ওটস এর উপকারিতা ও অপকারিতা
ওটস এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে সঠিক তথ্য জেনে নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে ওটস যোগ
করলে আপনার শরীর ও স্বাস্থ্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।একটি পোস্টে
ওটস খাওয়ার নিয়ম,বাচ্চাদের জন্য ওটস এর উপকারিতা নিয়ে সবকিছু বিস্তারিত আলোচনা
করবো।
আজকাল স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে oats খুবই পরিচিত একটি নাম। ওজন কমানো
থেকে শুরু করে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সবখানেই ওটসের
উপকারিতা রয়েছে।তবে এই উপকারী খাবারেরও কিছু অপকারিতা রয়েছে।
এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো ওটস এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে
যাতে আপনি বুঝে শুনে আপনার খাদ্যাভ্যাসে ওটস অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।তাইলে চলুন
শুরু করি।
পেজসূচিপত্র:ওটস এর উপকারিতা ও অপকারিতা
- ওটস কী
- ওটসের পুষ্টিগুণ
- ওজন কমাতে ওটসের ভূমিকা
- হজম শক্তি বাড়াতে ওটস
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ওটস এর ভূমিকা
- হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় ওটসের কার্যকারিতা
- ত্বকের যত্নে ওটসের ভূমিকা
- পেট পরিষ্কার রাখতে ওটস
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ওটস
- শিশুদের জন্য ওটস কতটা উপকারী
- নিয়মিত ওটস খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভবতী মায়েদের জন্য ওটস উপযোগী কি না
- অতিরিক্ত ওটস খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- ওটস কাদের জন্য নিষিদ্ধ
- ঘরে তৈরি ওটস রেসিপির আইডিয়া
- লেখকের মতামত:ওটস এর উপকারিতা ও অপকারিতা
ওটস কী
ওটস এর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে ওটসের ব্যবহার শুরু করা উচিত। ওটস এক ধরনের
সম্পূর্ণ শস্য যার বৈজ্ঞানিক নাম Avena sativa।মূলত ওটস এর বীজ খাবার হিসেবে
ব্যবহৃত হয় যা স্বাস্থ্যকর সকালের নাস্তা, ডায়েট খাবার হিসেবে জনপ্রিয়।এটি
মূলত ঠান্ডা আবহাওয়ায় চাষ হয়ে থাকে।
ওটস এ প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বিশেষ করে বিটাগ্লুকান, প্রোটিন,
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন B1, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক থাকে যা শরীরের
জন্য অত্যন্ত উপকারী।
ওটসের পুষ্টিগুণ
ওটস একটি কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত শস্য যা ধীরে হজম হয় এবং রক্তে চিনির
পরিমাণ ধীরে বাড়ায়।চলুন প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা ওটসের পুষ্টিমান সম্পর্কে
জানি।
উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ক্যালোরি | ৩৮৯ ক্যালোরি |
কার্বোহাইড্রেট | ৬৬.৩ গ্রাম |
ফাইবার | ১০.৬ গ্রাম |
প্রোটিন | ১৬.৯ গ্রাম |
চর্বি | ৬.৯ গ্রাম |
স্যাচুরেটেড ফ্যাট | ১.২ গ্রাম |
আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট | ৪.০ গ্রাম |
আয়রন | ৪.৭২ মি.গ্রা |
ক্যালসিয়াম | ৫৪ মি.গ্রা |
ম্যাগনেশিয়াম | ১৭৭ মি.গ্রা |
জিঙ্ক | ৩.৯৭ মি.গ্রা |
ভিটামিন B1 | ০.৭৬ মি.গ্রা |
ভিটামিন B5 | ১.৩৫ মি.গ্রা |
ফলেট | ৩২ µg |
ওজন কমাতে ওটসের ভূমিকা
ওজন কমানোর জন্য ওটস অন্যতম কার্যকর।এতে উচ্চমাত্রার ডায়েটারি ফাইবার
বিশেষ করে বিটাগ্লুকান যা হজমে সময় নেয় এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা
