চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরার ব্যবহার

আপনার কি চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরার ব্যবহারের অবিশ্বাস্য সব উপকারিতা সর্ম্পকে জানা আছে?কালোজিরা ও মেথি দিয়ে চুলের যত্ন কিভাবে নেবেন,মেথি ও কালোজিরার চুলের জন্য কী কী উপকারিতা রয়েছে,প্রাকৃতিক চুলের যত্ন নিয়ে আমাদের এই লেখার মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
চুলের- যত্নে- মেথি- ও- কালোজিরার- ব্যবহার


চুল আমাদের সৌন্দর্যের অন্যতম একটি প্রধান অংশ।কিন্তু সময়ের সাথে সাথে চুল পড়া, খুশকি, চুলের রুক্ষতা ও অকালপক্বতা আমাদের নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।বাজারের রাসায়নিক হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করে অনেক সময় উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়।

তাই আজকাল অনেকেই ফিরে আসছে প্রাকৃতিক চুলের যত্নের উপায় এর দিকে।মেথি ও কালোজিরার উপকারিতা ও নিয়মিত ব্যবহারের নিয়ম পাশাপাশি খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় ও চুল পড়া প্রতিরোধের ঘরোয়া উপাদান সবকিছু নিয়ে চলুন আলোচনা শুরু করি।

পেজসূচিপত্র:চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরার ব্যবহার

চুলের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদানের গুরুত্ব

চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরার ব্যবহার চুল পড়া রোধ, খুশকি দূর ও চুলের প্রাকৃতিক বৃদ্ধি বাড়াতে বিশেষভাবে কাজ করে থাকে।প্রাকৃতিক উপাদান যেমন মেথি, আমলা, কালোজিরা, অ্যালোভেরা, নারকেল তেলে রাসায়নিক উপাদান নেই ফলে চুলের জন্য নিরাপদ।

মেথি ও কালোজিরার মতো উপাদান চুলের গোড়া শক্ত করে চুল পড়াও কমায়। অ্যালোভেরা মাথার ত্বকে পুষ্টি যোগায়।নারকেল তেল, আমলকি ও দুধ চুলে প্রাকৃতিক গ্লো এনে দিতে সাহায্য করে।নিয়মিত ব্যবহারে চুল ঝলমলে দেখায়।

লেবুর রস, টক দই, মেথি বীজ প্রাকৃতিকভাবে মাথার ত্বকের খুশকি দূর করে।কালোজিরা তেল, আমলা ও ভৃঙ্গরাজ চুলের বৃদ্ধি দ্রুত করে এবং নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে।এই উপাদানগুলো বাজারে সহজেই পাওয়া যায় এবং দামের দিক থেকেও অনেক সাশ্রয়ী।

প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করলে শুধু চুল সুন্দর হয় না বরং চুলের ভেতর থেকে স্বাস্থ্যও উন্নত হয় যা কেমিক্যাল পণ্যের চেয়ে অনেক বেশি উপকারী।তাই প্রাকৃতিক ভাবে সুন্দর, স্বাস্থ্যবান চুল পেতে নিজের রুটিনে প্রাকৃতিক উপাদান আজই অন্তর্ভুক্ত করুন।

মেথির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

মেথি আমাদের সবার পরিচিত একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান।এটি শুধু রান্নায় নয় চুল ও ত্বকের নানা সমস্যায় দারুণ কাজ করে থাকে।আবার বাজারের কেমিক্যাল পণ্যের থেকে অনেক বেশি নিরাপদ ও কার্যকর।

মেথির পুষ্টিগুণ

মেথিতে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যা শরীরের শক্তি জোগিয়ে প্রতিদিনের কাজকর্মে ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে। চুল, ত্বক ও পেশি গঠনের জন্য প্রোটিন জরুরি।মেথি প্রাকৃতিক প্রোটিনের চমৎকার উৎস।এছাড়া মেথির মধ্যে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরের কোষ গঠনে সহায়তা করে এবং চুলের জন্যও উপকারী।

মেথিতে আয়রনও রয়েছে আয়রন রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে এবং শরীরকে শক্ত রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।ম্যাঙ্গানিজ হাড় ও কোষকে শক্তিশালী করে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কার্যক্রম বাড়ায় দেয়।মেথিতে ম্যাঙ্গানিজ ও বিদ্যমান।


