বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়
বাচ্চার সুস্বাস্থ্যের রক্ষায় বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়
জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।শিশুদের বেড়ে ওঠার পথে অন্যতম সমস্যা হলো
কোষ্ঠকাঠিন্য।তাই অনেক বাবা মা বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়, বাচ্চাদের
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে করণীয় এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়ায় এই সমস্যার মোকাবিলা
করার জন্য।
পেট ফুলে থাকা,মলত্যাগে কষ্ট হওয়া,বাচ্চার খাওয়ায় অনাগ্রহ সবই কোষ্ঠকাঠিন্যের
কারণে হয়ে থাকে।এই লেখাটিতে আমরা বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়
নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
লেখাটির মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কোন খাবারগুলো
সহায়ক,পানি ও আঁশের ভূমিকা সহ কোন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
জরুরি।ঘরোয়া ও সহজভাবে এই সমস্যা সমাধানে পুরো লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।চলুন
তাইলে শুরু করি।
পেজসূচিপত্র:বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়
- কোষ্ঠকাঠিন্য কী ও কেন হয়
- শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ
- নিয়মিত পায়খানার প্রাকৃতিক রুটিন গড়ে তোলার গুরুত্ব
- বাচ্চারা এক সপ্তাহ পায়খানা না করলে কি হয়
- কোন ফল ও সবজির খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়
- পানি ও তরল জাতীয় খাবারের ভূমিকা
- কোষ্ঠকাঠিন্যে ঘরে তৈরি কার্যকর পানীয়
- বাচ্চাদের জন্য প্রোবায়োটিক খাবার
- শিশুদের খেলাধুলা ও হালকা ব্যায়ামের গুরুত্ব
- বাচ্চাদের পায়খানা ক্লিয়ার করার ব্যায়াম
- কোষ্ঠকাঠিন্যে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে
- কোষ্ঠকাঠিন্যে কখন ডাক্তার দেখানো জরুরি
- লেখকের মন্তব্য:বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়
কোষ্ঠকাঠিন্য কী ও কেন হয়
বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় জানার আগে চলুন কোষ্ঠকাঠিন্য কি
তা জানি।কোষ্ঠকাঠিন্য হজমজনিত সমস্যা যার কারণে মল কঠিন ও শুষ্ক হয়ে যায় ফলে
শিশুর পায়খানা অনিয়মিত হওয়া শুরু হয়।
সাধারণত সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানা, পায়খানায় কষ্ট হওয়া কিংবা শক্ত মল বের
হওয়াকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।Constipation এর কারণে শিশুদের স্বাভাবিক আচরণ,
খাওয়া দাওয়া ও ঘুমের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সাধারণ কারণ
পানি ও তরল খাবারের ঘাটতি হলে শরীরে পানি কম থাকায় অন্ত্রে মল শক্ত হয়ে
ওঠে যা বের হতে কষ্ট হয়।ফাইবার জাতীয় খাবার অন্ত্রের গতি বাড়ায়।বাচ্চাদের
খাদ্যতালিকায় ফাইবার জাতীয় খাবার না থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে
পারে।আবার অনিয়মিত খাবার খাওয়া খেলেও হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অনেক শিশু স্কুলে, বাইরে থাকাকালীন সময়ে টয়লেট চেপে ধরে রাখে ফলে তা শক্ত হয়ে
যায়।আবার কোনো শিশুর হঠাৎ নতুনভাবে খাবারে পরিবর্তন হলে যেমন:মায়ের বুকের দুধ
থেকে ফর্মুলা অথবা ঘরে তৈরি খাবার তখন হজমে সমস্যা হয়ে থাকে।অনেক সময় মলত্যাগে
ব্যথা হলে শিশুর মধ্যে ভয় জন্মায়। ফলে সে মলত্যাগে আগ্রহ হারায় যা
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়।
শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ
শিশুরা প্রায়ই সরাসরি বলতে না পারেও তারা যে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে
সেদিকে অভিভাবকদের সতর্ক হতে হবে।আপনার শিশুর আচরণে যদি নিচের যেকোনো লক্ষণ
খুঁজে পান তাহলে বুঝবেন সে কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হতে পারে।