রাখে।অতিরিক্ত খাওয়ার ইচ্ছা কমায় দেয় যা ওজন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখে।
ওটস কম ক্যালোরি ও কম ফ্যাটযুক্ত একটি খাদ্য যার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও
কম।ওটস রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে বাড়ায় ফলে ইনসুলিন স্পাইক কম হয় যা
চর্বি জমা রোধ করতে সাহায্য করে।কিন্তু শুধু ওটস খেয়ে ওজন কমবে না সাথে
নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ওজন কমাতে ওটস খাওয়ার নিয়ম
সকালের নাস্তা হিসেবে ওটস খাওয়া সবচেয়ে উপযোগী।১ কাপ সিদ্ধ ওটসের সঙ্গে ফল,
বাদাম, বা দুধ মিশিয়ে খেতে পারেন।চিনি না মেশানোই ভালো।প্রতিদিন ১ বেলার
খাবার হিসেবে ওটস রাখলে ক্যালোরি কমানো সহজ হয়।
হজম শক্তি বাড়াতে ওটস
হজম শক্তি বাড়াতে ওটসের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।ওটসে থাকা উচ্চমাত্রার
ফাইবার পাচনতন্ত্রকে সুস্থ ও সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে যা খাবার সহজে হজমে
সহায়ক।ওটসের সলিউবল ফাইবার বিটাগ্লুকান অন্ত্রে গ্যাস ও অ্যাসিড তৈরির
ভারসাম্য বজায় রেখে খাবারের গতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এতে পেটের অস্বস্তি কমে এবং হজমের সমস্যা দূর হয়।এছাড়া ওটস হজম প্রক্রিয়াকে
ধীরে ধীরে করায় রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।যা সামগ্রিকভাবে
পাচনতন্ত্রের সুরক্ষা বৃদ্ধি করে।তাই নিয়মিত ওটস খেলে হজম শক্তি বাড়ে এবং
পেটের নানা ধরনের সমস্যা যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য,অম্বল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ওটস এর ভূমিকা
ওটসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে
বাড়ায়।ওটসের মধ্যে থাকা সলেবল ফাইবার খাদ্যনালী থেকে গ্লুকোজ শোষণ ধীরে করে
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
বিটাগ্লুকান শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় ফলে ইনসুলিনের প্রভাব
বৃদ্ধি পেয়ে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।
ওটস খেলে দীর্ঘ সময় ক্ষুধা লাগে না যা আমাদের অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে
বিরত রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ওজন নিয়ন্ত্রণ ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণের অন্যতম মূল কারণ।ডায়াবেটিসে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে বেশি।ওটস
রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল অর্থ্যাৎ LDL কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য
করে।
হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় ওটসের কার্যকারিতা
ওটসে β-glucan নামক দ্রবণীয় আঁশ থাকে যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে
সাহায্য করে।এটি অন্ত্রে থাকা কোলেস্টেরলকে শোষিত হতে বাধা দেয় এবং দেহ থেকে
বের করে দেয়।ওটস রক্তনালিকে নমনীয় রাখে ও ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে
সাহায্য করে।
যারা নিয়মিত ওটস খায় তাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কম থাকে।ওটসে
অ্যাভেনানথ্রামাইড নামক এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ধমনির
প্রদাহ হ্রাস করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।অতিরিক্ত ওজন
হৃদরোগের জন্য বড় ঝুঁকি।
ওটস দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে যার ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং ওজন