এছাড়াও রয়েছে কপার যা রক্তের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে থাকে।ম্যাগনেশিয়াম হৃদযন্ত্র ও নার্ভ সঠিক ভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।কোলিন ও ইনোসিটল মস্তিষ্কের স্মরণশক্তি উন্নত করে এমনকি দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে।

বায়োটিন ও বি ভিটামিনস চুল পড়া রোধ করে ত্বক ভালো রাখে এবং হজমে সাহায্য করে।জিংক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।সেলেনিয়াম দেহের কোষকে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।ফসফরাস দাঁত ও হাড় শক্ত করে।

মেথির উপকারিতা

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অল্প পরিমাণে মেথি রাখলে আপনি এর উপকার নিজেই বুঝতে পারবেন।মেথি নিয়মিত ব্যবহারে চুলের গোড়া শক্ত হয় ফলে চুল পড়া কমে।মেথির প্রাকৃতিক গুণ মাথার স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখে ও চুলকানি কমায়।

ভিজানো মেথির পেস্ট চুলে ব্যবহার করলে চুল কোমল ও চকচকে হয়।এমনকি মেথি খেলে হজম ভালো হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হয়।মেথি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী।মেথি বেটে মুখে লাগালে ব্রণ কমে ত্বক পরিষ্কার হয়।

কালোজিরার পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

কালোজিরার পুষ্টিগুণ

কালোজিরা ছোট বীজ হলেও এতে অসাধারণ পুষ্টি ও স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। কালোজিরায় উচ্চমাত্রার প্রোটিন যা শরীরের কোষ গঠন এবং মেরামতে সাহায্য করে।কালোজিরায় বিভিন্ন ধরনের ফ্যাট থাকে যার মধ্যে মনোআনস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।

এছাড়া ওমেগা ৩ ও ওমেগা৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা মস্তিষ্ক ও হার্টের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।কালোজিরায় প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট ও আহারযোগ্য ফাইবার থাকে যা শরীরকে শক্তি জোগায়।

নানা ধরনের ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি৩, বি৬, ফোলেট, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই, ও বিদ্যমান যা দেহের বিভিন্ন কাজের জন্য অপরিহার্য।কালোজিরায় খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং সেলেনিয়াম পাওয়া যায় যা হাড়, রক্ত, পেশি এবং কোষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কালোজিরায় শক্তিশালী বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে বিশেষ করে থাইমোকুইনোন, পলিফেনল, ফ্ল্যাভোনয়েড, স্যাপোনিন এবং স্টেরলস যা দেহের কোষকে ক্ষতিকর মৌল থেকে রক্ষা করে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

এই সব পুষ্টিগুণের জন্য কালোজিরা একটি সুপারফুড হিসেবে পরিচিত এবং প্রাচীনকাল থেকেই বহু রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

কালোজিরার উপকারিতা

কালোজিরার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন শরীরকে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে।থাইমোকুইনোন নামক যৌগটি মস্তিষ্কের কোষ রক্ষা করে এবং আলজেইমার প্রতিরোধে কার্যকর।কালোজিরা হৃদপিণ্ডের সুরক্ষা দিয়ে থাকে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

কালোজিরা হজমশক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিক কমাতে সাহায্য করে।কালোজিরা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়।চুল পড়া রোধ করে, খুশকি দূর করে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, ব্রণ ও দাগ কমাতে কালোজিরা বেশ কার্যকর।

বাত, জয়েন্টের ব্যথা ও আর্থ্রাইটিসে কালোজিরা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।হাঁপানি, সাইনাস, ঠান্ডা, কাশি ইত্যাদির উপশমে কালোজিরা কার্যকরী।প্রসবের পর দেহের শক্তি ফিরে পেতে ও স্তন্যদুগ্ধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।এর অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ দ্রুত ক্ষত সারাতে সহায়তা করে। 

চুল পড়া বন্ধে মেথি ও কালোজিরা প্যাক

চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরার ব্যবহার মেথি এবং কালোজিরা এই দুটি প্রাকৃতিক উপাদান চুলের যত্নে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান, প্রোটিন, ভিটামিন বি, আয়রন, জিঙ্ক ও থাইমোকুইনোন রয়েছে যা চুল পড়া বন্ধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এবং স্ক্যাল্পকে সুস্থ রাখে।

তৈরির উপকরণ

মেথি বীজ ২ টেবিল চামচ,কালোজিরা বীজ ১ টেবিল চামচ, ভিজানোর জন্য ১ কাপ পানি, নারকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল ২ টেবিল চামচ। 