- অনিয়মিত মলত্যাগ যেমন সপ্তাহে ২ বার অথবা তার কম পায়খানা করা,২-৩দিন পর পর পায়খানা করা।
- মল ত্যাগের সময় কষ্ট হওয়া অনেক সময় বাচ্চারা কান্নাও করে।
- টয়লেটে বসে পায়খানা করার সময় ব্যথা হওয়া এবং পায়খানার পর পায়ুপথ লালচে হয়ে যাওয়া ,রক্ত পড়া।
- পায়খানা আসলেও চেপে রাখার চেষ্টা।
- বাচ্চার পেট শক্ত ও ফুলে থাকলে।
- বাচ্চার খাওয়ার ইচ্ছা কমে যাওয়া।
- কোষ্ঠকাঠিন্যে বাচ্চার দ্রুত মেজাজ খারাপ হয়ে অস্থির হয়ে ওঠে।
নিয়মিত পায়খানার প্রাকৃতিক রুটিন গড়ে তোলার গুরুত্ব
শিশুদের হজমপ্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য নিয়মিত পায়খানার অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।অনিয়মিত পায়খানা করার রুটিন বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ।এই সমস্যা প্রতিরোধের একটি সহজ ও কার্যকর উপায় হলো প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে সকালে খাওয়ার পর টয়লেটের রুটিন গড়ে তোলা।কারণ সকালে খাওয়ার পর অন্ত্র সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে।
এই সময় নিয়মিত টয়লেটে বসার অভ্যাস আপনার বাচ্চার অন্ত্রকে নির্দিষ্ট নিয়মে কাজ
করতে সাহায্য করবে।দিনের নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চাদের পায়খানা করার অভ্যাস
গড়ে তোলতে পারলে তাদের মল চেপে রাখার প্রবণতা থাকবে না যা কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি
কমতে সাহায্য করবে।নিয়মিত পায়খানার অভ্যাসে মল নরম থাকে এবং সহজে বের হয় ফলে
আপনার বাচ্চা ব্যথা ছাড়াই পায়খানা করতে পারবে।
এছাড়া সবসময় বাচ্চাদের মলত্যাগের চাপ থাকলে তারা অস্বস্তিতে ভোগতে থাকে
এবং খাওয়া দাওয়ায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলে।নিয়মিত পায়খানা হলে বাচ্চারা
মানসিকভাবে চাঙ্গাও থাকে।প্রাকৃতিক রুটিন গড়ে তুলতে প্রতিদিন শুরুর দিকে
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসিয়ে রাখুন কিন্তু জোর করবেন না।
বাচ্চারা এক সপ্তাহ পায়খানা না করলে কি হয়
একদিকে দীর্ঘদিন মল আটকে থাকলে তা অন্ত্রের নিচের দিকে জমাট বেঁধে থাকে এতে
মল একেবারে শক্ত হয়ে যায় এবং প্রাকৃতিকভাবে বের হতে পারে না।অন্যদিকে
অন্ত্র পূর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে শিশুর পেট ফুলে তীব্র পেট ব্যথা হতে পারে।
ফলে বাচ্চারা খেতে চায় না আবার মাঝে মাঝে বমিও করতে পারে।একবার ব্যথা ও
ভয় পেলে শিশুরা পরের বার পায়খানা আটকায়ে রাখে যার ফলে সমস্যা আরও গভীর হতে
পারে।অতিরিক্ত শক্ত মল বের করার সময় পায়ুপথের চামড়া ফেটে রক্তও ঝড়তে পারে।
কোন ফল ও সবজির খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়
বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় থেকে আমরা জানবো কিছু ফল ও
সবজির নাম যেগুলো খেলে বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দ্রুত ও প্রাকৃতিকভাবে দূর হতে
সাহায্য করবে।
ফল
- পাকা পেপে -পাকা পেপেতেপেপেইন এনজাইম থাকে যা হজমে সাহায্য করে।
- পাকা কলা -পাকা কলা কোষ্ঠকাঠিন্যে বেশ উপকারী।
- আপেল -আপেল আঁশে সমৃদ্ধ ,এই আঁশ অন্ত্রের গতি বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- নাশপাতি -নাশপাতিতে সোরবিটল নামক প্রাকৃতিক চিনি থাকে যা মল নরম করে ও সহজ হজমযোগ্য।
- আঙুর -আঙুর পানি ও আঁশে ভরপুর ও দ্রুত অন্ত্র পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
- কিশমিশ -কিশমিশে সোরবিটল যৌগ থাকে যা হালকা ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে।যা অন্ত্রের গতিশীলতা বাড়াতে এবং জমে থাকা মল নরম করে সহজে বের হতে সাহায্য করে থাকে।
সবজি
- ঢেঁড়স -ঢেঁড়স প্রচুর ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় অন্ত্রের লুব্রিকেশন বৃদ্ধি করে ব্যথাহীন মলত্যাগ নিশ্চিত করে।
- লাউ -লাউ হালকা ও শীতল সবজি পেট ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