নিয়ন্ত্রণে থাকে।রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ওটস ইনসুলিনের
সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখে যা হার্টের জন্য ভালো।ওটস খেলে
রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল কম থাকে যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
ত্বকের যত্নে ওটসের ভূমিকা
ওটসে থাকা সলেবল ফাইবার ও প্রাকৃতিক তেল ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে
বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের জন্য এটি খুবই উপকারী।ওটসের মধ্যে
অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে যা ত্বকের চুলকানি, একজিমা, সোরায়াসিস
এবং র্যাশের মতো সমস্যা উপশমে কাজ করে।
ওটস প্রাকৃতিক স্ক্রাবার হিসেবেও কাজ করে।যা ত্বকের উপরের স্তরের মৃত কোষ
তুলে ফেলে এবং ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে।
ওটস ত্বকের প্রাকৃতিক pH ব্যালেন্স বজায় রাখতে সহায়তা করে যা ত্বককে সুস্থ
ও উজ্জ্বল রাখে।ওটস ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে এবং ছিদ্রগুলো পরিষ্কার
রাখে ফলে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।স্নানের জলে Colloidal oatmeal
মিশিয়ে গোসল করলে রোদে পোড়া ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং জ্বালাপোড়া ত্বকে আরাম
মেলে।
পেট পরিষ্কার রাখতে ওটস
ওটস এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তবে প্রতিদিনের
খাদ্যতালিকায় তা অন্তর্ভুক্ত করাই ভালো।ওটসে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার দুই
ধরনেরই আঁশ রয়েছে।দ্রবণীয় ফাইবার অন্ত্রে জল শোষণ করে জেলি তৈরি করে যা মলকে
নরম করে।
অদ্রবণীয় ফাইবার মলকে আকার ও ভার দেয় সহজে বর্জ্য নিষ্কাশনে সাহায্য করে।ওটস
নিয়মিত খেলে মল নরম থাকে ও সহজে বের হতে সাহায্য ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে
মুক্তি দিয়ে থাকে।ওটস অন্ত্রের স্বাভাবিক গতি বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়া সক্রিয়
করে থাকে এবং পেটে মল জমে থাকে না।
ওটস হালকা ও সহজে হজমযোগ্য হওয়ায় পাকস্থলীতে চাপ সৃষ্টি করে না।সঠিকভাবে
পরিপাক হওয়ায় পেটে গ্যাস ও অম্বলের সমস্যা কমে যায়।ওটস প্রিবায়োটিক হিসেবে
কাজ করে যা অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি
হজমতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ওটস
ওটসে থাকা বিটা-গ্লুকান একটি বিশেষ ধরনের দ্রবণীয় আঁশ যা শ্বেত রক্তকণিকা
সক্রিয় করে।এই কোষগুলো শরীরে ঢোকা জীবাণুদের ধ্বংস করে।ওটসে
অ্যাভেনানথ্রামাইড নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীরের
ফ্রি-র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে কোষগুলোকে রক্ষা করে।
এটি কোষের বার্ধক্য ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।ওটস অন্ত্রের গুড
ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে সাহায্য করে যা আমাদের ইমিউন সিস্টেমের জন্য অত্যন্ত
উপকারী। কারণ সুস্থ অন্ত্র মানেই শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।
ওটসে দেহের রোগ প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যেমন:জিঙ্ক
ভাইরাস প্রতিরোধে সহায়ক,আয়রন রক্তকণিকার কার্যকারিতা বাড়ায়,ভিটামিন বি১,
বি৫, এবংভিটামিন ই কোষ মেরামত ও প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য
করে।ওটস ধীরে হজম হয় বলে দীর্ঘ সময় শক্তি দিতে পারে ফলে শরীর দুর্বল হয় না।
শিশুদের জন্য ওটস কতটা উপকারী
