অলিভ অয়েলের অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা

অলিভ অয়েলের অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত।একসময় শুধু ইউরোপের কয়েকটি দেশে অলিভ অয়েল ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ অলিভ অয়েল ব্যবহার করছে। এই ব্লগে আমরা সহজ ভাষায় অলিভ অয়েল এর উপকারিতা,অলিভ অয়েল এর ব্যবহার সহ বিস্তারিত আলোচনা করবো যার মাধ্যমে আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন।
অলিভ- অয়েলের- অবিশ্বাস্য- স্বাস্থ্য- উপকারিতা


প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি এই তেল শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না শরীর ও মনের সুস্থ রাখতেওকাজ করে।
বিশেষ করে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ওজন নিয়ন্ত্রণ, চুল ও ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েলের কার্যকারিতা বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত।সুস্থ,সতেজ জীবন গড়তে অলিভ অয়েল হতে পারে আপনার স্বাস্থ্য সঙ্গী।চলুন ‍শুরু করি।

পেজসূচিপত্র:অলিভ অয়েলের অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা।

অলিভ অয়েল কী

অলিভ অয়েল হলো জলপাই নামক গাছের ফল থেকে প্রাপ্ত একটি প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ তেল। এটি মূলত ইউরোপের গ্রিস, ইতালি ও স্পেন দেশগুলো থেকে উৎপন্ন হয় তবে এখন বিশ্বজুড়ে এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।অলিভ অয়েলের অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।

এই তেলে স্বাস্থ্যকর মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন ভিটামিন রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।অলিভ অয়েল একটি পুষ্টিকর,বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত স্বাস্থ্যকর তেল যা শুধুমাত্র খাবারের স্বাদই বাড়ায় না ত্বক, চুল, হার্ট, হজম এবং এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।বিশেষ করে Extra Virgin Olive Oil সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর হিসেবে পরিচিত।

কোন ধরণের অলিভ অয়েল সবচেয়ে ভালো

Extra Virgin Olive Oil সবচেয়ে ভালো এবং সবচেয়ে বিশুদ্ধ অলিভ অয়েল।এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল জলপাই ফল থেকে একদম প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা প্রেসিং পদ্ধতিতে তৈরি হয়।যেখানে কোনো কেমিক্যাল, অতিরিক্ত তাপ ব্যবহার করা হয় না। তাই এটি বিশুদ্ধতা, স্বাদ, সুগন্ধ এবং পুষ্টিগুণ সবদিক থেকেই সেরা।

কোনো রাসায়নিক প্রক্রিয়া ছাড়াই তৈরি হয় বলে Extra Virgin Olive Oil সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর ধরণ। এছাড়াও অলিভ অয়েলের কিছু ধরন রয়েছে যেমন:Virgin Olive Oil বিশুদ্ধ কিন্তু EVOOএর চেয়ে কিছুটা কম হালকা রান্নায়,Refined Olive Oil রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পরিশোধিত হয় ভাজার জন্য,Olive Pomace Oil জলপাইয়ের ছাঁকা অংশ থেকে তৈরি মান অনেকটাই কম গৃহস্থালি রান্নায় ব্যবহৃত হয়,Lampante Oil খাবারের অযোগ্য।

অলিভ অয়েল তেল কোন কোন কাজে ব্যবহার করা হয়

Olive Oil কেবল রান্নার তেল নয় এটি একটি বহুমুখী স্বাস্থ্যবান্ধব প্রাকৃতিক উপাদানও যা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। অলিভ অয়েলের প্রধান ব্যবহার সহ  অলিভ অয়েলের অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতায় ব্যবহার নিয়ে জানি।

আপনি হেলদি রান্নার তেল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন যেমন সালাদ,পাস্তা, স্যুপ, হালকা ভাজি।Extra Virgin Olive Oil হালকা তাপে রান্না, কাঁচা খাওয়ার জন্যও উপযুক্ত।এছাড়া শুষ্ক ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ,ত্বকের অ্যালার্জি, র‍্যাশে উপকারী,রাতে ঘুমানোর আগে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে আপনার ত্বক নরম ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে।


চুল পড়া রোধে,খুশকি কমাতে,স্ক্যাল্প পরিষ্কারে,চুলকে মসৃণ ও চকচকে করতে অলিভ অয়েল বিশেষ ভাবে ভূমিকা রাখে।সকালে খালি পেটে অলিভ অয়েল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।এছাড়া হৃদরোগ প্রতিরোধে,হজমশক্তি বাড়াতে অনেক ডাক্তারই ডায়েট চার্টে EVOO রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