- মিষ্টি কুমড়া -মিষ্টি কুমড়া একটি ফাইবারে ভরপুর সবজি যা অন্ত্রকে প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে থাকে।
- পালং শাক - পালং শাক একটি অত্যন্ত কার্যকর আঁশসমৃদ্ধ শাকসবজি হজমতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে যা জমে থাকা মল সহজে ও স্বাভাবিকভাবে বের হতে সাহায্য করে।
এই খাবারগুলো ফাইবার, পানি ও প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ উপাদানে সমৃদ্ধ যা আমাদের
অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এবং বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার
ঘরোয়া উপায় হিসেবে অনেক কার্যকর ও পুষ্টিকর।
পানি ও তরল জাতীয় খাবারের ভূমিকা
শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে পানি ও তরলজাতীয় খাবারের ভূমিকা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে যখন পর্যাপ্ত পানি থাকে না তখন মল শক্ত হয়ে যায় এবং
স্বাভাবিকভাবে বের হতে অসুবিধা হয়। এ অবস্থায় শিশুরা মলত্যাগে কষ্ট পায়
অনেক সময় ব্যথাও অনুভব করে।
পানি ও তরল জাতীয় খাবার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং অন্ত্রের স্বাভাবিক
চলাচল বজায় রাখতে সহায়তা করে।অন্ত্রে যখন যথেষ্ট পানি থাকে তখন মল
নরম থাকে এবং সহজেই বেরিয়ে যায়।তরলজাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি, লেবুর
শরবত, পাতলা সবজির ,পাতলা স্যুপ, টক দই এবং ফলের রস শিশুদের হজম
প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।
এসব তরল খাবারে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান অন্ত্রকে সক্রিয় রাখে এবং শরীরকে
ঠান্ডা রাখে।শিশুর বয়স অনুযায়ী পানি পানের পরিমাণ ঠিক রাখা উচিত। ১-৩ বছর
বয়সী শিশুদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৪-৫ গ্লাস, ৪-৮ বছর বয়সীদের ৫-৬ গ্লাস এবং
তার ঊর্ধ্বের শিশুদের ৬-৮ গ্লাস পানি পান করানো উচিত। তবে একসাথে না দিনে
বারবার অল্প অল্প করে।
বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পানি
ও তরলজাতীয় খাবার একটি সহজ নিরাপদ ও প্রাকৃতিক পদ্ধতি। এটি শুধু মল নরম
করেই না শিশুর হজম ক্ষমতা ও সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কোষ্ঠকাঠিন্যে ঘরে তৈরি কার্যকর পানীয়
শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক এমন কিছু ঘরোয়া ও স্বাস্থ্যকর পানীয়
যেগুলো সহজে তৈরি করা যায় এবং কার্যকর ফল দেয় চলুন সেগুলো সম্পর্কে
জানি।
লেবুর শরবত
লেবুর শরবত হালকা ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে অন্ত্রের গতিশীলতা
বাড়ায়।হালকা গরম পানিতে ১ চা চামচ লেবুর রস, ১ বছরের বেশি বাচ্চাদের জন্য
সামান্য মধু ভালোমতো মিশিয়ে আপনার বাচ্চাকে পান করান।
পাকা পেপের রস
পাকা পেপের রসে পেপেইন এনজাইম থাকায় অন্ত্রের গতি বাড়িয়ে জমশক্তি
বাড়ায় এবংশিশুদের পায়খানা সহজ করে।পাকা পেপে ছুলে ব্লেন্ড করে রস তৈরি
করে আপনার বাচ্চাকে নিয়মিত খাওয়াতে পারেন।
আপেল ও নাশপাতির মিশ্রিত রস
আপেল ও নাশপাতি সোরবিটল ও ফাইবারে সমৃদ্ধ।খেতেও হালকা মিষ্টি হওয়ায় শিশুরা সহজে খায়।এবং আপনার বাচ্চার অন্ত্রকে সচল রাখতে সাহায্য করে।আপেল ও নাশপাতি খোসা ছড়িয়ে ব্লেন্ড করুন প্রয়োজনে অল্প পানি মিশিয়ে রস বানাতে পারেন।৬ মাসের বেশি শিশুদের জন্য সিদ্ধ করে জুস বানান।মিষ্টি কুমড়ার স্যুপ
মিষ্টি কুমড়ায় পানি ও আঁশ একসাথে পাওয়া যায় ফলে হজমে সহায়তা করে, পেট
ঠান্ডা রাখে যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।মিষ্টি কুমড়া টুকরা করে
সিদ্ধ করে পানি ও সবজি একসাথে ব্লেন্ড করে অল্প লবণ দিন।গরম গরম
পরিবেশন করুন এবং আপনার বাচ্চাকে খাওয়ান।
মনে রাখবেন জুসে কখনো চিনি, দুধ মেশাবেন না ।ফ্রিজে না রেখে সবসময় ফ্রেশ
পরিবেশন করার চেষ্টা করবেন।
বাচ্চাদের জন্য প্রোবায়োটিক খাবার
প্রোবায়োটিক হলো উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা আমাদের অন্ত্রে বাস করে হজম,