অবশ্যই ওটস এর উপকারিতা ও অপকারিতা আগে জেনে তারপর বাচ্চাদের দিন।ওটসে
কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন B গ্রুপ
রয়েছে যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ওটস সহজে হজম হয়ে এবং ফাইবার শিশুর অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।ওটসের বিটা-গ্লুকান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
উপাদান শিশুর ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত করে তোলে ফলে বাচ্চাদের সাধারণ
ঠান্ডাজ্বর কম হয়।
ওটস সাধারণত গ্লুটেনমুক্ত তাই গম অথবা অন্য শস্যজাত খাবারে যাদের অ্যালার্জি
আছে তাদের জন্য নিরাপদ বিকল্প হিসেবে উপযোগী।ওটস ধীরে হজম হয় বলে শিশুরা
দীর্ঘক্ষণ তৃপ্ত থাকে।
শিশুদের ওটস দেওয়ার আগে সতর্কতা
প্রথমবার আপনার শিশুকে খাওয়ানোর আগে অ্যালার্জি আছে কিনা দেখতে ৩ দিন
পর্যবেক্ষণ করুন।ইনস্ট্যান্ট ওটস না দিয়ে রোল্ড,স্টিল কাট ওটস ব্যবহার
করুন।অবশ্যই চিনি,অতিরিক্ত লবণ যোগ করবেন না এবং ওটস গরম অবস্থায় শিশুকে
দেবেন না ঠান্ডা করে দেবেন।
শিশুদের প্রথম শক্ত খাবারগুলোর মধ্যে ওটস অন্যতম যা সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও সহজ
হজমযোগ্য। শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি, ভালো ঘুম ও মলত্যাগ নিয়মিত রাখার জন্য
প্রতিদিন এক বাটি ওটস হতে পারে এক দুর্দান্ত উপায়।
নিয়মিত ওটস খাওয়ার নিয়ম
নিয়মিত ওটস খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানলে আপনি ওটসের সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ ও
স্বাস্থ্য উপকারিতা সহজেই পেতে পারেন।ওটস এমন একটি খাবার যা সকালের নাশতা,
বিকেলের স্ন্যাকস,রাতের হালকা ডিনার হিসেবেও খাওয়া যায়।
সকালে নাশতায় সবচেয়ে উপকারী।সকালে খেলে এটি আপনার সারাদিনের শক্তির জোগান
দিতে সাহায্য করবে।বিকেলে হালকা খাবার হিসেবেও খেতে পারেন।ওজন কমাতে চাইলে ও
রাতের হজম ঠিক রাখতে পারেন আপনি রাতে হালকা খাবার হিসেবেও খেতে পারেন।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কাঁচা ওটস দিনে ১/২ কাপই যথেষ্ট।শিশুদের জন্য বয়স
অনুযায়ী ২ থেকে ৪ টেবিল চামচ কারণ অতিরিক্ত খেলে গ্যাস, অস্বস্তি হতে
পারে।ওটস ফাইবার সমৃদ্ধ তাই ওটস খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পানি পান করা
জরুরি।পর্যাপ্ত পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
ইনস্ট্যান্ট না খেয়ে আপনি প্রাকৃতিক ওটস বেছে নিন যেমন Rolled Oats,Steel Cut
Oats।কারণ Flavored অথবা ইনস্ট্যান্ট ওটসে অতিরিক্ত চিনি, লবণ ও প্রিজারভেটিভ
থাকতে পারে।ওটসের প্রতি আপনার অ্যালার্জি আছে কিনা খাওয়ার আগে পরীক্ষা করে
নিন।
গ্যাস,অস্বস্তি বোধ করলে পরিমাণ কমিয়ে দিন।প্রতিদিন একই রেসিপি না খেয়ে
বিভিন্ন রকমের রেসিপি চেষ্টা করতে পারেন।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য ওটস উপযোগী কি না
oats ar upokarita o opokarita গর্ভবতী মায়েদের জানা জরুরী।গর্ভবতী মায়েদের
জন্য ওটস উপযোগী ও নিরাপদ একটি খাবার।ওটস গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয়
পুষ্টিগুণ, শক্তি এবং হজমের সুবিধা দিয়ে থাকে যা মায়ের পাশাপাশি গর্ভস্থ
শিশুর সুস্থতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য ওটসের উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য খুবই সাধারণ সমস্যা।ওটসে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার
অন্ত্রকে সক্রিয় রাখে এবং মল নরম করে সহজে বের হতে সাহায্য করে।গর্ভাবস্থায়
