্টিন যাত্রার সিদ্ধান্ত
নেওয়া সর্বোত্তম।
সেন্টমার্টিনে পৌঁছানোর পর করণীয়
সেন্টমার্টিনে পৌঁছানোর পর নতুনভাবে প্রকৃতিকে উপভোগ করার সুযোগ তৈরি
হয়।সেজন্য প্রথমেই আপনার হোটেল বা রিসোর্টে চেকইন করে দ্বীপ ঘোরার জন্য
নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে হবে।চাইলে আপনি সাইকেল ভাড়া করে পুরো দ্বীপ
ঘুরে দেখতে পারেন যা ব্যাকপ্যাকার ও নেচার লাভারদের জন্য জনপ্রিয় এক
অভিজ্ঞতা হতে পারে।
আরোও পড়ুন:ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করার সেরা উপায়
দ্বীপে ঘোরার সময় চেয়ারম্যান ঘাট, গলাচিপা পাড়া সমুদ্রতীর,গলাচিপা
পাড়া সমুদ্রতীর,ছেঁড়াদ্বীপ এবং কোরাল বিচ যেখানে প্রবালের মনোমুগ্ধকর
দৃশ্য দেখা যায় এই স্থানগুলো ঘুরতে মিস করবেন না কিন্তু।ভোরের আলোয়
সেন্টমার্টিনের সূর্যোদয় এবং সন্ধ্যার সময় সূর্যাস্ত দেখাও আপনার জীবনের
স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকার মতো দৃশ্য।
সমুদ্রস্নান, শামুক কুড়ানো কিংবা স্থানীয় দোকান থেকে সামুদ্রিক খাবার ও
ড্রাইফিশ কেনার অভিজ্ঞতাও হতে পারে আপনার জীবনের চমৎকার অভিজ্ঞতা।আমাদের
প্রতিটি পর্যটকদের উচিত দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা করা।তাই আমাদের উচিত
প্লাস্টিক বা প্যাকেটজাত বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত থাকা এবং স্থানীয়
সংস্কৃতিকে সম্মান করা।সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ তাই
এটিকে টিকিয়ে রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব।
সেন্টমার্টিনে থাকা-খাওয়া ও হোটেল বুকিং
সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন মান ও বাজেট অনুযায়ী থাকা ও
খাওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে।দ্বীপে ছোট ছোট লোকাল কটেজ, মিড-রেঞ্জ হোটেল
আবার কিছু বিচ-ভিউ রিসোর্টও রয়েছে যা সমুদ্রের একেবারে
কাছাকাছি।চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায় এখন আগের তুলনায়
অনেক সহজ এবং সময় সাশ্রয়ী।
সাধারণত হাই সিজনে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মার্চ আগেভাগে হোটেল বুক করা উচিত
কারণ তখন পর্যটকের চাপ বেশি থাকে।অনলাইন বুকিং সুবিধা এখন বেশিরভাগ
হোটেলেই রয়েছে যেমন
Booking.com,
GoZayaan, বা সরাসরি হোটেলের
ওয়েবসাইটে গিয়ে বুক করা যায়।
জনপ্রিয় হোটেল ও রিসোর্টগুলোর মধ্যে রয়েছে
Blue Marine Resort,
Dream Night Resort, Sea Beach Resort,
Coral View Resort,
Labiba Bilash.