প্রস্তুত প্রণালী

মেথি ও কালোজিরা একসাথে ১ কাপ পানিতে রাতভর ভিজিয়ে রাখুন।সকালে ভিজানো বীজগুলো মিহি করে পেস্ট করুন। পেস্টের সঙ্গে নারকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন এটি চুলে অতিরিক্ত ময়েশ্চার যোগ করতে সাহায্য করবে।


চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত প্যাকটি ভালোভাবে ম্যাসাজ করে লাগিয়ে নিন।৩০ থেকে ৪০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি ও মাইল্ড হারবাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করলে চুল পড়া উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে এবং নতুন চুল গজাতে শুরু করবে।

খুশকি দূর করতে মেথি কালোজিরা হেয়ার মাস্ক

মেথি ও কালোজিরা খুশকি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর। এতে থাকা অ্যান্টিফাংগাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান মাথার ত্বকে জমে থাকা ডেড স্কিন ও ছত্রাকের সংক্রমণ দূর করে ফলে খুশকি ধীরে ধীরে চলে যায়।

তৈরির উপকরণ

মেথি বীজ ২ টেবিল চামচ,কালোজিরা ১ টেবিল চামচ,টক দই ৩ টেবিল চামচ,লেবুর রস ১ চা চামচ খুব বেশি খুশকি হলে।

প্রস্তুত প্রণালী

মেথি ও কালোজিরা একসাথে রাতভর পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।ভিজানো বীজ ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন এবং সাথে টক দই ও লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত চুলে লাগিয়ে হালকা করে স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করুন।

৩০ থেকে ৪৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি ও আপনার ব্যবহিত শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করলে খুশকির সমস্যা কমে যাবে।টক দই ও লেবুর রস ব্যবহারে কারও কারও অ্যালার্জি হতে পারে তাই যাদের অ্যালার্জি সমস্যা আছে তারা আগে সামান্য অংশে টেস্ট করে নিন।

মাথার চুল ঘন ও লম্বা করার জন্য ঘরোয়া তেল

চুল পড়া রোধ, চুল ঘন ও দ্রুত লম্বা করতে বাজারের কেমিকেলযুক্ত প্রোডাক্টের বদলে ঘরোয়া তৈরি তেল অনেক বেশি নিরাপদ ও কার্যকর। চুল ঘন ও লম্বা করার জন্য ঘরোয়া তেল তৈরির রেসিপি সর্ম্পকে চলুন জানি।

তৈরির উপকরণ

নারকেল তেল  ১ কাপ,মেথি বীজ ২ টেবিল চামচ,কালোজিরা ১ টেবিল চামচ,কারি পাতা  ১০ থেকে ১২টি
পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ,ভিটামিন ই ক্যাপসুল।

প্রস্তুত প্রণালী

একটি পাত্রে নারকেল তেল নিয়ে হালকা আঁচে গরম করুন।তেলের মধ্যে মেথি, কালোজিরা, পেঁয়াজ কুচি ও কারি পাতা দিয়ে ৭ থেকে৮ মিনিট মাঝারি আঁচে নেড়ে দিন যতক্ষণ না উপকরণগুলো কালচে হয়ে আসে।

তেল ঠান্ডা হলে ছেঁকে একটি কাচের বোতলে সংরক্ষণ করুন।১টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ফাটিয়ে মিশ্রণটিতে মিশিয়ে নিন।সপ্তাহে ২-৩ বার রাতে ঘুমানোর আগে মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে সারা রাত রাখুন।সকালে আপনার শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।নিয়মিত ব্যবহার করলে ১ মাসের মধ্যেই চুলের ঘনত্ব ও বৃদ্ধি উন্নত করে।

অকালপক্বতা রোধে মেথি ও কালোজিরার ব্যবহার

বর্তমানে কম বয়সেই চুল পেকে যাওয়া অনেকের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অনিয়মিত জীবনযাপন, পুষ্টির ঘাটতি ও রাসায়নিক পণ্যের ব্যবহার এর অন্যতম কারণ। তবে মেথি ও কালোজিরা একসঙ্গে ব্যবহার করলে চুল পাকা প্রতিরোধে চমৎকারভাবে কাজ করে।