রক্তের চাহিদা বাড়ে। ওটস আয়রন সরবরাহ করে যা হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে
এবং অ্যানিমিয়া রোধ করতে সাহায্য করে।
ওটসে প্রাকৃতিক ফলেট ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে
যা নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধ করে পারে।ওটস ধীরে হজম হওয়া কার্বোহাইড্রেট
সরবরাহ করে যা মায়ের শরীরে দীর্ঘস্থায়ী শক্তি দেয় এবং অতিরিক্ত ক্লান্তি
দূর করতে সহায়ক।
এছাড়া ওটসে থাকা প্রোটিন গর্ভস্থ শিশুর কোষ ও অঙ্গ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন
করে থাকে।গর্ভাবস্থায় অনেক নারী হজমে সমস্যায় ভোগে থাকে ওটস সহজ হজমযোগ্য
হওয়ায় ওটস খেলে অম্বল,গ্যাসের সম্ভাবনা কম থাকে।
অতিরিক্ত ওটস খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ওটস খাওয়া যতই পুষ্টিকর হোক না কেনো কোনো খাবারই মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া উচিত
না। বেশি ওটস খেলে কিছু অস্বস্তিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
বিশেষ করে আপনি যদি পানি কম খান অথবা আপনার খাদ্যতালিকায় ভারসাম্য না থাকে।
আরোও পড়ুন:চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরার ব্যবহার
ওটসে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে।আপনি যদি হঠাৎ করে বেশি ফাইবার গ্রহণ করেন
তাহলে অন্ত্রে গ্যাস জমে পেট ফেঁপে আপনার অস্বস্তি হতে পারে।আবার আপনি যথেষ্ট
পরিমান পানি যদি না খান ওটসের আঁশ অন্ত্রের ভেতরে শুকিয়ে গিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য
তৈরি করতে পারে।আবার কারও কারও ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফাইবার ডায়রিয়ার কারণও হতে
পারে।
ওটস ধীরে হজম হয় তাই অতিরিক্ত খেলে দীর্ঘসময় ক্ষুধা পায় না। এতে দিনে
প্রয়োজনীয় অন্যান্য পুষ্টি গ্রহণ ব্যাহত হতে পারে।যদি ওটসের সঙ্গে আপনি মধু,
চিনির সিরাপ, ফল, বাদাম ইত্যাদি অতিরিক্ত মাত্রায়মিশিয়ে খান তবে তা ক্যালোরি
বেড়ে আপনার ওজন বৃদ্ধি কারতে পারে।বেশিরভাগ মানুষ ওটস ভালোভাবে সহ্য করে তবে
কারও ক্ষেত্রে গ্লুটেন কন্টামিনেশন থেকে অ্যালার্জি, পেটের গ্যাঁটগোট কিংবা
চুলকানি দেখা দিতে পারে।
ওটস কাদের জন্য নিষিদ্ধ
ওটস এর উপকারিতা ও অপকারিতা বুঝে নিয়মিত সঠিক মাত্রায় গ্রহণ করলে এটি
আপনারশরীরের জন্য হতে পারে এক উপকারী খাদ্য উপাদান।ওটস সাধারণভাবে বেশিরভাগ
মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য হলেও কিছু বিশেষ ব্যক্তি,পরিস্থিতিতে
ওটস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত অথবা সাবধানে খাওয়া উচিত।
আপনার গ্লুটেন সেনসিটিভিটি থাকলে আপনার ওটস না খাওয়ায় ভালো।যদিও ওটস
প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটেনমুক্ত কিন্তু অনেক সময় প্রক্রিয়াকরার সময় গম,বার্লির
সংস্পর্শে আসার কারণে গ্লুটেনযুক্ত হয়ে পড়ে।এই কারণে যাদের সিলিয়াক ডিজিজ
অথবা ননসিলিয়াক গ্লুটেন সেনসিটিভিটি আছে তাদের সার্টিফায়েড গ্লুটেনফ্রি ওটস
না হলে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
যাদের অন্ত্রের সমস্যা যেমন: আইবিএস আছে অতিরিক্ত গ্যাস ও ফাঁপা হয় তাদের
ক্ষেত্রে বেশি ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া সমস্যা করতে পারে।কিডনি রোগীদের
অনেক সময় কম ফসফরাস ও পটাশিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।ওটস
কিছুটা উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম ও ফসফরাস সরবরাহ করতে পারে তাই কিডনি