Blue Marine Resort এর ভাড়া মোটামুটি পার নাইট ৩৫০০-৭০০০ টাকা,Prince
Heaven Resort, ২৫০০-৫৫০০ টাকা, Hotel Sea Beach ১২০০-৩০০০ টাকা, Coral
View Resort২০০০-৪৫০০ টাকা, Labiba Bilash ১৮০০-৪০০০ টাকা।ভ্রমণের
১৫-২০ দিন আগেই অনলাইনে হোটেল বুক করাই ভালো।
খাওয়ার দিক থেকেও সেন্টমার্টিন বেশ সমৃদ্ধ। এখানে টাটকা সামুদ্রিক মাছ,
চিংড়ি, লবস্টার, ড্রাইফিশ ও নারকেলের চিংড়ি মালাইকারি খুবই
জনপ্রিয়।দ্বীপের অনেক হোটেলেই থাকা ও খাওয়া একসাথে প্যাকেজ আকারে অফারও
পাওয়া যায়।এছাড়া লোকাল রেস্টুরেন্ট বা হোটেলেও সাশ্রয়ী মূল্যে খাওয়ারও
সুযোগ আছে।
স্থানীয় খাবার ও দ্বীপের বিখ্যাত জায়গাগুলো
চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায় নিয়ে অনেক পর্যটক দ্বিধায়
পড়েন কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা করলে যাত্রা সহজ হয়।সেন্টমার্টিন ভ্রমণের
অন্যতম আনন্দের বিষয় হলো এখানকার টাটকা সামুদ্রিক খাবার ও প্রাকৃতিক
সৌন্দর্যে ভরপুর দর্শনীয় স্থানগুলো।দ্বীপজুড়ে নানা রকম লোকাল খাবারের
দোকান ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে যারা সস্তা থেকে মাঝারি মূল্যে দুর্দান্ত
খাবার সরবরাহ করে থাকে।
আসুন বিখ্যাত স্থানীয় খাবার সম্পর্কে জানি।বিখ্যাত স্থানীয় খাবার গুলোর
মধ্যে চিংড়ির মালাইকারি, লবস্টার বারবিকিউ, টুনা মাছের ভুনা বা ফ্রাই,
ড্রাইফিশ ভর্তা ও ভুনা, নারকেল দিয়ে রান্না করা শুঁটকি বা ঝাল মাছ সাথে
থাকে ভাপা ভাত, ডাল ও নানা রকম ভর্তা।দ্বীপের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে আগে
থেকে অর্ডার দিলে বড় সাইজের মাছ বা লবস্টার বারবিকিউ করে দেয়।টাটকা
খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে লোকাল বাজারে ঘুরে দেখতে পারেন।
দ্বীপের বিখ্যাত ঘোরার জায়গাগুলোর হলো
ছেঁড়া দ্বীপ
সেন্টমার্টিন থেকে নৌকায় ৩০-৪০ মিনিট দূরত্বে ছোট একটি প্রবাল দ্বীপ
যেখানে পরিষ্কার নীল পানি ও রং বেরঙের প্রবাল দেখতে পাওয়া যায়।
গলাচিপা পয়েন্ট
সূর্যাস্ত উপভোগের জন্য অসাধারণ একটি লোকেশন।এখানে বসে সমুদ্রের ঢেউ আর
রংবেরঙের আকাশ দেখতে অনেকে বিকেলে ভিড় করে।
West Beach
সবচেয়ে শান্ত ও কম ভিড়যুক্ত বিচ যেখানে আপনি একান্তে প্রকৃতিকে উপভোগ
করতে পারবেন।
East Beach
ভোরবেলায় সূর্যোদয় দেখার জন্য একটি আদর্শ জায়গা।অনেক ফটোগ্রাফার ও
প্রকৃতি প্রেমীরা এখানে ঘন্টা ধরে সময় কাটান।
সেন্টমার্টিন বাজার এলাকা
এখান থেকে স্মারক হিসেবে আপনি প্রবাল, শামুক বা নারকেল দিয়ে তৈরি
হস্তশিল্প কিনে নিতে পারেন।
ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়ার সময় পানির বোতল ও হালকা খাবার সাথে রাখুন।শামুক
বা প্রবাল সংগ্রহ করা নিষিদ্ধ কিনলে অবশ্যই লাইসেন্সড দোকান থেকেই
কিনুন।সকালের দিকে ঘুরতে বের হলে সূর্যের তাপে আরাম পাবেন।
সেন্টমার্টিন ভ্রমণে করণীয় এবং বর্জনীয়
সেন্টমার্টিনে ভ্রমণ একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।তবে প্রকৃতি ও স্থানীয়