মলত্যাগ, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর ভারসাম্য
রক্ষা করে থাকে।তাই আপনার শিশুর হজম শক্তিশালী করতে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
প্রোবায়োটিক খাবার খুবই কার্যকর। তবে ৬ মাসের নিচের কোনো বাচ্চাদের
প্রোবায়োটিক খাবার দেওয়া উচিত না তাদের জন্য বুকের দুধই সেরা প্রোবায়োটিক।
ঘরে তৈরি বাচ্চাদের জন্য উপযোগী প্রোবায়োটিক খাবার
ঘরের তৈরি টক দই
ঘরের তৈরি টক দই শিশুদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর প্রোবায়োটিক খাবার।
এতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া Lactobacillus থাকে যা অন্ত্রে গিয়ে হজম শক্তি
বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং পেটের সমস্যায় স্বস্তি দেয়ে। এমনকি ব্যথাহীন
মলত্যাগে সহায়তা করতে এটি অসাধারণ কার্যকর।
গ্রীষ্মকালে পেট ঠান্ডা রাখতে দইয়ের ঘোল
ঘোল মূলত টক দই থেকে তৈরি একটি হালকা পানীয় জাতীয় খাবার যা আপনার শিশুর
প্রাকৃতিকভাবে পেট ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত গরমে শিশুরা অনেক সময়
অস্বস্তি, গ্যাস, ফোলাভাব ও খিদে না লাগার সমস্যায় ভুগে এক্ষেত্রে ঘোল একটি
সহজ ও কার্যকর সমাধান।
এটি শুধু ঠাণ্ডা অনুভবই দেয় না বরং অন্ত্রে উপকারী প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া
সরবরাহ করে হজম সহজ করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
ঘরে তৈরি গাঁজন সবজির আচার
ঘরে তৈরি গাঁজন সবজির আচার একধরনের প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক খাবার অন্ত্রে
উপকারী প্রোবায়োটিক সরবরাহ করে থাকে এবং হজমশক্তি বাড়াতে দারুণ
কার্যকর।গাঁজনের মাধ্যমে সবজিগুলোতে ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়
যা আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
আরোও পড়ুন:নিয়মিত ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা
বিশেষ করে গাজর,বিটরুট, শশা ইত্যাদি সবজি লবণ ও পানি মিশিয়ে নির্দিষ্ট সময়
রেখে দিলে প্রাকৃতিকভাবে গাঁজন হয় এবং তা নিয়মিত অল্প পরিমাণে খেলে হজম ও
মলত্যাগের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।
হাতে বানানো চাটনি
ধনেপাতা,পুদিনাপাতা,আদা, রসুন, তেঁতুল,টমেটো,কাঁচা আম,তিল, চিনাবাদাম,
সাহায্যে হাতে বানানো চাটনি শুধুমাত্র স্বাদের জন্য না অনেক সময় হজমশক্তি
বৃদ্ধিতেও কার্যকর ভূমিকা রাখে।হাতে বানানো চাটনি শিশুদের খাওয়ার রুচি বাড়ায়
এবং হালকা প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ হিসেবেও কাজ করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য
ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে।তবে শিশুদের জন্য চাটনির ঝাল, লবণ ও টক স্বাদ
নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত।
শিশুদের খেলাধুলা ও হালকা ব্যায়ামের গুরুত্ব
শিশুদের দৈনন্দিন জীবনে খেলাধুলা ও হালকা ব্যায়াম শুধুমাত্র আপনার শিশুর
শরীর সুস্থ রাখে না বরং হজম, ঘুম, মানসিক প্রশান্তি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য
প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।আধুনিক প্রযুক্তির আসক্তি ও দীর্ঘ সময়
বসে থাকা শিশুদের মধ্যে হজম সমস্যা, স্থূলতা ও মলত্যাগজনিত অসুবিধা বাড়ায়।
নিয়মিত দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি, সাইকেল চালানো, বল খেলা, দড়ি লাফ, হালকা
যোগব্যায়াম অথবা পার্কে হাঁটাহাঁটি আপনার শিশুর অন্ত্রের গতি বাড়াতে,
পরিপাকতন্ত্রকে সচল রাখতে এবং শিশুদের স্বাভাবিকভাবে মলত্যাগে সহায়তা করে।
এমণকি শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং টক্সিন সহজে বেরিয়ে যেতে সাহায্য
করে।
শিশুরা যদি প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট খোলা জায়গায় খেলাধুলা করে তাহলে
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়া হালকা ব্যায়াম ও