শিশুদের শরীর ম্যাসাজে,বড়দের গিটে ব্যথা ও মাংশপেশীর ব্যথা উপশমে,ঠান্ডা সর্দিতে বুক ম্যাসাজে অলিভ অয়েলের অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।নবজাতকের স্কিন সফট রাখতে,চুলের গোড়া শক্ত করতে,ডায়াপার র‍্যাশ দূর করতে অলিভ অয়েল সাহায্য করে।

মেকআপ রিমুভার হিসেবেও এটি বেশ ভালো।চোখ ও ঠোঁটের মেকআপ নিরাপদে তুলে এবং ত্বক নরম করে।এছাড়া চামড়ার ব্যাগ ও জুতার ঔজ্জ্বল্য ফিরাতে অলিভ অয়েল চমৎকার কাজ করে।

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খাওয়ার উপকারিতা

EVOO জলপাই ফল থেকে প্রথমবার Cold Pressing পদ্ধতিতে প্রাকৃতিকভাবে নিষ্কাশিত তেল যাতে কোনো রাসায়নিক অথবা তাপ ব্যবহার করা হয় না।এটি সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর অলিভ অয়েল।এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে Oleic Acid ও Polyphenols থাকে যা খারাপ কোলেস্টেরল অর্থাৎ LDL কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল HDL বাড়াতে সহায়ক ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।

প্রতিদিন এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খেলে রক্তনালির নমনীয়তা বেড়ে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের কোষের ক্ষয় রোধ করে ও ক্যান্সার কোষ গঠনে বাঁধা দেয়।তাছাড়া এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা কম রাখতে সাহায্য করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণেও এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল সাহায্য করে।গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য ভালো ভিটামিন E ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।যা মা ও শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।এছাড়া Alzheimer’s ও Parkinson’s রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

খালি পেটে এক চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খেলে হজমশক্তি বাড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়  ফলে পেট পরিষ্কার থাকে।এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে থাকে।এছাড়া এটি আপনার ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল ও চুলকে মজবুত করতে আপনাকে সহায়তা করবে।

হৃদরোগ প্রতিরোধে অলিভ অয়েল

অলিভ অয়েল বিশেষ করে Extra Virgin Olive Oil হৃদরোগ প্রতিরোধে এক প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপাদান হিসেবে পরিচিত।এতে উচ্চ মাত্রার মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল LDL কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল HDL বাড়ায়। ফলে হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং ধমনীতে চর্বি জমার ঝুঁকি হ্রাস পায়। 

হৃদরোগের অন্যতম কারণ প্রদাহ কমাতে অলিভ অয়েলে থাকা Polyphenols ও Oleocanthal নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত Extra Virgin Olive Oil খেলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

প্রতিদিন মাত্র ১-২ চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খালি পেটে অথবা সালাদের সঙ্গে খাওয়া গেলে এর উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে শুধু খাঁটি Extra Virgin Olive Oil ই উপকারী। Refined Olive Oil এই স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করে না।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে অলিভ অয়েল

Extra Virgin Olive Oil ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকর সমাধান। এতে থাকা Oleic Acid এবং Polyphenols রক্তনালির গঠনকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে ফলে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে এবং এর চাপ কমে যায়।নিয়মিত EVOO খেলে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক প্রেসার উভয়ই কমে।

দিনে ২ টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল গ্রহণ করলে হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের প্রয়োগও কমে যায়।তাই আপনার  রক্তচাপ প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে খাবারের তালিকায় Extra Virgin Olive Oil অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।তবে অবশ্যই খাঁটি Extra Virgin Olive Oil ব্যবহার করতে হবে কারণ রিফাইন্ড তেলে এই উপকার পাওয়া সম্ভব নয়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অলিভ অয়েলের ভূমিকা

ডায়াবেটিস সহ বহু রোগ Extra Virgin Olive Oil নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এতে থাকা হেলদি ফ্যাট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমাতে উল্লেখযোগ্যভাবে কাজ করে থাকে।

এছাড়া EVOO খাবারের গ্লাইসেমিক রেসপন্স কমিয়ে দেয় যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। Harvard School of Public Health এর এক স্টাডিতে বলা হয়েছে অলিভ অয়েল যুক্ত খাদ্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অধিক স্বাস্থ্যকর কারণ এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ইনফ্ল্যামেশন কমায়।

প্রতিদিন Extra Virgin Olive Oil  যুক্ত খাবার খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। তবে মনে রাখতে হবে উপকার পাওয়ার জন্য অবশ্যই খাঁটি Extra Virgin Olive Oil ব্যবহার করতে হবে।