পরিবেশকে সম্মান জানিয়ে কিছু করণীয় ও বর্জনীয় মেনে চলা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ।দ্বীপে সূর্যের তীব্রতা বেশি থাকে তাই পানিশূন্যতা রোধে ও
ত্বকের সুরক্ষায় সানস্ক্রিন বহন করুন।নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য ফেলে
সমুদ্র ও সৈকত পরিষ্কার রাখুন।স্থানীয় পণ্য ও হস্তশিল্প কেনার মাধ্যমে
দ্বীপবাসীর অর্থনীতিতে অবদান রাখুন।
ছবি তুলতে চাইলে অনুমতি নিন, সংস্কৃতি ও কাস্টমসকে সম্মান করুন।ছেঁড়া
দ্বীপ বা নির্জন এলাকায় গেলে অভিজ্ঞ গাইড সঙ্গে রাখলে নিরাপদ থাকবেন।অনেক
জায়গা জোয়ারে ডুবে যেতে পারে তাই সময় অনুযায়ী ঘোরাফেরা করুন।
প্রবাল, শামুক বা যেকোনো সামুদ্রিক প্রাণী তুলে নেওয়া থেকে বিরত থাকুন
এটি পরিবেশ ও আইনগত নিষিদ্ধ।মদ্যপান ও উচ্চশব্দে গান বাজানো থেকে বিরত
থাকার চেষ্টা করুন।কারণ এতে দ্বীপের পরিবেশ এবং অন্যান্য পর্যটকদের
অসুবিধা হতে পারে।পোশাক ও আচরণে ভদ্রতা বজায় রাখুন।দ্বীপবাসীর অনুভূতির
প্রতি সম্মান দেখান।
রাতের বেলা নির্জন স্থানে একা ঘোরাঘুরি না করে নিরাপত্তার জন্য
দলবদ্ধভাবে চলাচল করুন।অবৈধ জিনিসপত্র বহন বা বিক্রি করা থেকে বিরত
থাকুন।সেন্টমার্টিন একটি দুর্লভ প্রাকৃতিক সম্পদ। আমাদের প্রত্যেকের উচিত
এ সৌন্দর্য রক্ষা করা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টিকিয়ে রাখা।ভ্রমণের
আনন্দের পাশাপাশি দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করুন।
লেখকের মন্তব্য:চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়
চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে
নিলে আপনার ভ্রমণ আরও সহজ হবে।চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়া অনেকটাই
রোমাঞ্চকর তবে একটু পরিকল্পনার প্রয়োজন। সরাসরি কোনো জাহাজ বা ট্রেন না
থাকায় আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার বা টেকনাফে যেতে হবে।সেখান
থেকে জাহাজ অথবা ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন পৌঁছানো যায়।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যারা ব্যাকপ্যাকার তাদের জন্য চট্টগ্রাম থেকে
টেকনাফ বাসে গিয়ে সেখান থেকে জাহাজে যাওয়া সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী
উপায়।তবে যারা একটু আরামপ্রিয় তারা আগে কক্সবাজারে রাত যাপন করে পরদিন
টেকনাফ হয়ে যেতে পারেন এতে আপনার ভ্রমণটা একটু ধীরস্থির ও উপভোগ্য হবে।ভালো
থাকুন।ধন্যবাদ।
ভবিষ্যতে যদি সরাসরি চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিনের জাহাজ চালু হয়, তবে
পর্যটকদের জন্য সেটা হবে এক বিশাল সুবিধা। তবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের এই
রুটিন পথেই দ্বীপের নীল জলরাশির সন্ধানে যেতে হবে।
সেন্টমার্টিনে যাবার পথ যতটাই কষ্টকর মনে হোক, গন্তব্যে পৌঁছানোর পর সেই
সৌন্দর্য সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয় এটাই ভ্রমণপ্রেমীদের আসল প্রাপ্তি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url