তৈরির উপকরণ

মেথি বীজ ২ টেবিল চামচ,কালোজিরা ১ টেবিল চামচ,নারকেল তেল ১ কাপ,পেঁয়াজের রস ২ টেবিল চামচ।

প্রস্তুত প্রণালী

প্রথমে মেথি ও কালোজিরা রাত ভিজিয়ে রাখুন।সকালে ভালোভাবে বেটে নিয়ে পেঁয়াজের রস ও নারকেল তেল হালকা গরম করে মিশ্রণটির সাথে মিশিয়ে চুলে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন এবং ১ ঘণ্টা রেখে দিন।এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

সপ্তাহে অন্তত ২ বার ব্যবহার করুন।।আমি নিজে এই প্যাকটি ব্যবহারের পর চুলে চমৎকার পরিবর্তন পেয়েছি।নিয়মিত ব্যবহারে নতুন চুল উঠেছে এবং চুল আর পাকে না।ব্যবহারের পর পার্থক্য বুঝতে পারবেন ।

রুক্ষ ও শুষ্ক চুলের যত্নে হেয়ার মাস্ক

রুক্ষ ও শুষ্ক চুলে প্রাণ থাকে না, দেখতেও মলিন লাগে। অতিরিক্ত রোদ, ধুলোবালি, রাসায়নিক শ্যাম্পু ও তাপ ব্যবহার এই সমস্যার অন্যতম কারণ। তবে ঘরোয়া উপায়ে তৈরি হেয়ার মাস্ক ব্যবহারে আপনি সহজেই ফিরে পেতে পারেন নরম, মসৃণ ও উজ্জ্বল চুল।

উপকরণ

২ টেবিল চামচ মেথি বাটা,১ টেবিল চামচ কালোজিরা গুঁড়ো,১ টেবিল চামচ মধু,২ টেবিল চামচ দই,১ টেবিল চামচ নারকেল তেল।

প্রস্তুত প্রণালী

সব উপকরণ একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।চুলে লাগিয়ে ৪৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।এই মাস্কটি সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করুন।

চুলে প্রাকৃতিক শাইন ও মসৃণতা আনতে মেথি ও কালোজিরা

চুলের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা হারিয়ে গেলে তা প্রাণহীন ও রুক্ষ দেখায়।এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মেথি ও কালোজিরার মতো প্রাকৃতিক উপাদান হতে পারে দারুণ কার্যকর।মেথিতে থাকা লেসিথিন, প্রোটিন ও আয়রন চুলের গভীরে পুষ্টি যোগিয়ে আপনার চুলকে নরম ও ঝলমলে করে তুলবে।আবার কালোজিরায় থাকা থাইমোকুইনোন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের কোষে শক্তি জোগায় এবং প্রাকৃতিক শাইন ফিরিয়ে আনে।

তৈরির উপকরণ ও প্রস্তুত প্রণালী

২ চামচ মেথি ভিজিয়ে বেটে ১ চামচ কালোজিরা গুঁড়া মিশিয়ে নিন।১ চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন।চুলে লাগিয়ে ৩০-৪৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। 


এটি চুল ঝলমলে শাইন, রুক্ষতা ও জট দূর করতে সাহায্য করে।এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে চুল নরম ও সুস্থ রেখে চুলের গোড়াকে শক্ত করে।

মেথি ও কালোজিরা ছেলে ও মেয়ের জন্য উপযোগী কি না

অনেকেই ভাবেন চুলের যত্নে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক উপাদানগুলো শুধু মেয়েদের জন্যই উপযোগী। আসলে তা নয় মেথি ও কালোজিরা এমন দুটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক উপাদান যা ছেলে ও মেয়ে উভয়ের চুলের যত্নেই সমানভাবে কার্যকর।

চুল পড়া রোধে মেথির প্রোটিন ও লেসিথিন এবং কালোজিরার থাইমোকুইনোন চুলের গোড়া মজবুত করে যা পুরুষ ও নারীদের চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।মাথার ত্বকের সমস্যা যেমন খুশকি ছেলে ও মেয়ে উভয়ের মধ্যেই দেখা যায় ।কালোজিরার অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান খুশকি রোধে উপকারী।

ছেলে হোক অথবা মেয়ে চুল ঘন ও সুন্দর হলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এই দুটি উপাদান চুলে প্রাকৃতিকভাবে শাইন আনে ও রুক্ষতা কমায়।এছাড়া ছেলে মেয়ে উভয়ের অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা সমাধানে মেথি ও কালোজিরা কাজ করে।তাই বলা যায় মেথি ও কালোজিরা ছেলে ও মেয়ের উভয়ের জন্যই উপযোগী।