ওজন কমাতে অলিভ অয়েল সাহায্য করে কীভাবে

অনেকেই ভাবেন তেল খেলে ওজন বাড়ে। কিন্তু খাঁটি Extra Virgin Olive Oil হচ্ছে এমন এক স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যা উল্টো ওজন কমাতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েলের মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা শরীরকে দীর্ঘ সময় ধরে তৃপ্ত রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়। 


এছাড়া Extra Virgin Olive Oil হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে মেটাবলিজম বাড়াতে সহায়তা করে। নিয়মিত EVOO সেবনে শরীরে ফ্যাট জমার হার কমে বিশেষ করে পেটের চর্বি হ্রাস পায়।এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে রক্তে শর্করার ওঠানামা কমায় যা অতিরিক্ত খাওয়া থেকে আমাদের বিরত রাখে।

তাই আপনি যদি স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন কমাতে চান তাহলে প্রতিদিনের ডায়েটে EVOO যুক্ত করতে পারেন।যেমন সকালে খালি পেটে ১ চামচ Extra Virgin Olive Oil সালাদ, স্যুপ, সিদ্ধ খাবারে অল্প করে খেতে পারেন। তবে অলিভ অয়েলও ফ্যাট তাই পরিমাণমতো খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে অলিভ অয়েল

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।এটি শুধু হৃদরোগ, ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপেই না ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে পলিফেনলস, ভিটামিন E ও স্কুয়ালিন রয়েছে যেগুলো শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীর থেকে ফ্রি র‍্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে দেয়।অলিভ অয়েল প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি।দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ অনেক ধরনের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।অলিভ অয়েল এই প্রদাহ কমিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সার।

অলিভ অয়েলের উপাদান Hydroxytyrosol ও Oleocanthal কোষে ডিএনএর অস্বাভাবিক পরিবর্তন, মিউটেশন কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।এ ধরণের পরিবর্তন অনেক সময় ক্যান্সারের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।অলিভ অয়েলের কিছু যৌগ ক্যান্সার কোষের বিভাজন ও বিস্তার ধীর করে।

বিশেষ করে Oleocanthal নামক উপাদান ক্যান্সার কোষের প্রাকৃতিক মৃত্যু ঘটাতে সহায়তা করে এবং টিউমার গঠনে বাঁধা দিয়ে থাকে।অলিভ অয়েল হলো একটি হেলদি মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট।এটি শরীরে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে যা হরমোন নির্ভর ক্যান্সার যেমন: ব্রেস্ট ও প্রোস্টেট ক্যান্সার এর ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়ক করে।

হজমের সমস্যা দূর করে

অলিভ অয়েল লিভার থেকে পিত্তরস নিঃসরণে সাহায্য করে যা চর্বি হজমে অপরিহার্য।ফলে চর্বি জাতীয় খাবার ভালোভাবে ভেঙে যায় এবং বদহজম থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে।এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল অন্ত্রের লুব্রিকেশন বাড়িয়ে অন্ত্রকে মসৃণ করে তোলে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং পায়খানা সহজে পরিষ্কার হতে সাহায্য করে।

অলিভ অয়েল পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন রোধ করে অম্বল, গ্যাস্ট্রিক,এসিডিটির সমস্যা কমায়।এতে থাকা Oleuropein ও Oleocanthal হজম সহায়ক এনজাইমকে সক্রিয় করে তোলে।যার কারণে প্রোটিন, চর্বি ও শর্করা জাতীয় খাবার সহজে ভেঙে হজম হতে পারে।অলিভ অয়েল অন্ত্রের ভিতর গাট ফ্রেন্ডলি ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে যা খাদ্য পরিপাকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ইনফ্লামেশন কমাতে সাহায্য করে।

অলিভ অয়েলে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যৌগগুলো হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া রোধে কার্যকর।যা আলসার ও হজমজনিত সমস্যার মূল কারণ।অলিভ অয়েলের অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতায় অলিভ অয়েল হজম শক্তি বাড়াতে, অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে, গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে প্রাকৃতিকভাবে কাজ করে। তবে নিয়মিত এবং সঠিক উপায়ে গ্রহণ করলেই উপকার পাওয়া যায়।

ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল

অলিভ অয়েল ত্বকের ভেতর প্রবেশ করে ড্রাই স্কিনের শুষ্কতা দূর করে।অলিভ অয়েল থাকা ওলেইক অ্যাসিড ও স্কুয়ালিন ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।অলিভ অয়েলে থাকা ভিটামিন E, পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েডস ত্বকের কোষের অক্সিডেটিভ চাপ কমিয়ে ত্বককে স্বাস্থ্যবান রাখতে সাহায্য করে।অ্যান্টি এজিং ও তারুণ্য ধরে রাখতে অলিভ অয়েলের অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।

নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহারে ত্বকের বয়সের ছাপ, রিঙ্কলস ও ফাইন লাইনস দেরিতে পড়ে।নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহার ত্বককে করে তোলে উজ্জ্বল, কোমল ও প্রাণবন্ত।এছাড়া অলিভ অয়েলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ত্বকের কালচে ভাব ও ক্লান্তি দূর করতেও সহায়তা করে।অলিভ অয়েল ত্বকে ঠান্ডা অনুভূতি দেয় এবং সানবার্ন থেকেও মুক্তি দেয়।অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

যদিও অতিরিক্ত তেল ব্রণের কারণ হতে পারে তবে পরিমিত ও সঠিকভাবে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহারে ব্রণের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে।এছাড়া অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের জীবাণুর প্রভাব কমায়।অলিভ অয়েল ঠোঁটের শুষ্কতা কমাতে কাজ করে এবং কালচে দাগ হালকা করতে সহায়তা করে।

অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম

রাতে ঘুমানোর আগে মুখ পরিষ্কার করে ২-৩ ফোঁটা অলিভ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করুন।অলিভ অয়েল, মধু ,লেবুর রস মিশিয়ে ফেস মাস্ক তৈরি করেও ব্যবহার করতে পারেন।রাতে ১ ফোঁটা অলিভ অয়েল ঠোঁটে লাগিয়ে শুয়ে পড়ুন।গোসলের পর হালকা ভেজা ত্বকে অলিভ অয়েল লাগালে ত্বক নরম ও কোমল থাকে।


তৈলাক্ত ত্বকে খুব বেশি ব্যবহার না করাই ভালো।তবে শুধুমাত্র এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করাই নিরাপদ। আপনি আপনার ত্বককে হাইড্রেটেড, কোমল, উজ্জ্বল ও বয়সের ছাপমুক্ত রাখতে সঠিক নিয়মে  ডেইলি স্কিনকেয়ার রুটিন হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

চুলের স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে অলিভ অয়েল

অলিভ অয়েল শুধু ত্বকের যত্নেই না চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। অলিভ অয়েলে ভিটামিন E, ভিটামিন A, ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে যা চুলকে ভিতর থেকে পুষ্টি দেয় এবং বিভিন্ন চুলের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে থাকে।

অলিভ অয়েল চুলের রুটে পুষ্টি সরবরাহ করে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় ফলে চুল পড়া কমে এবং চুলের গোড়া শক্তিশালী করে।অলিভ অয়েল স্ক্যাল্পে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি চুলকানি, খুশকি ও স্ক্যাল্পের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে এমনকি ফাঙ্গাল ইনফেকশন কমাতেও সাহায্য করে।অলিভ অয়েল চুলের বাইরের স্তরকে মসৃণ করে যা চুল নরম, ঝলমলে ও উজ্জ্বল করে।

যাদের চুল পাতলা ও সহজেই ভেঙে পড়ে যায় তাদের জন্য অলিভ অয়েল হতে পারে আদর্শ।অলিভ অয়েলের ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের ডগাকে ময়েশ্চারাইজ করে ভাঙ্গা আটকায়।এছাড়া অলিভ অয়েল চুলের গ্রোথ সাইকেলকে সুস্থ রাখে এবং নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে।

নিয়মিত অলিভ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করলে চুল বৃদ্ধি হয়।হেয়ার কালার, স্ট্রেইটেনিং অন্যান্য কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হলে অলিভ অয়েল প্রাকৃতিক রিপেয়ারিং টনিক হিসেবে কাজ করে।

অলিভ অয়েল কীভাবে ব্যবহার করবেন

হালকা গরম অলিভ অয়েল নিয়ে স্ক্যাল্পে ও চুলে ৫ থেকে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করুন।তারপর৩০-৪০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন।সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

অলিভ অয়েল, ডিম ,মধু মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক বানিয়ে ২০-৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে  শ্যাম্পু করে ফেলুন।
এটি চুল মসৃণ ও পুষ্টিকর করে তোলে।এছাড়া রাতে ঘুমানোর আগে অলিভ অয়েল লাগিয়ে চুল ঢেকে ঘুমিয়ে পরুন সকালে হালকা শ্যাম্পু করে ফেলুন।