খেলাধুলা বাচ্চাদের খিদে বাড়ায়,মানসিক চাপ কমিয়ে শিশুকে প্রাণবন্ত ও
সক্রিয় রাখতেও সাহায্য করে।
বাচ্চাদের পায়খানা ক্লিয়ার করার ব্যায়াম
বাচ্চাদের পায়খানার কষ্ট দূর করতে কিছু হালকা ব্যায়াম বাচ্চাদের
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়।এই ব্যায়ামগুলো বাচ্চার পেটের পেশি
সক্রিয় রাখে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে ফলে মল সহজে ও
স্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে যেতে পারে।
শিশুকে শুইয়ে তার দুই হাঁটু বুকের দিকে ভাঁজ করে হালকা চেপে ধরুন।৫
সেকেন্ড ধরে আবার ছেড়ে দিন।এটি গ্যাস রিলিজ করে পায়খানার চাপ তৈরি করে।
আবার শিশুকে চিৎ করে একটি সমান বিছানায় শুইয়ে হাতে হালকা গরম নারকেল তেল
অথবা অলিভ অয়েল লাগিয়ে নাভির চারপাশে হালকা চাপে ঘড়ির কাঁটার উল্টো
দিকে ঘূর্ণায়মান ম্যাসাজ করুন।এটি শিশুর পেটের পেশির রক্তসঞ্চালন
বাড়ায়ে অন্ত্রে চাপ সৃষ্টি করে সহজে মলত্যাগ করতে সাহায্য করে ।
কোষ্ঠকাঠিন্যে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কিছু নির্দিষ্ট খাবার পেটের গতি ধীর করে এবং মলকে শক্ত করে
তোলে ফলে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় কিছু
খাবার সাময়িকভাবে এড়িয়ে চলাই ভালো।চিপস ও ভাজাপোড়া খাবার শিশুদের
হজমে সমস্যা করে।
চিজ,দুধ ও অতিরিক্ত দুগ্ধজাত খাবার অনেক শিশুর হজমে সমস্যা হয় ফলে
কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ে।সাদা চাল ,সাদা পাউরুটিতে ফাইবার কম থাকে ফলে পায়খানা শক্ত
করে তবে ব্রাউন রাইস ভালো।ইনস্ট্যান্ট নুডলস, ফ্রোজেন স্ন্যাকস, প্যাকেটজাত
খাবারে ফাইবার নেই এবং হজমে বাধা সৃষ্টি করে থাকে।
বেশি চিনি জাতীয় খাবার ও চকোলেট।কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় এসব খাবার অন্ত্রে মল
আটকে রাখে এবং শক্ত করে তোলে তাই এসব খাবার সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে সহজপাচ্য
খাদ্য বাচ্চাদের দেওয়াই শ্রেয়।
কোষ্ঠকাঠিন্যে কখন ডাক্তার দেখানো জরুরি
সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য ঘরোয়া উপায়ে ভালো হলেও গুরুতর অথবা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা
দেখা দিলে শিশুকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নেওয়া উচিত।শিশুর ৩ থেকে ৫ দিন ধরে
পায়খানা না হলে, মলত্যাগের সময় প্রচণ্ড ব্যথা হলে, মলে রক্ত দেখা দিলে, পেট
ফুলে খুব শক্ত হলে, শিশুটি দুর্বল হয়ে পড়লে এবং সবসময় বমি বমি ভাব থাকলে দ্রুত
চিকিৎসকের দেখানো জরুরি।
এছাড়া যদি ঘরোয়া যত্ন নিয়ে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে কোনো উন্নতি না হয় তখন অবশ্যই
ডাক্তারকে দেখাতে হবে। কারণ এই ধরনের সমস্যাগুলো কখনো কখনো গুরুতর হতে পারে এবং
তখন সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।
লেখকের মন্তব্য:বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়
বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় দিয়ে বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য
সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পানে,ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার,
নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে
সাহায্য করে।
তবে দীর্ঘস্থায়ী এবং গুরুতর সমস্যায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
জরুরি।অভিভাবকরা সচেতন হলে শিশুরা সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্যের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি
পেতে পারে এবং সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবে।শিশুর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল
হওয়া আমাদের সবার প্রথম কর্তব্য।আপানি নিজে ভালো থাকুন ও আপনার
শিশুর যত্ন নিন।ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url