বাজারের কেমিকেল পণ্যের চেয়ে কীভাবে ভালো

আজকাল বাজারে নানা ধরণের হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট পাওয়া যায় শ্যাম্পু, সিরাম, কন্ডিশনার, অয়েল, মাস্ক ইত্যাদি।কিন্তু এসব পণ্যে থাকা কেমিকেল উপাদান দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার চুলের ক্ষতি করতে পারে। এতে চুল পড়া, অকালপক্বতা, খুশকি ও রুক্ষতার সমস্যা বাড়তে থাকে।

মেথি ও কালোজিরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান।যা চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়,মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়,অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান আছে যা চুল ঘনমসৃণ ও চকচকে করে,ক্ষতিকর কেমিকেলের প্রভাব থেকে চুলকে রক্ষা করে।তাই দীর্ঘমেয়াদি চুলের যত্নে বাজারের কেমিকেল পণ্যের চেয়ে মেথি ও কালোজিরা অনেক বেশি নিরাপদ ও কার্যকর।

কোন ধরনের চুলে মেথি ও কালোজিরার ব্যবহার বেশি উপকারী

মেথি ও কালোজিরা এমন দুটি প্রাকৃতিক উপাদান যা প্রায় সব ধরণের চুলের জন্য উপকারী হলেও কিছু নির্দিষ্ট চুলের সমস্যায় এগুলোর কার্যকারিতা আরও বেশি।রুক্ষ ও শুষ্ক চুলে মেথির লেসিথিন ও কালোজিরার ফ্যাটি অ্যাসিড চুলে প্রাকৃতিক ময়েশ্চার যোগায় ফলে চুল হয় নরম ও ঝলমলে।

চুল পড়া ও পাতলা চুলে কালোজিরার থাইমোকুইনোন ও মেথির প্রোটিন চুলের গোড়া শক্ত করে চুল পড়া কমায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।খুশকিযুক্ত চুলে মেথির অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান ও কালোজিরার অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুণ খুশকি কমায় এবং মাথার ত্বক সুস্থ রাখে।

কালোজিরার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান অকালে চুল পাকার প্রবণতা রোধে সহায়তা করে।কেমিকেল ব্যবহারে নষ্ট হওয়া চুলে মেথি ও কালোজিরা পুষ্টি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।

মেথি ও কালোজিরার ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা

কিছু মানুষের ত্বক মেথি,কালোজিরার প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে। এতে মাথার ত্বকে চুলকানি, লালচে ভাব, ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।অতিরিক্ত ঘন ঘন ব্যবহার করলে চুলে ভারী ভাব অনুভূতি হতে পারে।কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় রেখে দিলে চুল রুক্ষ হতে পারে বিশেষ করে চুলে পর্যাপ্ত তেল না থাকলে।

কালোজিরা তেল খাওয়ার ক্ষেত্রে গর্ভবতী নারীদের সাবধান হওয়া উচিত।প্রথমবার ব্যবহারের আগে হাতে অল্প করে লাগিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন।অতিরিক্ত পরিমাণ ব্যবহার না করে পরিমিতভাবে ব্যবহার করুন।

খোলাবাজার থেকে কেনার সময় খাঁটি ও পরিষ্কার মেথি ও কালোজিরা কিনুন।মধু, অ্যালোভেরা, নারিকেল তেল ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকটাই কমে যায়।

লেখকের মতামত:চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরার ব্যবহার

চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরার ব্যবহার করে আমি ব্যক্তিগতভাবে উপকারিতা চেয়েছে। চুল পড়া, খুশকি, অকালপক্বতা,শুষ্কতার মতো সমস্যার ঘরোয়া সমাধানে মেথি ও কালোজিরা অসাধারণভাবে কার্যকর।

বাজারের কেমিকেলযুক্ত হেয়ার প্রোডাক্টে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও ক্ষতির ঝুঁকি থাকতে পারে কিন্তু মেথি ও কালোজিরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। আমার মতে নিয়মিত ও সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এগুলো চুলের স্বাস্থ্য ফেরাতে এবং সৌন্দর্য বাড়াতে অনন্যভাবে কাজ করে থাকে।নিজের যত্ন নিন, ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url