রোগীদের নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খাওয়া উচিত।
৬ মাসের নিচের শিশুদের ওটস না দেয়াই ভালো।শিশুদের প্রথমবার খাওয়ানোর আগে
অল্প করে পাতলা করে রান্না করে দিয়ে দেখুন।যদিও ওটস একটি স্বাস্থ্যকর ও
উপকারী খাবার তবুও সবাই এক নিয়মে খেতে পারবে না। শরীর অনুযায়ী খাবার নির্বাচন
করা সবচেয়ে ভালো। যদি আপনার কোনো পুরাতন রোগ, পেটের সমস্যা থাকে তাহলে ওটস
খাওয়ার আগে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ঘরে তৈরি ওটস রেসিপির আইডিয়া
ঘরে বসেই সহজে বানানো যায় এমন স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু ওটস রেসিপির আইডিয়া
চলুন জানি।
দুধ ওটস
উপকরণ
ওটস ১/২ কাপ,দুধ ১ কাপ,পানি ১/২ কাপ,মধু ১ চা চামচ অথবা খেজুর ২টি,কিশমিশ,
বাদাম আপনার ইচ্ছামতো।
প্রস্তুত প্রণালি
ওটস, পানি ও দুধ একসাথে একটি পাত্রে মাঝারি আঁচে ৫-৭ মিনিট নাড়তে থাকুন।ঘন
হয়ে এলে মধু ও কিশমিশ মেশান এবং গরম গরম পরিবেশন করুন।
ওটস ফল স্মুদি
উপকরণ
শুকনো ওটস ১/৪ কাপ ,কলা / আপেল ১টি,দুধ ১ কাপ,মধু ১ চা চামচ,বরফ কয়েক
টুকরা।
প্রস্তুত প্রণালি
সব উপকরণ ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন।এতে কাঁচা ওটসের ফাইবার ও
ফলের গুণ একসাথে পেতে পারবেন।একটি গ্লাসে কয়েক টুকরা বরফ দিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা
উপভোগ করুন।
সবজি ওটস খিচুড়ি
উপকরণ
ওটস ১/২ কাপ,ভাজা মুগ ডাল ১/৪ কাপ,গাজর, মটর,কুচি করে কাটা বরবটি,আদা,রসুন
বাটা ১ চা চামচ করে,হলুদ,লবণ,পরিমাণমতো পানি।
প্রস্তুত প্রণালি
সবজিগুলো ও ডাল সামান্য ভেজে নিন।এরপর আদা,রসুন ও মশলা দিয়ে কিছু সময়
কষান।ওটস ও পানি দিয়ে ৮ থেকে ১০ মিনিট রান্না করুন।নরম হয়ে গেলে গরম গরম
পরিবেশন করুন।
চিনি ছাড়া ওটস কুকিজ
উপকরণ
ওটস ১ কাপ,পাকা কলা ২টি ,ইচ্ছামতো কিশমিশ ,ড্রাই ফ্রুটস,সামান্য লবণ।
প্রস্তুত প্রণালি
সব উপকরণ একসাথে মেখে ডো তৈরি করে নিন।চপাটি করে ট্রেতে রাখুন।ওভেন প্রিহিটেড
করে ১৮০°c এ ১৫ মিনিট বেক করে নিন।ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন।
ওটস ইয়োগার্ট
উপকরণ
ওটস ১/২ কাপ,টকদই ১/২ কাপ, টুকরো করে কাটা মৌসুমি ফল,মধু ১ চা
চামচ,সাজানোর জন্য বাদাম ।
প্রস্তুত প্রণালি
ওটস রাতে ভিজিয়ে রাখুন।সকালে একটি বাটিতে ওটস ও দই ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।উপরে
ফল ও বাদাম ছড়িয়ে দিন।রুম টেম্পারেচারে পরিবেশন করুন।
ইনস্ট্যান্ট ওটসের চাইতে রোল্ড ওটস অথবা স্টিল কাট ওটসে পুষ্টিগুণ বেশি
থাকে।ওটস রেসিপিতে চিনির পরিবর্তে খেজুর, মধু , ফলের মিষ্টতা ব্যবহার করার
চেষ্টা করুন।
লেখকের মতামত:ওটস এর উপকারিতা ও অপকারিতা
ওটস এর উপকারিতা ও অপকারিতা জানা থাকলে আপনি নিজের শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী
খাওয়ার আগে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।ওটস শুধুমাত্র একটি সহজপাচ্য
খাবার না বরং বহু ধরনের পুষ্টিগুণে ভরপুর এক প্রাকৃতিক উপাদান।
তবে ওটসের উপকারিতা যেমন বিস্তৃত তেমনি কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে তাই
সচেতনভাবে ব্যবহার করা উচিত।স্বাস্থ্যই সম্পদ তাই স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন
করতেও জ্ঞান ও সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।ব্যালেন্স বজায় রেখে ওটস খেলে তা আপনার
স্বাস্থ্যকর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে।ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url