চুলের গোড়া মজবুত করতে, খুশকি দূর করতে, চুলের বৃদ্ধিতে ও প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনতে অলিভ অয়েল কার্যকর ও নিরাপদ প্রাকৃতিক সমাধান। নিয়মিত ব্যবহারে এটি চুলের সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য দুটোই বাড়াতে সাহায্য করে।

প্রতিদিন কতটুকু অলিভ অয়েল খাওয়া উচিত 

প্রতিদিন কতটুকু অলিভ অয়েল খাওয়া উচিত তা নির্ভর করে আপনার বয়স, স্বাস্থ্য অবস্থার উপর।তবে সাধারণভাবে একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ১ থেকে ২ টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খাওয়া সবচেয়ে ভালো ও নিরাপদ।

এতে থাকা ভিটামিন E, K এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযা হৃদরোগ, কোলেস্টেরল ও হজমে উপকারী।তবে বেশি খেলে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে যেতে পারে যা আপনার ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।অলিভ অয়েল প্রাকৃতিকভাবে হালকা ল্যাক্সেটিভের কাজ করে তাই বেশি খেলে পেট খারাপ হতে পারে।

কখন খাবেন

সকালে খালি পেটে খেলেঅন্ত্র পরিষ্কার করে এবং হজমে সহায়তা করে খাবারের সাথে যেমন সালাদের সাথে, রান্নায় ব্যবহার করে খেতে পারেন।রাতে ঘুমানোর আগেও খেতে পারেন।কোষ্ঠকাঠিন্য,হজমের সমস্যায় উপকার করে থাকে।

অলিভ অয়েলের অপকারিতা

অলিভ অয়েল যতটা উপকারী ভুলভাবে অতিরিক্ত ব্যবহার করলে কিছুপার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।আপনার যদি নির্দিষ্ট কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাহলে আপনাকে অলিভ অয়েল সাবধানে  ব্যবহার করতে হবে।

অলিভ অয়েল একটি ফ্যাট তাই অতিরিক্ত খেলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা হয়ে ওজন বেড়ে যেতে পারে।যদিও অলিভ অয়েল হজমে সহায়ক তবে অতিরিক্ত খেলে ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে পেট খারাপ, ডায়রিয়া,পেট ব্যথা হতে পারে।

অলিভ অয়েল রক্তচাপ কমায় তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন তাদের অতিরিক্ত খেলে হাইপোটেনশন হতে পারে।আবার অনেকের ত্বকে অলিভ অয়েল ব্যবহারে অ্যালার্জি হতে পারে।তৈলাক্ত ত্বকে অতিরিক্ত অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে ব্রণ আরও বাড়তে পারে।

অলিভ অয়েল পিত্তরস নিঃসরণ বাড়ায় তাই পিত্তথলিতে পাথর থাকলে খালি পেটে খেলে ব্যথা, গ্যাস, ডাইজেস্টিভ জটিলতা বাড়তে পারে।এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল উচ্চ তাপে ভাজার জন্য নয় তাই বেশি তাপমাত্রায় ব্যবহার করলে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি হতে পারে।

অলিভ অয়েল প্রাকৃতিকভাবে রক্ত পাতলা করতে সহায়ক।যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান তাদের ক্ষেত্রে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।অলিভ অয়েল উপকারী হলেও সঠিক পরিমাণে ও সঠিক নিয়মে ব্যবহার না করলে এটি ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষত ওজন, গলব্লাডার, রক্তচাপ, অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত।

লেখকের ব্যক্তিগত পরামর্শ:অলিভ অয়েলের অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা

অলিভ অয়েলের অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা আমাদের হৃদয়, হজম, ত্বক ও চুলের যত্নে একসাথে কাজ করে একে প্রকৃতির উপহার বলা যেতে পারে।অলিভ অয়েল নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে যেসব উপকারিতা অনুভব করেছি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল শুধু তেল নয় এটি একপ্রকার প্রাকৃতিক ওষুধ।

যারা এখনো অলিভ অয়েল ব্যবহার শুরু করেননি তারা আজ থেকেই শুরু করুন তবে অবশ্যই বিশুদ্ধ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলই ব্যবহার করুন।রান্নার সময় খুব বেশি তাপ ব্যবহার না করে ঠান্ডা খাবারে ব্যবহার করুন।প্রাকৃতিক উপায়ে নিজের শরীরকে ভালো রাখতে চাইলে অলিভ অয়েল হতে পারে আপনার ঘরের হেলথ গার্ডিয়ান।ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url